আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
And (remember) when your Lord said to the angels: ”Verily, I am going to place (mankind) generations after generations on earth.” They said: ”Will You place therein those who will make mischief therein and shed blood, – while we glorify You with praises and thanks (Exalted be You above all that they associate with You as partners) and sanctify You.” He (Allâh) said: ”I know that which you do not know.”
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُواْ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاء وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
Wa-ith qala rabbuka lilmala-ikati innee jaAAilun fee al-ardi khaleefatan qaloo atajAAalu feeha man yufsidu feeha wayasfiku alddimaa wanahnu nusabbihu bihamdika wanuqaddisu laka qala innee aAAlamu ma la taAAlamoona
YUSUFALI: Behold, thy Lord said to the angels: “I will create a vicegerent on earth.” They said: “Wilt Thou place therein one who will make mischief therein and shed blood?- whilst we do celebrate Thy praises and glorify Thy holy (name)?” He said: “I know what ye know not.”
PICKTHAL: And when thy Lord said unto the angels: Lo! I am about to place a viceroy in the earth, they said: Wilt thou place therein one who will do harm therein and will shed blood, while we, we hymn Thy praise and sanctify Thee? He said: Surely I know that which ye know not.
SHAKIR: And when your Lord said to the angels, I am going to place in the earth a khalif, they said: What! wilt Thou place in it such as shall make mischief in it and shed blood, and we celebrate Thy praise and extol Thy holiness? He said: Surely I know what you do not know.
KHALIFA: Recall that your Lord said to the angels, “I am placing a representative (a temporary god) on Earth.” They said, “Will You place therein one who will spread evil therein and shed blood, while we sing Your praises, glorify You, and uphold Your absolute authority?” He said, “I know what you do not know.”
রুকু – ৪
৪৭। ফেরেশতারা যদিও পূত, পবিত্র এবং ক্ষমতাধর তবুও তারা সম্পূর্ণ নয়। তাদের ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সম্পূর্ণ (Perfect) তবুও তারা অসম্পূর্ণ। কারণ তাদের কার্যপ্রণালীর মধ্যে কোথাও আবেগ ও অনুভূতির স্থান নাই। এখানেই ফেরেশতাদের সাথে মানুষের পার্থক্য। এখানেই ফেরেশতাদের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। যে রকম কম্পিউটার যে কোনও কাজে মানুষের থেকে অত্যন্ত দ্রুত, অত্যন্ত নির্ভুল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী,-তবুও মানুষ কম্পিউটার থেকে শ্রেষ্ঠ। ফেরেশতারা আবেগ ও অনুভূতিশূন্য ফলে তারা কম্পিউটারের মত যান্ত্রিক। আবেগ ও অনুভূতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ হচ্ছে-ভালবাসার ক্ষমতা। সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষেরই ভালবাসার ক্ষমতা আছে। এই আবেগ ও অনুভূতি (Passion and emotion) ঠিকভাবে পরিচালিত করে মানুষ হয় দেবত্বে উন্নীত, আবার অন্ধ আবেগ ও অনুভূতির ফলে মানুষ ন্যায়-অন্যায় বোধ হারিয়ে ফেলে। নিজেকে পশুর স্তরে নামিয়ে ফেলে। কে কিভাবে তার আবেগ ও অনুভূতিকে পরিচালিত করে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে তার “স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি” প্রয়োগের উপরে। একমাত্র মানুষকেই আল্লাহ্ “সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি” দান করেছেন। ফলে পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্ট জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষই তার নিজস্ব ভাগ্য গড়ার অধিকার লাভ করেছে। যখন এই ইচ্ছা শক্তি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তখন মানুষ নিজের সৌভাগ্য নিজে গড়ে তোলে। প্রকৃতিকে বশ করে, নিজেকে পৃথিবীর ‘খলিফা’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এমন ক্ষমতা আল্লাহ্ একমাত্র মানুষকেই দিয়েছেন।
অপরপক্ষে ফেরেশতাদের আমরা কল্পনা করতে পারি, যাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি নাই। তাদের আমরা শক্তির (Force) প্রতীক হিসেবে ধরতে পারি। আল্লাহ্র হুকুম যারা নির্ভুলভাবে মেনে চলে। কিন্তু নিজস্ব বিচার বিবেচনা নাই। ফলে আল্লাহ্র প্রতিভূ হওয়ার ক্ষমতা নাই। আল্লাহ্র প্রতিভূ হওয়া যায় তখনই যখন নিজস্ব আবেগ, অনুভূতির সাহায্যে সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টিতে সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে নিয়োজিত করার ক্ষমতা থাকে, ভাল কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে, মন্দ কাজে বাঁধা দান করতে পারে, তখনই মানুষের মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় এবং মানুষ দেবত্বে উন্নীত হয়। ‘খলিফার’ গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হয়। এই পার্থক্য শেক্সপীয়ার [৯৪ সনেটে] কয়েকটি পংক্তিতে প্রকাশ করেছেন, ‘They are the lords and owners of their faces. Others but stewards of their excellence.’ যেহেতু ফেরেশতারা আবেগ-অনুভূতিহীন, তাই আবেগ অনুভূতির অপব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে যে দুঃখ দুর্দশার উদ্ভব হবে সেটাই তাদের প্রধান শঙ্কার বিষয় ছিল। আসলে মানুষের মাঝে স্রষ্টা তাঁর বৈশিষ্ট্যের রূপ প্রকাশ করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করে, মানুষ তার সৃষ্টিকে রক্ষা করে, সর্বোপরি মানুষ ভালবাসে। যেরূপ স্রষ্টা আমাদের এবং বিশ্বচরাচরের তার সমস্ত সৃষ্টিকেই ভালবাসেন। আবেগ-অনুভূতির সর্বোচ্চ ফসল হচ্ছে ভালবাসা। ভালবাসা চাওয়া ও ভালাবাসা দেওয়া। স্রষ্টার করুণা ও দয়া-তাঁর ভালবাসারই প্রকাশ। ফেরেশতারা স্রষ্টার এই বিশেষ দিকটি অনুধাবন করতে অক্ষম। কারণ তারা আবেগ ও অনুভূতি বিহীন। ফেরেশতারা বিনয় ও ভক্তি সহকারে আল্লাহ্র কাছে মানুষ সৃষ্টিতে আপত্তি জানিয়েছেন। ফেরেশতাদের মতামত প্রকাশ কোন প্রতিবাদ ছলে অহংকার প্রদর্শন বা যোগ্যতার দাবী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তাদের অভিমতের অভিব্যক্তি ছিল একান্ত অনুগতের ন্যায় এবং বিনীতভাবে নিজস্ব খেদমত পেশ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এখানে এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে ফেরেশতারা হিংসার বশবর্তী হয়ে এরকম অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ তা সম্ভব নয়। হিংসা বা রাগ, দ্বেষ সবেরই উৎপত্তিস্থল হচ্ছে আবেগ ও অনুভূতি। ফেরেশতারা সর্বপ্রকার আবেগ ও অনুভূতিশূন্য। সুতরাং ভালবাসার আবেগ ও অনুভূতি অনুভব করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই কারণেই সর্বজ্ঞ আল্লাহ্ তাদের বলেছেন যে তাদের জ্ঞান সীমিত এবং ফেরেশতারা তা স্বীকার করে নেয় [২ : ৩২]।
ফেরেশতাদের এই যে অপূর্ণতা এটা তাদের কোনও ত্রুটি নয়। আল্লাহ্ তাদের সেইভাবেই সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহ্ যখন ফেরেশতাদের নিকট আদমের (আঃ) মানসিক উৎকর্ষতার প্রমাণ দাখিল করলেন তখন ফেরেশতারা তাদের অপূর্ণতা স্বীকার করে নিল।