৬৩তম অধ্যায়
সঙ্কুল যুদ্ধে পুনঃ কৌরব-পরাজয়
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! অনন্তর দুৰ্য্যোধন, দুঃশাসন, বিবিংশতি, দ্রোম, অশ্বত্থামা ও মহারথ, কৃপাচাৰ্য্য ইঁহারা ধনঞ্জয়কে বধ করিবার নিমিত্ত পুনরায় সুদৃঢ় শরাসন বিস্ফারিত করিয়া গমন করিলেন; ধনঞ্জয়ও বিকীর্ণপতাকা [পতাকাযুক্ত] রথে আরোহণপূর্ব্বক তাঁহাদিগের প্রত্যুদগমন করিলেন। তখন মহারথ কর্ণও দ্রোণ অনতিদূর হইতে বর্ষাকালীন জলধরের ন্যায়। সুতীক্ষ্না শরসমূহ বর্ষণ করিয়া অর্জ্জুনকে এরূপ আচ্ছাদিত করিলেন যে, তাঁহার কলেবরে দুই অঙ্গুলিমাত্র স্থানও অনাচ্ছন্ন লক্ষিত হইল না।
তখন মহাবীর অর্জ্জুন হাস্য করিয়া গাণ্ডীবে সূৰ্য্যসঙ্কাশ ঐন্দ্র অস্ত্ৰ সংযোজন করিলেন। সেই অস্ত্ৰ হইতে আদিত্যের ন্যায় অংশুমালা [কিরণজাল] বিনির্গত হইতে লাগিল। তিনি তখন তাহা দ্বারা সমুদয় কৌরবগণকে সমাচ্ছন্ন করিলেন; গাণ্ডীব-শরাসন মেঘমালাবিরাজিত সৌদামিনীর ন্যায়, পর্ব্বতবিকীর্ণ [আগ্নেয়গিরি সমুত্থিত] হুতাশনের ন্যায়, অতি বিস্তীর্ণ ইন্দ্রায়ুধের ন্যায় দীপ্তি পাইতে লাগিল। যেমন বিদ্যুৎ বৃষ্টিসময়ে জলধরপটলে আবির্ভূত হইয়া সমুদয় দিক, সমস্ত ধরামণ্ডল ও নভোমণ্ডল বিদ্যোতিত [প্রভাময়—আলোকিত] করে, সেইরূপ সমাকৃষ্ট গান্তীব-ধনুও দশদিক উদ্ভাসিত করিল। হস্তী ও রথিসকল মুগ্ধ হইলে, ত্যক্তায়ুধ যোদ্ধগণ বিহ্বল হইয়া উঠিল এবং অন্যান্য সৈনিক পুরুষেরা অচেতন হইয়া সমরপরাঙ্মুখ হইল; এইরূপে সৈন্যগণ সমর পরিহার করিয়া স্ব স্ব জীবিত প্ৰত্যাশা [বাঁচিবার আশঙ্কা] পরিত্যাগপূর্ব্বক দিগদিগন্তে পলায়ন করিতে লাগিল।