তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।
And it is He Who has let free the two seas (kinds of water), one palatable and sweet, and the other salt and bitter, and He has set a barrier and a complete partition between them.
وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَّحْجُورًا
Wahuwa allathee maraja albahrayni hatha AAathbun furatun wahatha milhun ojajun wajaAAala baynahuma barzakhan wahijran mahjooran
YUSUFALI: It is He Who has let free the two bodies of flowing water: One palatable and sweet, and the other salt and bitter; yet has He made a barrier between them, a partition that is forbidden to be passed.
PICKTHAL: And He it is Who hath given independence to the two seas (though they meet); one palatable, sweet, and the other saltish, bitter; and hath set a bar and a forbidding ban between them.
SHAKIR: And He it is Who has made two seas to flow freely, the one sweet that subdues thirst by its sweetness, and the other salt that burns by its saltness; and between the two He has made a barrier and inviolable obstruction.
KHALIFA: He is the One who merges the two seas; one is fresh and palatable, while the other is salty and undrinkable. And He separated them with a formidable, inviolable barrier (evaporation).
৫৩। তিনিই প্রবাহমান দুই জলরাশিকে মুক্ত করে রেখেছেন ৩১১১। একটি সুপেয় মিষ্টি এবং অন্যটা লবণাক্ত তিক্ত। তথাপি উভয়ের মধ্য রেখেছেন অন্তরায় , এক অনতিক্রম ব্যবধান ৩১১২।
৩১১১। ‘Maraja’ আক্ষরিক অর্থ চারণভূমিতে বাঁধা পশুকে মুক্ত করা বা বন্ধনকে আলগা করা। Bahrain অর্থ দুটি সমুদ্র বা দুটি প্রবাহমান পানির ধারা। ‘Bahr’ শব্দটি লোনা এবং মিঠা পানি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভূপৃষ্ঠের সকল পানিকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় : ১) বিশাল সমুদ্রের পানি যা লবণাক্ত এবং ২) মিঠা পানি যার উৎস বৃষ্টির পানি যথা : নদী, হ্রদ, খাল-বিল, কূপ , ভূগর্ভস্থ পানি, ঝরণা ইত্যাদি। এই আয়াতে বিজ্ঞানের দুটি সুত্রকে উত্থাপন করা হয়েছে। মিঠা পানি ও লোনা পানি এই দ্বিবিধ পানি ভূপৃষ্ঠের চার ভাগের তিন ভাগ অধিকার করে আছে – দুটোই দুই সমুদ্রের মত বিশাল। এই দুই পানির ধারা মিলিতভাবে প্রবাহিত হলেও কখনও লোনা পানি ও মিঠা পানি মিশে যায় না। “প্রবাহমান দুই জলরাশিকে মুক্ত করে রেখেছেন” – এবং ” উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায় ” – এই বাক্যদুটি বিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ তত্বকে ব্যাখ্যা করছে, যা চৌদ্দশ বছর পূর্বে মানুষের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব ছিলো না। প্রথমতঃ ভূপৃষ্ঠ ” পানিচক্র ” দ্বারা মিঠা পানির অবিরত ধারাটি সর্বদা বজায় রাখতে পারে। আমরা জানি সুমিষ্ট পানির সকল উৎস হচ্ছে বৃষ্টির পানি। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর -হ্রদ, কূপ, ঝরণা , তুষার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর , সকল কিছুর উৎস হচ্ছে বৃষ্টির পানি। আবার মেঘের উৎস হচ্ছে সমুদ্রের লোনা পানি। সূর্যের তাপে সমুদ্রের পানি মেঘরূপে সুমিষ্ট পানিতে পরিণত হয় এবং বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে। আবার বৃষ্টির এই পানি ভূপৃষ্ঠের সকল আবর্জনা ধৌত করে নদীতে নিক্ষিপ্ত করে এবং নদী দ্বারা বাহিত হয়ে মিঠা পানির এই স্রোত সমুদ্রে পতিত হয় এবং মিশে যায়। বিজ্ঞানের ভাষাতে একে বলা হয় পানিচক্র যার রেখচিত্র নিম্নরূপ :
সমুদ্রের লোনা পানি-> মেঘ-> বৃষ্টি-> ভূপৃষ্টের নদী-নালা দ্বারা প্রবাহিত-> সমুদ্রের লোনা পানি।
মেঘ যদিও সমুদ্রের লোনা পানি থেকে সৃষ্টি , কিন্তু তা হচ্ছে মিষ্টি পানির উৎস এবং কোনও অবস্থাতেই মেঘের পানিতে সমুদ্রের লোনা পানি মিশে যাবে না। সেখানে থাকবে অনতিক্রম্য ব্যবধান। আবার ভূপৃষ্ঠের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখতে পাই মিঠা পানির বিশাল আঁধার রয়েছে ভূগর্ভে। যদিও স্থল ভাগ সমুদ্রের লোনা পানি দ্বারা বেষ্টিত তবুও এই ভূগর্ভস্থ পানি কখনও সমুদ্রের লোনা পানি দ্বারা মিশে যায় না। এমন কি সমুদ্রের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ যেমন আমাদের মহেশখালী ইত্যাদি , যেগুলি সমুদ্রের লোনা পানি দ্বারা বেষ্টিত, তা সত্বেও এসব দ্বীপের অভ্যন্তরে স্রষ্টা প্রাণীর বসবাসের জন্য ও তরুলতার বৃদ্ধির জন্য ভূগর্ভস্থ মিষ্টি পানির ধারাটি অক্ষুন্ন রাখেন। তা কি করে সম্ভব হয় ? কেন সমুদ্র উপকূলের দেশ সমূহের এবং দ্বীপ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সমুদ্রের লোনা পানি মিশে তিক্ত হয় না ? কি সে অনতিক্রম্য ব্যবধান যা স্রষ্টা এই আয়াতে উল্লেখ করেছেন ? বিজ্ঞানের এই তত্বটি হচ্ছে Osmosis প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় গাছেরা শিকড় দ্বারা মাটি থেকে সুমিষ্ট পানি নিজ দেহভ্যন্তরে টেনে নেয় এবং শিকড় থেকে গাছের শীর্ষে পর্যন্ত পানির সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখে। সমুদ্র উপকূলের মাটি ও দ্বীপের মাটি এই প্রক্রিয়াতে Semi permeable বা অর্ধভেদ্য পর্দ্দারূপে কাজ করে যা মিঠা পানিকে সমুদ্রে প্রবেশে বাঁধা দেবে না কিন্তু সমুদ্রের লোনা পানিকে মিঠা পানিতে ঢুকতে “অনতিক্রম্য বাঁধার” সৃষ্টি করবে। এই প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানের ভাষাতে বলে Osmosis প্রক্রিয়া। এ ভাবেই স্রষ্টা জীবনের প্রয়োজনে লোনা ও মিঠে পানিকে মিশ্রিত হওয়া থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ্ যদি Osmosis প্রক্রিয়ার সৃষ্টি না করতেন তবে বাংলাদেশের মত বদ্বীপ এলাকা ও সাগর বক্ষে দ্বীপ এলাকা জীবনশূন্য হয়ে যেতো। কারণ এ ঘটনার এই অটুট ব্যবস্থাপনা আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার অভাবনীয় দৃষ্টান্ত এবং তাঁর অপার রহস্যের অকাট্য প্রমাণ।
৩১১২। “অনতিক্রম্য ব্যবধানের ” ব্যাপারটি উপরের আয়াতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্রষ্টা এ ভাবেই লোনা পানি ও মিঠা পানিকে সংযুক্ত রাখলেও আলাদা রেখে দেন। এ তো স্রষ্টারই জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর।