৯৬তম অধ্যায়
কৌরবগণের সবিষাদ সমর বিশ্রাম
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! এইরূপে মহারথ সূতপুত্র নিহত হইলে কৌরবগণ বিপক্ষগণের শরনিকরে ক্ষতবিক্ষত ও নিতান্ত ভীত হইয়া দশদিক্ অবলোকনপূর্ব্বক গমন করিতে লাগিলেন। অনন্তর আপনার পক্ষীয় যোধগণ দুঃখিত ও উদ্বিগ্নমনে অবহার করিতে বাসনা করিলেন; রাজা দুৰ্য্যোধনও তাহাদিগের অভিপ্রায় অবগত হইয়া শল্যের অনুমতি অনুসারে সেনাগণের অবহারে আদেশ করিলেন। তখন মহাবীর কৃতবর্ম্মা কৌরবপক্ষীয় রথীগণ ও অবশিষ্ট নারায়ণী সেনার সহিত, শকুনি অসংখ্য গান্ধারসৈন্যগণের সহিত, কৃপাচার্য্য মহামেঘসন্নিভ মাতঙ্গ বলের সহিত, মহাবীর সুশর্ম্মা হতাবশিষ্ট সংশপ্তকগণের সহিত দ্রুতবেগে শিবিরে গমন করিতে লাগিলেন। মহাবীর অশ্বত্থামা পাণ্ডবগণের জয়লাভ দর্শনে বারংবার দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগপূর্ব্বক শিবিরাভিমুখে ধাবমান হইলেন। রাজা দুৰ্য্যোধন হতসর্ব্বস্ব ও হতবান্ধব হইয়া শোকাকুলিতচিত্তে গমন করিতে লাগিলেন। রথীশ্রেষ্ঠ শল্য কর্ণের সেই ছিন্নধ্বজ রথ লইয়া দশদিক্ অবলোকন করিয়া শিবিরে প্রস্থান করিলেন। তখন কৌরবপক্ষীয় অন্যান্য মহারথগণ কম্পিতকলেবরে ভীত ও উদ্বিগ্নমনে অনবরত রুধিরক্ষরণপুর্ব্বক দশদিকে ধাবমান হইলেন। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বা কর্ণের প্রশংসা করিতে লাগিলেন। হে মহারাজ! তৎকালে সেই অসংখ্য যোধগণমধ্যে কাহারও আর যুদ্ধ করিবার বাসনা রহিল না। কর্ণ নিহত হওয়াতে কৌরবগণ আপনাদের জীবন, রাজ্য, ধন ও কলত্রের আশা এককালে পরিত্যাগ করিলেন।।
“তখন রাজা দুৰ্য্যোধন শোক-দুঃখে একান্ত সমাকুল হইয়া যত্নসহকারে তাঁহাদিগকে প্রতিনিবৃত্ত করিয়া শিবিরে গমন করিতে অনুমতি করিলেন; তাঁহারাও কুরুরাজের আজ্ঞা শিরোধার্য্য করিয়া ম্লানবদনে স্ব স্ব শিবিরে গমন করিতে লাগিলেন।”