1 of 3

039.042

আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
It is Allah that takes the souls (of men) at death; and those that die not (He takes) during their sleep: those on whom He has passed the decree of death, He keeps back (from returning to life), but the rest He sends (to their bodies) for a term appointed verily in this are Signs for those who reflect.

اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
Allahu yatawaffa al-anfusa heena mawtiha waallatee lam tamut fee manamiha fayumsiku allatee qada AAalayha almawta wayursilu al-okhra ila ajalin musamman inna fee thalika laayatin liqawmin yatafakkaroona

YUSUFALI: It is Allah that takes the souls (of men) at death; and those that die not (He takes) during their sleep: those on whom He has passed the decree of death, He keeps back (from returning to life), but the rest He sends (to their bodies) for a term appointed verily in this are Signs for those who reflect.
PICKTHAL: Allah receiveth (men’s) souls at the time of their death, and that (soul) which dieth not (yet) in its sleep. He keepeth that (soul) for which He hath ordained death and dismisseth the rest till an appointed term. Lo! herein verily are portents for people who take thought.
SHAKIR: Allah takes the souls at the time of their death, and those that die not during their sleep; then He withholds those on whom He has passed the decree of death and sends the others back till an appointed term; most surely there are signs in this for a people who reflect.
KHALIFA: GOD puts the souls to death when the end of their life comes, and also at the time of sleep. Thus, He takes some back during their sleep, while others are allowed to continue living until the end of their predetermined interim. This should provide lessons for people who reflect.

রুকু – ৫

৪২। আল্লাহ্‌ই [ মানুষের ] আত্মাকে হরণ করেন মৃত্যুর মাধ্যমে ৪৩০৬; এবং যাদের মৃত্যু আসে নাই,তাদেরটাও হরণ করেন নিদ্রার সময়ে ৪৩০৭। যাদের উপরে মৃত্যুর হুকুম হয়ে যায়, তিনি তাদের [পুণরায় জীবনে ফিরে যাওয়া থেকে ] বিরত রাখেন ৪৩০৮। কিন্তু অপর সকলকে [ তাদের দেহের মাঝে ] ফিরিয়ে দেন , নির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তাশীল ৪৩০৯।

৪৩০৬। ঘুম , স্বপ্ন ও মৃত্যুর রহস্য আজও মানুষের অজ্ঞাত। এ এক আকর্ষণীয় প্রহেলিকা। সম্ভবতঃ এই রহস্যের সমাধান মানুষের জ্ঞান , বিজ্ঞানের বাইরে। ঘুম , স্বপ্ন ও মৃত্যুর সম্বন্ধে বহু ধরণের কুসংস্কার , কাল্পনিক ধারণা এবং মনঃস্তাত্বিক গবেষণা বিদ্যমান। কিন্তু তা কোনটাই সম্পূর্ণ ঘটনাকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম নয়। এই আয়াতে সামান্য কয়েকটি ছত্রে ঘুম ও মৃত্যুর ধর্মীয় মতবাদকে তুলে ধরা হয়েছে। দৈহিক সকল ক্রিয়া কর্মের সমাপ্তির মাধ্যমে মৃত্যু ঘটে অর্থাৎ দৈহিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমাদের আত্মার মৃত্যু ঘটে না ; তা অমর। তার অবস্থান তখন হয় পরলোকে বা আধ্যাত্মিক জগতে। আল্লাহ্‌ আমাদের আত্মাকে গ্রহণ করেন, যা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না।

৪৩০৭। দেখুন আয়াত [ ৬ : ৬০ ]। ঘুম কি ? এ প্রশ্ন বহু যুগ থেকে মানুষ করে আসছে। মানুষ , জীব-জন্তু , কীট পতঙ্গ সকলেই ঘুমায়। মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীর ঘুমকে এ ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ঘুমকে বলা যায় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যবিরতি বিশেষ। কারণ ঘুমের সময়ে মানুষ বা প্রাণী কোনও কিছুই উপলব্ধি করতে পারে না , এই দৃশ্যমান পৃথিবী তাদের সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ ও প্রাণীকুলের দৈহিক অন্যান্য ক্রিয়াকর্ম যেমন : রক্ত সঞ্চালন , পরিপাক ক্রিয়া, শারীরিক বর্দ্ধন , নিশ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদি জৈবিক ক্রিয়াকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই সম্পন্ন হতে থাকে , যদিও তা ঘটে অত্যন্ত ধীর গতিতে। ঘুমের সময়ে শুধুমাত্র স্নায়ুতন্ত্রের বিশ্রাম ঘটে। এই একটি ব্যাপারই মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সার্বজনীন যা উভয় শ্রেণীর মধ্যেই ঘটে থাকে। সম্ভবতঃ এ সত্য বৃক্ষরাজির জন্যও প্রযোজ্য, কারণ, ধারণা করা হয় বৃক্ষরাজিরও স্নায়ুতন্ত্র বিদ্যমান। মানুষের বেলায় স্নায়ুতন্ত্রের বিশ্রামের সাথে সাথে মানসিক দক্ষতারও বিশ্রাম ঘটে। যে কোনও প্রকার মানসিক ক্রিয়াকর্ম বন্ধ হয়ে যায় সত্য কিন্তু এ সময়েই মানুষ সাধারণতঃ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন সাধারণতঃ দুধরণের হয়। এক ধরণের স্বপ্নে প্রতিদিনের জীবনের বিভিন্ন কার্যের প্রতিফলন ঘটে। অবচেতন মনের প্রতিফলন এসব স্বপ্নে ঘটে থাকে। জাগ্রত অবস্থায় সাধারণ বিবেক বুদ্ধিতে যে সব ঘটনা অবাস্তব মনে হয়। চেতনায় যা অবাস্তব ,অবচেতন মন তাকেই ধারণ করে স্বপ্নে। সাধারণ মানুষ এ রকম স্বপ্নই দেখে থাকে সাধারণতঃ। তবে কখনও কখনও কদাচিৎ মানুষ অন্য আর এক ধরণের স্বপ্ন দেখে থাকে – যার কোনও ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারে না। এ সব স্বপ্নে হয় ভবিষ্যতকে দেখা যায় নতুবা যা মানুষের অগোচরে তার দেখা মেলে। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা জানেন বৈজ্ঞানিক কেকুল বহু সাধনা ও গবেষণা করেছিলেন জৈব রসায়নের মূল পদার্থ বেন্‌জিনের রাসায়নিক সুত্র আবিষ্কারের জন্য। দিন রাত্রের পরিশ্রমও যখন সফল হলো না ,তখন একদিন তিনি স্বপ্নে বেনজিনের সুত্রটি দেখতে পান এবং এই আবিষ্কারের ফলে তিনি রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পান। এর ব্যাখ্যা কি ? মানুষের প্রাণ বা আত্মা বা ব্যক্তিত্ব যাই বলা হোক না কেন – তা আমাদের এই নশ্বর দেহের উর্দ্ধে অবস্থান করে। নশ্বর দেহ সে তো পশুতুল্য। পশুর যা কাম্য আমাদের দেহেরও সেই একই কাম্য। মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব তা তার দেহের জন্য নয়। তা হচ্ছে তার এই নশ্বর দেহের মাঝে পরমাত্মার অংশ আত্মার অবস্থানের জন্য। ঘুমের মাঝে আত্মা দেহকে ত্যাগ করে অন্য জগতে চলে যায় – এই আয়াতে সেই কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তাদের সকলের প্রাণ বা আত্মাকে হরণ করে থাকেন। সে হিসেবে ঘুমন্ত ব্যক্তি ও মৃত ব্যক্তির অবস্থান একই – কারণ উভয়ের আত্মাই আল্লাহ্‌র সন্নিকটে যায়। কবিতার ভাষাতে ঘুমকে বলা হয়েছে “Twin brother of Death.” অতিপ্রাকৃত যে সব স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা করা তখনই সম্ভব যদি ঘুমের এই ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করা হয়।

৪৩০৮। ঘুমকে মৃত্যুর যমজ ভাই রূপে সম্বোধন করা হয়েছে। ঘুমের মাঝে আমাদের আত্মাকে অস্থায়ীভাবে নশ্বর দেহের রক্তমাংসের বন্ধন মুক্ত করা হয়। আল্লাহ্‌ তাদের আত্মাকে হরণ করেন। যারা ঘুমের মাঝে পরম শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন, তাদের আত্মা আর তাদের দেহের মাঝে ফিরে আসে না। পরিণতিতে তারা মৃত্যুবরণ করে। তাদের নশ্বর দেহ ধ্বংস হয়ে যায়। যাদের পৃথিবীর জন্য আরও সময় বাকী থাকে, তাদের আত্মাকে পুণরায় দেহের মাঝে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই তারা তাদের পৃথিবীর মেয়াদকাল পূর্ণ করে থাকে।

৪৩০৯। ঘুম ,মৃত্যু ইত্যাদি সম্বন্ধে যদি মানুষ গভীর ভাবে চিন্তা করে, তবে তার সম্মুখে আধ্যাত্মিক বা পারলৌকিক জীবনের অনেক সত্যের রূপ উদ্ভাসিত হবে। যেমনঃ

১) পৃথিবীর জীবনে জীবন ও মৃত্যু যা আমরা সর্বদা প্রত্যক্ষ করে থাকি তাই-ই জীবনের শেষ কথা নয়।

২) পৃথিবীর সংজ্ঞা অনুযায়ী দৈহিক ভাবে জীবিত ব্যক্তিও আধ্যাত্মিক ভাবে মৃত হতে পারে। আবার দৈহিক মৃত্যু আধ্যাত্মিক জগতের নিদ্রাত্থান হতে পারে।

৩) নিদ্রা শুধুমাত্র শারীরিক বিশ্রাম নয়। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে ঘুমকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যায়। ঘুম যেরূপ জীবনের শেষ নয় , মৃত্যুও সেরূপ জীবনের শেষ নয়।

৪) কেয়ামত দিবসের পুণরুত্থান ,প্রতিটি প্রত্যুষে নিদ্রা থেকে জাগরণের ন্যায় ঘটনা যাকে কবির ভাষাতে বলা যায় ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর যমজ ভাই।

স্বপ্ন, ঘুম ইত্যাদি মানুষকে আত্মার অমরত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আত্মার অমরত্বের বিশ্বাসই হচ্ছে ধর্মের মূল ভিত্তি। সুতারাং ঘুম, মৃত্যু ,স্বপ্ন ইত্যাদি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ্‌ নিদর্শন – যা চিন্তার মাধ্যমে আত্মার মাঝে অনুধাবন করতে হয়।