আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ।
Truly, We did offer AlAmânah (the trust or moral responsibility or honesty and all the duties which Allâh has ordained) to the heavens and the earth, and the mountains, but they declined to bear it and were afraid of it (i.e. afraid of Allâh’s Torment). But man bore it. Verily, he was unjust (to himself) and ignorant (of its results).
إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
Inna AAaradna al-amanata AAala alssamawati waal-ardi waaljibali faabayna an yahmilnaha waashfaqna minha wahamalaha al-insanu innahu kana thalooman jahoolan
YUSUFALI: We did indeed offer the Trust to the Heavens and the Earth and the Mountains; but they refused to undertake it, being afraid thereof: but man undertook it;- He was indeed unjust and foolish;-
PICKTHAL: Lo! We offered the trust unto the heavens and the earth and the hills, but they shrank from bearing it and were afraid of it. And man assumed it. Lo! he hath proved a tyrant and a fool.
SHAKIR: Surely We offered the trust to the heavens and the earth and the mountains, but they refused to be unfaithful to it and feared from it, and man has turned unfaithful to it; surely he is unjust, ignorant;
KHALIFA: We have offered the responsibility (freedom of choice) to the heavens and the earth, and the mountains, but they refused to bear it, and were afraid of it. But the human being accepted it; he was transgressing, ignorant.
৭২। আমি অবশ্যই এই আমানতকে ৩৭৭৭, আসমান, জমিন ও পর্বতমালাকে দিতে চেয়েছিলাম ৩৭৭৮। কিন্তু তারা শংকিত হয়ে ইহার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলো ৩৭৭৯,৩৭৮০। কিন্তু মানুষ দায়িত্ব গ্রহণ করলো ৩৭৮১। অবশ্যই সে অত্যাচারী ও নির্বোধ ৩৭৮২।
৩৭৭৭। ‘আমানত ‘ যা ইংরেজীতে বলা হয় “Trust” শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোনও ব্যক্তিকে কিছু দেয়া যার বিলি বন্দোবস্ত বা বিন্যাস বা ব্যবস্থা করার অধিকার তার থাকবে। আমানতকারী আমানতের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, এবং মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী বা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করবে। আমানত প্রদত্ত বিষয় বস্তু এমন হবে যে, তা যেনো নষ্ট না হয়ে বরং উত্তোরোত্তর উন্নতি লাভ করে। এখানেই আমানতকারীর সাফল্য নিহিত। যদি আমানতকারীর এ সব কোনও ক্ষমতা না থাকে, তবে প্রকৃতপক্ষে তা আমানত নয়। প্রকৃত পক্ষে যিনি আমানতকারী নিযুক্ত করেন তিনি তা করেন নিজ শর্ত সাপেক্ষে যা আমানতকারী [Trustee] মেনে চলবে।
৩৭৭৮। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৫৯ : ২১ ] ; যেখানে উপমা হিসেবে কোরাণকে পর্বতের উপরে অবতীর্ণ করার উল্লেখ আছে। এই উপমার সাহায্যে মানুষের মানসিক চেতনাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।
৩৭৭৯। আসমান , যমীন ও পর্বতমালা অর্থাৎ মানুষ ব্যতীত বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকল সৃষ্ট পদার্থ ; আল্লাহ্র আমানত বা দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করলো। এই অস্বীকার করার অর্থ এই যে তারা “নিজস্ব কোন স্বাধীন ইচ্ছাকে” ধারণ করতে অস্বীকার করলো। তাদের মাঝে ভালোকে গ্রহণ করার ক্ষমতা ও মন্দকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তারা ধারণ করতে অস্বীকার করলো এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যতিরেকেই তারা তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকলো। মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোন সৃষ্ট পদার্থের বা প্রাণীজগতের ; ভালোকে গ্রহণ ও মন্দকে প্রতিহত করার ক্ষমতা বা ভালোকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ত্যাগ করে মন্দকে গ্রহণ করার ক্ষমতা নাই। এই ক্ষমতার বলেই মানুষ পৃথিবীতে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ ব্যতীত বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকল কিছুই আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সমর্পিত। অর্থাৎ প্রাণী ও জড় ,যার মাঝে আল্লাহ্ যে ধর্ম দান করেছেন সে তাতেই তৃপ্ত এবং তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নাই। যেমন : পানির ধর্ম পানির, আলোর ধর্ম আলোর। অনুরূপ ভাবে প্রাণীজগতও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর , যা আল্লাহ্র দেয়া প্রাকৃতিক ধর্ম , যার বাইরে তারা যেতে অক্ষম। তাদের অসম্পূর্ণ জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার থেকে আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা পরিচালিত হওয়াকে বেছে নেয়। মানুষ অজ্ঞ, তাই সে এই গুরু দায়িত্ব স্ব-স্কন্ধে তুলে নেয়ার স্পর্ধা ও দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। যার ফলে মানুষ সঠিক পথ থেকে বারে বারে বিচ্যুত হয়। পাপীরা আল্লাহ্র এই আমানতকে খেয়ানত করে এবং তার ফলে তারা আল্লাহ্র শাস্তির যোগ্য হয়। অবশ্য যারা পূণ্যাত্মা তারা পৃথিবীর কালিমা মুক্ত হয়ে জীবনকে পূণ্যময় ভূবনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এরাই হচ্ছেন “Muqarrabin” বা আল্লাহ্র নিকটবর্তী। দেখুন [ ৫৬ : ১১, ৮৮ ] আয়াত। এই-ই হচ্ছে সর্বোচ্চ চাওয়া ও পাওয়া।
এই আয়াত থেকে এ কথাই সুস্পষ্ট যে, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী মানুষ সৃষ্টির বহু পূর্বেই সৃষ্টি হয়েছিলো – যা বর্তমান বিজ্ঞানের তত্বকে সমর্থন করে। পৃথিবীতে মানুষের আগমন আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির অনেক পরে।
৩৭৮০। “Hamala”: দায়িত্ব বা ভার গ্রহণ করা, বহন করা , পৌছাইয়া দেয়া [ আমানত বা দায়িত্ব ] ইত্যাদি। অধিকাংশ তফসীরকারগণ এই অর্থ গুলিই গ্রহণ করে থাকেন। তবে অনেকে মনে করেন এই শব্দটি দ্বারা [ সঙ্গে করে ] চলে যাওয়া; পলায়ন করা ; আত্মসাৎ করা ইত্যাদি বোঝায়। অর্থাৎ আল্লাহ্র আমানতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। সেক্ষেত্রে [ ৭২- ৭৩ ] আয়াত পর্যন্ত অর্থ হবে, আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্ট সকল বস্তু ও প্রাণীকে তাঁর দায়িত্ব অর্পণ করতে চাইলেন। মানুষ ব্যতীত সকল সৃষ্ট বস্তু ও প্রাণী সে দায়িত্ব নিতে ভয় পেলো , এই জন্য যে হয়তো বা তারা তা সঠিক ভাবে পালন করতে পারবে না। কিন্তু মানুষ নির্ভিকভাবে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো কারণ মানুষ অজ্ঞ। পরিণতিতে মানুষ সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অক্ষম হয় এবং আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলশ্রুতিতে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর সৃষ্টি হয়; কেউ হয় মোনাফেক,কেউ অবিশ্বাসী। এদেরকে আল্লাহ্ শাস্তি দান করবেন। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বস্ত এবং বিশ্বাসী , তারা আল্লাহ্র কৃপা লাভে সমর্থ হয়। উভয় ক্ষেত্রে মানুষের শেষ পরিণতি একই।
৩৭৮১। দেখুন [ ২ : ৩০ – ৩৪] এবং এর টিকাসমূহ। আল্লাহ্ মানুষের জন্য অত্যন্ত উচ্চ সম্মানীয় স্থান নির্ধারিত করেন। মানুষ যখন পূত পবিত্র থাকে, সে তার আত্মাকে দুর্নিতি দ্বারা কলুষ করে না, তখন তার অবস্থান ফেরেশতাদেরও উপরে। সে অবস্থায় ফেরেশতারা তাঁকে সেজদা করে। কিন্তু মানুষ তাঁর মন্দ কাজের দরুণ নিজেকে কলুষতায় আচ্ছন্ন করে ফেলে যখন তার অবস্থান পশুর থেকেও অধম হয়ে যায়। তাহলে একই মানুষ কখনও ফেরেশতাদের থেকে পবিত্র ও মহৎ আবার কখনও পশুরও থেকে অধম হয় কি ভাবে যে গুণটির জন্য মানুষ ফেরেশতাদের থেকেও সম্মানীয় তা হচ্ছে আল্লাহ্ তাঁর রুহুর অংশ মানুষের মাঝে ফুঁ দিয়ে প্রবেশ করিয়েছেন [ দেখুন আয়াত [৩২ : ৯] ও [১৫ : ২৯] [৩৮:৭২] এবং টিকা ১৯৬৮ ; অন্যান্য অংশে বিদ্যমান ]। রুহুর অনুপ্রবেশের অর্থ হচ্ছে মানুষের মাঝে ঐশ্বরিক গুণের জন্মলাভ এবং তাঁর সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি – যার সাহায্যে সে ভালো বা মন্দকে গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। ফলে মানুষের মাঝেই আল্লাহ্র গুণাবলীর ক্ষুদ্র প্রকাশ ঘটে – আবার সেই আত্মাকে কলুষ করার দরুণ পশুশক্তির প্রকাশ ঘটে থাকে।
৩৭৮২। “Zalum” ইংরেজীতে অনুবাদ হয়েছে “unjust” বা অন্যায় এবং “Jahul ” এর অর্থ অনুবাদ করা হয়েছে অজ্ঞ। এই শব্দগুলির আরবীতে ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও গভীর ও তীব্র যার দ্বারা মানুষের চরম অজ্ঞতা এবং অন্যায় প্রবণতা বোঝানো হয়েছে। মানুষ তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা অনুধাবনে অক্ষম। একমাত্র আল্লাহ্র করুণাই তার এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। ভালো ও মন্দের মাপকাঠি হচ্ছে তুলনামূলক। মানুষের দৃষ্টিতে যা সর্বোচ্চ ভালোর প্রতীক হয়তো বা তা খুবই সাধারণ।
এই সীমাবদ্ধ জ্ঞানের মানুষ কিভাবে পৃথিবীতে আল্লাহ্র প্রতিনিধি [ ২ : ৩০ ] হওয়ার মত এত বড় দায়িত্ব নিজ স্কন্ধে তুলে নেয় ? ; এখানেই আদম সন্তান আল্লাহ্র সাথে মানবিক দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য, পৃথিবীকে সুন্দর করার মহৎ প্রচেষ্টার লিখিত ও অলিখিত অঙ্গীকারে আবদ্ধ। দেখুন [ ৭ : ১৭২- ১৭৩] ও টিকা ১১৪৬ – ৪৮ ; এবং [ ৫ : ১ ] ও টিকা ৬৮২। চুক্তি বা অঙ্গীকার [ Mithaq ] প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য যাই-ই হোক না কেন তা হচ্ছে আমানত। এই চুক্তি বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করার অর্থ হচ্ছে আমানত খেয়ানত করা ,যার অবশ্যাম্ভবী পরিণাম হচ্ছে শাস্তি।