ধনুকের ঘরে রাম গেলেন যখন।
ধনুক তোলহ রোম বলে সর্ব্বজন।।
যত যত রাজা আছে ভাবিল অন্তরে।
দেখিব কেমনে শিশু ধনুর্ভঙ্গ করে।।
বিস্মিত হইয়া সবে করে নিরীক্ষণ।
ধনুক তোলহ রাম বলে সর্ব্বজন।।
লক্ষ্মণ বলেন শুন জ্যেষ্ঠ মহাশয়।
ঘুচাও ধনুক ধরি সবার বিস্ময়।।
শ্রীরাম বলেন শুন গাধির নন্দন।
আজ্ঞা কর করিব কি ধনুক ধারণ।।
এতেক বলিয়া রাম সহাস্য বদনে।
ধনুক ধরেন করে, দেখে সর্ব্বজনে।।
ধনুক তুলিয়া রাম বলেন লক্ষ্মণে।
ভাঙ্গিব শিবের ধনু, ভয় হয় মনে।।
ধনুকে অর্পিয়া গুণ বলেন মুনিরে।
তাহা করি, যাহা আজ্ঞা করিবে আমারে।।
মুনি বলিলেন, রাম কোথাও কৌতুক।
মনোরথ পূর্ণ করে ভাঙ্গিয়া ধনুক।।
আজ্ঞা পেয়ে শ্রীরাম দিলেন গুণে টান।
মড় মড় শব্দে ধনু হৈল দুইখান।।
সভায় সকল লোক হারাইল জ্ঞান।
ত্রিভুবন সঘনে হইল কম্পমান।।
হইলেন জনক ভূপতি হরষিত।
বাদ্য বাজে মিথিলানগরে অগণিত।।
গলে বস্ত্র দিয়া রাজা অতি সমাদরে।
নিমন্ত্রণ একে একে সবাকারে করে।।
সুমন্ত্র ব্রাহ্মণ রামে লয়ে গেল ঘরে।
সুমন্ত্রের ব্রাহ্মণী কৌশল্যা নাম ধরে।।
কৌশল্যার তুল্য কেহ নহে ভাগ্যবতী।
মা মা বলি যাঁরে স্বয়ং ডাকেন শ্রীপতি।।
সুমন্ত্র মুনির ঘরে রাখিয়া রামেরে।
বিশ্বামিত্র গেলেন যে জনকের পুরে।।
সীতাদেবী বন্দিলেন মুনির চরণ।
আনন্দিত হইল জনক যশোধন।।
জনক বলেন, প্রভু করি নিবেদন।
সীতার বিবাহ জন্য কর শুভক্ষণ।।
এ কথা শুনিয়া মুনি গাধির নন্দন।
অমনি আইল যথা শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
মুনি বলিলেন, রাম এই আমি চাই।
বিবাহ করিয়া ঘরে যাহ দুই ভাই।।
শ্রীরাম কহেন, প্রভু নিবেদি তোমারে।
আমা দোঁহে লয়ে চল অযোধ্যা-নগরে।।
বহুদিন আসিয়াছি তোমার সহিত।
বিলম্ব হইলে পিতা হবেন চিন্তিত।।
চারি ভাই জন্ম লইয়াছি এক দিনে।
সে সবারে ছাড়ি করি বিবাহ কেমনে।।
এ চারি ভ্রাতাকে যেই কন্যা দিবে চারি।
চারি ভাই বিবাহ করিব ঘরে তারি।।
এই বাক্য নিঃসরিল শ্রীরামের তুণ্ডে।
আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়ে কৌশকের মুণ্ডে।।
দুঃখিত হইয়া মুনি গেলেন তখন।
জনকের নিকটে দিলেন দরশন।।
জনক বলেন প্রভু করি নিবেদন।
সীতার বিবাহ দিন কর শুভক্ষণ।।
বিশ্বামিত্র বলেন শুনহ নরপতে।
রামের মনস্থ নহে বিবাহ করিতে।।
কহিলেন, বহুকাল ছাড়িয়াছি ঘর।
বিলম্ব হইলে পিতা হবেন কাতর।।
যে চারি ভায়েরে চারি কন্যা সমর্পিবে।
তাঁর ঘরে রামচন্দ্র বিবাহ করিবে।।
শুনিয়া ভাবেন রাজা করি হেঁট মাথা।
সীতা বিনা কন্যা নাই আর পাব কোথা।।
এতেক ভাবিয়া রাজা বিষণ্ন বদন।
শতানন্দ পুরোহিত কহিছে তখন।।
কেন রাজা হইয়াছে বিচলিত মন।
তব ঘরে চারি কন্যা হইবে ঘটন।।
তোমার কনিষ্ঠ ভাই, কুশধ্বজ নাম।
তাঁর দুই কন্যা আছে রূপগুণ-ধাম।।
তোমার দুহিতা দুই পরমা-সুন্দরী।
চারি ভায়ে সমর্পণ কর কন্যা চারি।।
শ্রীরামের যে বাসনা হবে সেই মত।
তাঁহারে জানাও গিয়া সমাচার যত।।
হরষিত হইয়া মুনি গাধির কোঙর।
বার্ত্তা গিয়া দেন তবে রামের গোচর।।
শুন রাম, নাহি দেখি ইহাতে বাধক।
চারি ভায়ে চারি কন্যা দিবেক জনক।।
রাম বলিলেন, প্রভু করি নিবেদন।
সব ভাই হেথা নাই, করিব কেমন।।
ইহাতে বাধক আরো আছে মুনিবর।
বিবাহ করিতে নারি পিতৃ-অগোচর।।
আমারে বিবাহ দিতে যদি আছে মন।
অযোধ্যাতে মনুষ্য পাঠাও একজন।।
এতেক শুনিয়া গিয়া গাধির নন্দন।
কহিলেন জনকেরে সর্ব্ব বিবরণ।।
শুনিয়া আনন্দে রাজা ভাবে গদ গদ।
বচন মনের অগোচর এ সম্পদ।।
মুনি বলিলেন, শুন জনক রাজন।
আনিবারে রাজাকে পাঠাও একজন।।
রাজা বলিলেন মুনি করি নিবেদন।
তোমা ভিন্ন কে যাইবে অযোধ্যা ভুবন।।
এ কথা শুনিয়া মুনি ভাবিলেন মনে।
ঘটক হইয়া যাই অযোধ্যা-ভুবনে।।
এই যশ আমার ঘুষিবে ত্রিভুবনে।
বিবাহ দিলাম আমি শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
এতেক ভাবিয়া মুনি করিল গমন।
সিদ্ধাশ্রমে প্রথমতঃ দিল দরশন।।
সুধায় সকল মুনি কি শুনি কৌতুক।
রাম নাকি ভাঙ্গিয়াছে হরের ধনুক।।
মুনি বলে করিবারে সীতার কল্যাণ।
শিবধনু আপনি হইল দুইখান।।
বিশ্বামিত্র সিদ্ধাশ্রম পশ্চাৎ করিয়া।
গঙ্গার কূলেতে মুনি উত্তরেন গিয়া।।
গঙ্গা পার হইয়া চলেন মুনিবর।
অহল্যা যেখানে ছিল হইয়া পাথর।।
অহল্যার তপোবন পশ্চাৎ করিয়া।
পবনের জন্মভূমি উত্তরেন গিয়া।।
পবনের জন্মভূমি থুয়ে কত দূর।
তাড়কার বনে যান কাছে সরযূর।।
করিলেন সরযূর নীর সংস্পর্শন।
দূরেতে থাকিয়া দেখে অযোধ্যার জন।।
আসিয়া যে মুনিরাজ রামে লয়ে গেল।
একা মুনি আসিতেছে, রাম না আইল।।
এ কথা কহিল গিয়া দশরথ প্রতি।
বজ্রপাত সম জ্ঞান করেন ভূপতি।।
কান্দিয়া বাহিরে আসি অজের নন্দন।
রামে না দেখিয়া কহে কাতর বচন।।
একা যে আইলা মুনি, রাম মোর কোথা।
হইল প্রত্যক্ষ বুঝি অন্ধকের কথা।।
কোথা রাম কোথা বা লক্ষ্মণ গুণবিধি।
দরিদ্রেরে দিয়া নিধি হরিলেন বিধি।।
যজ্ঞরক্ষা হেতু লয়ে গেলা নিজ বাস।
ছলেতে করিলা মুনি মম সর্ব্বনাশ।।
রাক্ষস বধের হেতু লইয়া কুমার।
কে জানে বধিবা মুনি পরাণ আমার।।
বার্ত্তা পেয়ে আইল রাজার যত রাণী।
ডম্বুর হারায়ে যেন ফুকারে বাঘিনী।।
কৌশল্যা সুমিত্রা রাণী হাহাকার করে।
প্রমাদ পড়িল আজি অযোধ্যানগরে।।
অষ্ট বৎসরের রাম দশ নাহি পূরে।
হেন রামে খাইল কি বনে নিশাচরে।।
আকুল হইল রাজা অজের কুমার।
বিশ্বামিত্র ভাবিলেন একি চমৎকার।।
রাজারে বুঝায় যত পাত্রমিত্রগণ।
হেনকালে আইলেন বশিষ্ঠ ব্রাহ্মণ।।
বশিষ্ঠ বলেন, কহ গাধির নন্দন।
রামের মঙ্গল শুনি জুড়াক জীবন।।
এই কথা শুনিয়া কহেন তপোধন।
ভাল মন্দ না শুনিয়া কান্দ কি কারণ।।
বশিষ্ঠ বলেন, মুনি কহ কি আশ্চর্য্য।
রামে না দেখিয়া কার মন নহে ধৈর্য্য।।
রাম ধ্যান রাম জ্ঞঅন রাম সে জীবন।
রাম বিনা অন্ধকার অযোধ্যা- ভুবন।।
লোটায়ে পড়েন রাজা মুনি-পদতলে।
কোথায় লক্ষ্মণ কোথা রাম সদা বলে।।
বিশ্বামিত্র বলেন, শুনহ যশোধন।
পুত্রের বিক্রম- কথা করহ শ্রবণ।।
তাড়কাকে মারিলেন কৌশল্যা-নন্দন।
অহল্যার করিলেন শাপ বিমোচন।।
কৈবর্ত্তকে কৃতার্থ করিলেন শ্রীরাম।
রাক্ষস মারিয়া পূর্ণ করিলেন কাম।।
জনক করিয়াছিল ধনুর্ভঙ্গ পণ।
তাহাতে হারিয়া গেল যত রাজাগণ।।
শঙ্করের ধনুক করিয়া দুইখান।
লক্ষ্মীরূপা কন্যা রাম পাইলেন দান।।
চারি কন্যা দিবেক জনক চারি ভায়ে।
চল মহারাজ শীঘ্র দুই পুত্র লয়ে।।
এ কথা শুনিয়া রাজা আনন্দ বিহ্বলে।
প্রণতি করেন মুনি-চরণ-কমলে।।
অযোধ্যাতে তখন পড়িয়া গেল সাড়া।
লক্ষ লক্ষ হস্তী সাজে লক্ষ লক্ষ ঘোড়া।।
নানারূপে রথ সাজে অতি সুশোভন।
ডাকিয়া আনিল রাজা ভরত শত্রুঘ্ন।।
ত্বরা করি সবারে করিল নিমন্ত্রণ।
অযোধ্যার লোক সব করিল সাজন।।
অগ্রে রথে চড়িলেন যতেক ব্রাহ্মণ।
চড়িলেন রথে রাজা সহ পুত্রগণ।।
বলেন কৌশল্যা দেবী সুমিত্রা দেবীরে।
না পাই হরিদ্রা দিতে রামের শরীরে।।
সুমিত্রা বলেন, দিদি কেন ভাব আর।
রামের নামেতে করি মঙ্গল আচার।।
লক্ষ লক্ষ পদাতিক চলিলেক সঙ্গে।
চক্রবর্ত্তী চলিলেন সৈন্য চতুরঙ্গে।।
রায়বার পড়ে ভাট, বেদ বিপ্রগণ।
মিথিলার এবে কিছু শুন বিবরণ।।
সীতারূপে লক্ষ্মী স্বয়ং তথায় জন্মিল।
মিথিলানগর ধনে পূর্ণিত হইল।।
ঘৃত দুগ্ধে জনক করিল সরোবর।
স্থানে স্থানে ভাণ্ডার করিল মনোহর।।
চাল রাশি রাশি, সুমিষ্টান্ন কাঁড়ি কাঁড়ি।
স্থানে স্থানে রাখে রাজা লক্ষ লক্ষ হাঁড়ি।।
হেথা সৈন্যগণ লয়ে অজের নন্দন।
সরযূ নদীর তীরে দিয়া দরশন।।
সরযূ নদীতে রাজা কির স্নান দান।
মিষ্টান্ন ভোজন করে, মিষ্ট জলপান।।
ত্বরিতে সরযূ নদী উত্তীর্ণ হইয়া।
তাড়কার বনেতে প্রবেশিলেন গিয়া।।
কৌশিক বলেন শুন অজের নন্দন।
এই বনে তাড়কা হইল নিপাতন।।
শুনিয়া বলেন রাজা অজের নন্দন।
তাড়কা দেখিব প্রভু তাড়কা কেমন।।
তাড়কার নিকটে গেলেন দশরথ।
দেখেন পড়িয়া আছে আগুলিয়া পথ।।
তাড়কা দেখিয়া রাজা ভাবিলেন মনে।
ইহারে বালক রাম মারিল কেমনে।।
তাড়কার বন রাজা পশ্চাৎ করিয়া।
পবনের জন্মভূমি দেখিলেন গিয়া।।
পবনের জন্মভূমি পশ্চাৎ করিয়া।
অহল্যার আশ্রমেতে উত্তরিল গিয়া।।
অহল্যার তপোবন পশ্চাৎ করিয়া।
গঙ্গাতীরে উপনীত হইলেন গিয়া।।
যে কৈবর্ত্ত শ্রীরামেরে পার করেছিল।
সে রাজার নাম শুনি নৌকা সাজাইল।।
নৌকাতে হইল পার যত সৈন্যগণ।
সিদ্ধাশ্রম দর্শন করেন যশোধন।।
ভূপতি বলেন, মুনি নিবেদন করি।
কত দূর আছে আর মিথিলা নগরী।।
বিশ্বামিত্র বলেন, শুনহ নৃপবর।
আছে আর তিন ক্রোশ মিথিলা নগর।।
মুনিপত্নী সবে বলে রাজা পূর্ণকাম।
যাঁর ঔরসে জন্ম লইলেন রাম।।
সিদ্ধাশ্রম দশরথ পশ্চাৎ করিয়া।
মিথিলার সন্নিকটে দেখিলেন গিয়া।।
আহ্লাদিত প্রজা সব আর সৈন্যগণ।
নানাজাতি অস্ত্র খেলে বাজায় বাজন।।
দূত গিয়া বার্ত্তা দিল জনক রাজারে।
অনুব্রজে লও রজা অজের কুমারে।।
রথ হৈতে নামিলেন অযোধ্যার পতি।
করিলেন জনক আদরে বহু স্তুতি।।
জনক বলেন রাজা যদি কর দয়া।
তব চারি পুত্রে দেই চারিটি তনয়া।।
দশরথ বলিলেন শুন হে জনক।
সম্বন্ধ হইল স্থির তবে কি বাধক।।
উভয়ে হইল শিষ্টাচার সম্ভাষণ।
বিদায় হইয়া রাজা করেন গমন।।
যেই ঘরে বসিয়া আছেন রঘুবীর।
সেই ঘরে চলিলেন দশরথ ধীর।।
পিতার উদ্দেশ পেয়ে হইয়া বাহির।
বন্দিলেন পিতৃপদদ্বয় রঘুবীর।।
লক্ষ্মণ বন্দিল গিয়া পিতার চরণ।
রামের চরণ বন্দে ভরত শত্রুঘ্ন।।
লক্ষ্মণ বন্দিল গিয়া ভরতে তখন।
শত্রুঘ্ন আসিয়া বন্দে সোদর লক্ষ্মণ।।
চারি ভ্রাতা পরস্পর করে আলিঙ্গন।
সুখে পুলকিত অঙ্গ অজের নন্দন।।
ঘাটেতে উতরে কেহ, উতরে বা মাঠে।
কেহ পাক করি খায় সরোবর-ঘাটে।।
খাও খাও, লহ লহ, এই শব্দ শুনি।
অন্নে পরিপূর্ণ যেন হইল মেদিনী।।
গেলেন বশিষ্ঠ মুনি জনকের ঘর।
সভা করি বসেছেন জনক নৃপবর।।
বশিষ্ঠে দেখিয়া রাজা করে অভ্যর্থন।
পাদ্য অর্ঘ্য দিল আর বসিতে আসন।।
কহিতে লাগিল রাজা জনক তখন।
সীতার বিবাহ লগ্ন করে শুভক্ষণ।।
বশিষ্ঠ সভার মধ্যে জ্যেতিষ মেলিল।
পুনর্ব্বসু কর্কটেতে কন্যা লগ্ন হৈল।।
তাহাতে বিবাহ-বিধি হইলে ঘটন।
স্ত্রী-পুরুষ বিচ্ছেদ না হয় কদাচন।।
সেই লগ্ন করিল যে যত বন্ধুজন।
স্বর্গে থাকি যুক্তি করে যত দেবগণ।।
স্ত্রী-পুরুষে বিচ্ছেদ না হয় কালান্তরে।
কেমনে মারিবে তবে লঙ্কার ঈশ্বরে।।
করহ মন্ত্রণা এই বলি সারোদ্ধার।
লগ্ন ভ্রষ্ট কর গিয়া শ্রীরাম সীতার।।
নর্ত্তক হইয়া তবে যাও শশধর।
নৃত্য কর গিয়া তুমি জনকের ঘর।।
তব নৃত্য দেখিলে ভুলিবে সর্ব্বজন।
অতীত হইবে তবে কর্কট লগন।।
শুভলগ্ন করিয়া বশিষ্ঠ মুনিবর।
বার্ত্তা লয়ে দিলেন যে ভূপতি গোচর।।
আনন্দিত হইলেন অজের নন্দন।
আয়োজন করিলেন সর্ব্ব আভরণ।।
ভারে ভারে দধি দুগ্ধ ভারে ভারে কলা।
ভারে ভারে ক্ষীর ঘৃত শর্করা উজ্জ্বলা।।
সন্দেশের ভার লয়ে গেল ভারিগণ।
অধিবাস করিবারে চলেন ব্রাহ্মণ।।
সভা করি বসেছেন জনক ভূপতি।
সেইখানে গেলেন বশিষ্ঠ মহামতি।।
দ্রব্যের যতেক ভার এড়িলেক গিয়া।
বসেন বশিষ্ঠ কুশ আসন পাতিয়া।।
ঘট সংস্থাপন করে যেমন বিধান।
উপরেতে আম্রশাখা নীচে দুর্ব্বা ধান।।
বেদধ্বনি করিতে লাগিলেন ব্রাহ্মণ।
সীতারে আনিল দিয়া নানা আভরণ।।
বসিলেন সীতাদেবী সুবর্ণের পাটে।
বেদমন্ত্রে দিল গন্ধ সীতার ললাটে।।
চারিজনের অধিবাস করিল তখন।
বস্ত্র পরাইল আর নানা আভরণ।।
জলধারা দিয়া কন্যা লইলেক ঘরে।
জনক ভূপতি সর্ব্ব দ্রব্য ব্যয় করে।।
অধিবাস দ্রব্য লৈয়া চলিল ব্রাহ্মণে।
শ্রীরামের অধিবাস করে শুভক্ষণে।।
বশিষ্ঠ কহেন দশরথে সম্বোধিয়া।
চারি তনয়ের কর অধিবাস-ক্রিয়া।।
রাজা বলে, শুনহ বশিষ্ঠ তপোধন।
অযজ্ঞোপবীতী এই চারিটি নন্দন।।
ক্ষৌরকর্ম্ম করিলেন চারিটি নন্দন।
আর যজ্ঞোপবীত হইল চারিজনে।।
রামচন্দ্র বসিলেন বাপের নিকটে।
চন্দন দিলেন চারি পুত্রের ললাটে।।
চারিজনের অধিবাস করিল রাজন।
বসন পরায়ে দিল নানা আভরণ।।
নান্দীমুখ করিলেন যেমন বিধান।
নান্দীমুখ উপলক্ষ্যে করিলেন দান।।
কৌশল্যা ব্রাহ্মণী আর যত সখী লৈয়া।
আনন্দ করেন সবে রামকে দেখিয়া।।
হরিদ্রা মাখায় চারি করে কুতূহলে।
অঙ্গেতে পিঠালি দিল সখীরা সকলে।।
তোলা জলে স্নান করাইল চারি বরে।
মঙ্গলসূতা বান্ধি দিল তাহাদের করে।।
মঙ্গল করিয়া বসিলেন চারি জন।
দেখিয়া সকলে ভাবে এ চারি জন।
দেখিয়া সকলে ভাবে এ চারি মদন।।
বান্ধিল অপূর্ব্ব পাগ মস্তক-মণ্ডলে।
মনোহর মুক্তাহার শোভে বক্ষঃস্থলে।।
অঙ্গুলে অঙ্গুরী, করে অঙ্গদ বলয়।
কর্ণেতে কুণ্ডল দিল শোভে অতিশয়।।
দিব্যবস্ত্র পরিধান ভাই চারি জন।
অপর অঙ্গেতে দিল নানা আভরণ।।
ক্ষত্রিয় বিবাহ করে চতুর্দ্দোলাপরে।
সাজাইতে চতুর্দ্দোল কহে নৃপবরে।।
চতুর্দ্দোল সাজাইল অতি সে রূপস।
উপরে তুলিয়া দিল সুবর্ণ কলস।।
চারিদিকে দিল রানা সুবর্ণের বারা।
ঝলমল করে গজমুকুতার ঝারা।।
গঙ্গাজলি চামর দিলেক ঠাঁই ঠাঁই।
চতুর্দ্দোল সাজাইল হেন আর নাই।।
আপনার সুসাজ করেন দশরথ।
পরিধান পরিচ্ছদ যত মনোমত।।
রথোপরে চড়িলেন হাতে ধনুঃশর।
শুভযাত্রা করিলেন সানন্দ অন্তর।।
ভাটে রায়বার পড়ে, নাচে নটগণ।
বাজনা বাজায় কত, না যায় গণন।।
দামামা দগড় বাজে বেয়াল্লিশ বাজনা।
চতুর্দ্দোল আরোহণ করে চারিজনা।।
ঢাক ঢোল বাজিতেছে,ডম্ফ কোটি কোটি।
চারিদিকে উঠিল বীণার ছট ছটি।।
কত ঠাঁই বাজাইছে যোড়া যোড়া সানি।
কাঁশি বাঁশী যত বাজে নিয়ম না জানি।।
ঢালি পাইক যার সে খাঁড়ার চিকিমিকি।
কত শত অশ্বারোহী কত বা ধানুকী।।
চন্দ্র নৃত্য করিছেন জনক-সভায়।
হেনকালে দশরথ গেলেন তথায়।।
তাঁরে অনুব্রজিয়া লইলেন জনক।
দ্বারে ঠেলাঠেলি করে উভয় কটক।।
প্রথমেতে উভয়ে হইল ঠেলাঠেলি।
ঠেলাঠেলি হইতে হইল গালাগালি।।
চন্দ্র-নৃত্য দেখিতে ভুলিল সর্ব্বজন।
তাহে মগ্ন, কোথা লগ্ন কে করে গণন।।
আগে আইলেন রাম পশ্চাতে লক্ষ্মণ।
শতানন্দ বলে কন্যা কর সমর্পণ।।
ভাল মন্দ কেহ কারো না শুনে বচন।
অতীত হইল লগ্ন সবে বিস্মরণ।।
লয়ে গেল সকলেরে বিবাহের স্থলে।
চারি ভাই বৈসে ছায়া-মণ্ডপের তলে।।
প্রণাম করেন সবে সকল ব্রাহ্মণে।
বরণ করিল রামে বসন চন্দনে।।
নারীগণ করিলেক বরণ বিধান।
পায়ে দধি দিলেন মাথায় দূর্ব্বা ধান।।
বরণ করিয়া গেল যত সখীগণ।
দুই পুরোহিত কহে কথোপকথন।।
শতানন্দ বলেন, বশিষ্ঠ মহাশয়।
সূর্য্যবংশ কি প্রকার দেহ পরিচয়।।
বশিষ্ঠ বলেন, মুনি হোক বোঝাবুঝি।
কহ দেখি, তুমি চন্দ্রবংশের কুলজি।।
শতানন্দ মুনি বলে সভার ভিতর।
শুন চন্দ্রবংশের বিস্তার মুনিবর।।
দেবাসুরে মন্থন করিল সিন্ধু-নীর।
তাহে লক্ষ্মী জগন্মাতা হইল বাহির।।
সাগর মথনেতে জন্মিল শশধর।
চন্দ্র নাম হইল তাঁহার মনোহর।।
হইল চন্দ্রের পুত্র বধু মতিমান।
পুরুরবা নামে তাঁর হইল সন্তান।।
পুরুকৃষ্ণ নামে হৈল তাঁহার কুমার।
শতাবর্ত্ত নামে পুত্র বিদিত সংকার।।
আর্য্যাবর্ত্ত নামে হৈল তাঁহার তনয়।
সেপদী নামেতে তাঁর পুত্র মহাশয়।।
বাণ নামে পুত্র হৈল জানে সর্ব্বজন।
রেত নামে তাঁর পুত্র অতি বিচক্ষণ।।
ধ্রুব নামে তাঁর পুত্র বিদিত ভূতলে।
স্বর্গ নামে পুত্র তাঁর সর্ব্বলোকে বলে।।
পুত্র স্বর্গ রাজার সে সর্ব্ব নামধর।
হৈহয় নামেতে তাঁর পুত্র মনোহর।।
হৈহয়ের নন্দন অর্জ্জুন নাম ধরে।
নিমি নামে তাঁর পুত্র তুলনা অমরে।।
নিমির কীর্ত্তিতে ব্যাপ্ত সকল সংসার।
মিথি নামে তাঁহার হইল যে কুমার।।
সকলে মিলিয়া তাঁর মথিল শরীর।
তাহাতে জন্মিল পুত্র মিথি নামে বীর।।
সেই বসাইল এই মিথিলা নগর।
জনক ও কুশধ্বজ তাঁহার কোঙর।।
বশিষ্ঠ বলেন, শুনিলাম বিবরণ।
আমি কথা কহি তবে, তাহে দেহ মন।।
আদি পুরুষের নাম হৈল নিরঞ্জন।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর পুত্র তিন জন।।
তিন পুত্র হইল তনয়া এক জানি।
সকলে তাহার নাম রাখিল কন্দিনী।।
জরুৎকারু মুনি পুত্র, নারদ বীণাপাণি।
তাহাকে বিবাহ দিল কন্দিনী ভগিনী।।
সবে গীত গায়, নারদ বাজায় বেণু।
তাহাতে জন্মিল কন্যা নাম তার ভানু।।
তাহাকে বিবাহ দিল জামদগ্ন্য বরে।
এক অংশে নারায়ণ জন্মিল তাঁর ঘরে।।
ব্রহ্মার কাছেতে তার পড়িলেক বীজ।
তাহাতে জন্মিল পুত্র নামেতে মরীচ।।
মরীচের পুত্র হৈল নামেতে কশ্যপ।
তাঁহার তনয় সূর্য্য প্রচণ্ড উত্তাপ।।
সূর্য্যের হইল পুত্র মনু নাম তাঁর।
মনুর নামেতে সর্ব্ব ব্যপিল সংসার।।
মনুর হইল পুত্র সুষেণ নামেতে।
প্রষেণ তাঁহার পুত্র বিদিত জগতে।।
প্রষেণের পত্রি যুবনাশ্ব নাম ধরে।
রাজা হয় যুবনাশ্ব অযোধ্যানগরে।।
যুবনাশ্ব রাজার কহিব কিবা কথা।
তাঁহার জন্মিল পুত্র, নামে যে মান্ধাতা।।
মান্ধাতার পুত্র হৈল মুচুকুন্দ নাম।
ধুন্ধুমার তাঁর পুত্র রূপ গুণধাম।।
তাঁহার হইল পুত্র ইলা নাম ধরে।
তাঁর পুত্র শতাবর্ত্ত অযোধ্যা-নগরে।।
আর্য্যবর্ত্ত নামে তাঁর হইল নন্দন।
ভরত তাহাঁর পুত্র জানে সর্ব্বজন।।
ভরত রাজার আর কি কব আখ্যান।
যাঁর নামে পৃথিবীতে ভারত পুরাণ।।
তাঁর পুত্র হইল ইক্ষ্বাকু নরপতি।
বশিষ্ঠ পুরোধা যাঁর সুমন্ত্র সারথি।।
তাঁহার ভূধর নামে হইল নন্দন।
খাণ্ড নামে তাঁর পুত্র অযোধ্যা-ভূষণ।।
হইল খাণ্ডের পুত্র দণ্ড নাম ধরে।
যে প্রজার কামিনীগণে বলাৎকার করে।।
তাঁর পুত্র হইল হারীত নাম ধরে।
হরিবীজ তাঁর পুত্র বিদিত সংসারে।।
হরিবীজ রাজা হয় পরম আনন্দ।
তাঁহার হইল পুত্র নাম হরিশ্চন্দ্র।।
যাঁর দান লইলেন গাধির নন্দন।
বিকাইয়া আপনি যে শুধিল কাঞ্চন।।
হরিশ্চন্দ্র রাজ্য করে পূর্ণ অভিলাষ।
তাঁহার হইল পুত্র নাম রুহিদাস।।
সে রুহিদাসের পুত্র নাম মৃত্যুঞ্জয়।
ত্রিশঙ্কু তাঁহার পুত্র জানিহ নিশ্চয়।।
তাঁর পুত্র রুক্মাঙ্গদ অযোধ্যা-নিবাসী।
দ্বাদশ বৎসর কাল করে একাদশী।।
রুক্মাঙ্গদ জন্মাইল ধর্ম্মাদ তনয়।
তাঁর পুত্র হইল মরুৎ মহাশয়।।
অনারণ্য তাঁর বেটা জানে সর্ব্বজন।
তাঁহাকে মারিয়া গেল লঙ্কার রাবণ।।
তাঁহার হইল পুত্র বাহু নৃপবর।
শিবভক্ত নাম তাঁর হইল সগর।।
অসমঞ্জ নামে তাঁর হইল নন্দন।
তাঁর পুত্র অংশুমান ধর্ম্মপরায়ণ।।
অংশুমান রাজা রাজ্য করিয়া যৌতুকে।
মরিলেন তাঁর বংশে আর নাহি থাকে।।
ভগীরথ তাঁর পুত্র অযোধ্যা-নগরে।
গঙ্গা আনি উদ্ধারিল দেব দৈত্য নরে।।
বিতপত নামে তাঁর হইল নন্দন।
বিকর্ণ তাঁর পুত্র অযোধ্যা-ভূষণ।।
তাঁহার হইল পুত্র অমর্ষি রাজন।
দিলীপ তাঁহার পুত্র জানে সর্ব্বজন।।
দিলীপের সুত রঘু বড় বলবান।
রঘুবংশ বলি যাঁর বংশের আখ্যান।।
রঘুর তনয় অজ পিতার সমান।
তাঁর পুত্র দশরথ দেখ বিদ্যমান।।
দশরথ রাজা শৌর্য্যে বীর্য্যে গুণধাম।
তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এই ধার্ম্মিক শ্রীরাম।।
এতেক বশিষ্ঠ মুনি বলিল সবাকে।
শুনি শতানন্দ মুনি হাত দিল নাকে।।
গলে বস্ত্র দিয়া বলে জনক রাজন।
তব পুত্রে কন্যা দিয়া লইনু শরণ।।
দশরথ বলিলেন জনক রাজারে।
শরণ লইনু দিয়া এ চারি কুমারে।।
দুই রাজা উঠি তবে কৈল সম্ভাষণ।
কন্যা আন আন বলে যত বন্ধুগণ।।
হেন বেশ ভূষণ পরায় সখীগণ।
যাহাতে মোহিত হয় শ্রীরামের মন।।
সখী দেয় সীতারে মস্তকে আমলকী।
তোলা জলে স্নান করাইল চন্দ্রমুখী।।
চিরুণীতে কেশ আচঁড়িয়া সখীগণ।
চুল বান্ধি পরাইল অঙ্গে আভরণ।।
কপালে তিলক আর নির্ম্মল সিন্দূর।
বালসূর্য্য সম তেজ দেখিতে প্রচুর।।
নাকেতে বেসর দিল মুক্তা সহকারে।
পাটের পাছড়া দিল সকল শরীরে।।
চঞ্চল নয়নে কিবা কজ্জলের রেখা।
কামের কামান যেন গুণে যায় দেখা।।
গলায় তাহার দিল হার ঝিলিমিলি।
বুকে পরাইয়া দিল সোণার কাঁচুলি।।
উপর হাতেতে দিল তাড় স্বর্ণময়।
সুবর্ণের কর্ণফুলে শোভে কর্ণদ্বয়।।
দুই বাহু শঙ্খেতে শোভিত বিলক্ষণ।
শঙ্খের উপর সাজে সোণার কঙ্কণ।।
বসন পরায় তাঁরে সুন্দর প্রচুর।
দুই পায়ে দিল তাঁর বাজন নূপুর।।
সুবর্ণ আসনে বসিলেন রূপবতী।
চারিদিকে জ্বালি দিল সোহাগের বাতি।।
চারি ভগিনীতে বেশ করে বিলক্ষণ।
তখন মণ্ডপে গিয়া দিল দরশন।।
পুষ্পাঞ্জলি দিয়া তবে নমস্কার করে।
প্রদক্ষিণ সাতবার করিল রামেরে।।
অন্তঃপট ঘুচাইল যত বন্ধুগণ।
সীতা রামে পরস্পর হৈল দরশন।।
জলধারা দিয়া তারা কন্যা নিল পরে।
শোয়াইল জানকীরে অন্ধকার ঘরে।।
বরকে আনিতে আজ্ঞা করে সখীগণ।
আসিয়া করুন রাম ষষ্ঠীর পূজন।।
হাতে ধরি আনাইল রামেরে তখন।
সীতা-হাত ধরি তোল বলে বন্ধুজন।।
তখন ভাবেন মনে সীতা ঠাকুরাণী।
পায়ে হাত দেন পাছে রাম গুণমণি।।
করিলেন সীতা বাম হস্তে শঙ্খধ্বনি।
হাতে ধরি সীতারে তোলেন রঘুমণি।।
স্ত্রীলোকেরা পরিহাস করে ছল পেয়ে।
কেহ বলে হাতে ধরে, কেহ বলে পায়ে।।
পূর্ব্বাপর বর কন্যা এল দুইজনে।
রোহিণীর সহ চন্দ্র যেমন গগনে।।
কন্যাদান করে রাজা বিবিধ প্রকারে।
পঞ্চ হরিতকী দিয়া হরিহার করে।।
বহু দাস দাসী রাজা দিল কন্যা বরে।
জলধারা দিয়া কন্যা বর লইল ঘরে।।
রাজরাণী গিয়া ঘরে করিল রন্ধন।
কন্যা-বর দুই জনে করিল ভোজন।।
সাজায় বাসরঘর যত সখীগণ।
রাম সীতা-তাহাতে বঞ্চেন দুইজন।।
ঊর্ম্মিলা সহিত তথা রহেন লক্ষ্মণ।
মাণ্ডবীর সহিত ভরত বিচক্ষণ।।
শ্রুতকীর্ত্তি সহিত আছেন শত্রুঘন।
এইরূপে বাসর বঞ্চিল চারি জন।।
সানন্দ হইল সব মিথিলা-ভুবন।
রামকে দেখিতে যায় যত নারীগণ।।
পরিহাস করে সবে রামের সহিত।
তুমি যে জানকী পতি এ নহে উচিত।।
এই কথা রাম যে তোমাকে কহি ভাল।
সীতা বড় সুন্দরী, তুমি হে বড় কাল।।
হাসিয়া বলেন রাম সবার গোচর।
সুন্দরীর সহবাসে হইব সুন্দর।।
পরিহাস করিবে কি হারাইল জ্ঞান।
শ্রীরামের চরণে মজায় মণ প্রাণ।।
যেখানে বসিয়া আছে অনুজ লক্ষ্মণ।
সেখানে চলিল যায় যত সখীগণ।।
অগ্রজ যেমন, তাঁর অনুজ তেমন।
ভুলিল রামেরে তারা হেরিয়া লক্ষ্মণ।।
গলে ব্স্ত্র দিয়া বলে লক্ষ্মণ গুণমণি।
রামে পরিহাস করে সে মোর জননী।।
লজ্জাযুক্তা হইয়া ত যত সখীগণ।
পুনর্ব্বার যায় যথা রাম নারায়ণ।।
এইরূপে চারি স্থানে করি দরশন।
মানিল কামিনীগণ সফল নয়ন।।
চারি ভাই তুল্য চারি লইয়া সুন্দরী।
নানা সুখে কৌতুকে বঞ্চেন বিভাবরী।।