রাজা বলিলেন মুনি করি নিবেদন।
ধুনর্ব্বিদ্যা নাহি জানে কি করিবে রণ।।
অত্যল্প বয়স মম পুত্র চারি গুটি।
শিরে চুল নাহি ঘুচে আছে পঞ্চঝুঁটি।।
অন্য সৈন্য যত চাহ লহ তপোধন।
তাহারা করিবে নিশাচর নিবারণ।।
শুনিয়া কহেন বিশ্বামিত্র তপোধন।
কটকে খাইবে এত কোথা পাব ধন।।
একা রাম গেলে হয় কার্য্যের সাধন।
সহস্র কটকে মম নাহি প্রয়োজন।।
তব বংশে ছিলেন যে হরিশ্চন্দ্র রাজা।
পৃথিবী আমাকে দিয়া করিলেন পূজা।।
তথাপি না পাইলেন মনের সান্ত্বনা।
স্ত্রী পুত্র বেচিয়া শেষে দিলেন দক্ষিণা।।
একা রামে দিতে তুমি কর উপহাস।
সূর্য্যবংশ আজি বুঝি হইল বিনাশ।।
চিন্তিত হইয়া রাজা ভাবে মনে মনে।
ডাকিলেন ভরত শত্রুঘ্ন দুইজনে।।
দোঁহে দাঁড়াইল সে মুনির সাক্ষাতে।
রাজা বলিলেন যাহ মুনির সাক্ষাতে।।
ভূপতির বঞ্চনায় ভ্রান্ত তপোধন।
মনে ভাবিলেন এই শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
আগে যান মহামুনি পাছে দুইজন।
সরযূ নদীর তীরে দিল দরশন।।
মুনি বলিলেন শুন ভূপতি-কুমার।
হেথা গমনের পথ আছে দ্বিপ্রকার।।
এই পথে গেলে যাই তিন দিনে ঘর।
এই পথে গেলে লাগে তৃতীয় প্রহর।।
তৃতীয় প্রহর পথে কিন্তু আছে ভয়।
সেই পথে রাক্ষসী তাড়কা নামে রয়।।
তাড়িয়া ধরিয়া খায় যত মুনিগণে।
কোন্ পথে যাইতে তোমার লাগে মনে।।
বলিলেন ভরত শুনহ তপোধন।
দুষ্ট ঘাঁটাইয়া পথে কোন্ প্রয়োজন।।
একথা শুনিয়া মুনি ভাবিলেন মনে।
ইহা না হবেন যোগ্য রাক্ষস নিধনে।।
এক রাক্ষসের নাম শুনি এত ডর।
মারিবেন ইনি কিসে কোটি নিশাচর।।
রাজার শঠতা মুনি ভাবেন অন্তরে।
শ্রীরামে না দিয়া রাজা দিল ভরতেরে।।
আমার সহিত রাজা করে উপহাস।
অযোধ্যা সহিত আজি করিব বিনাশ।।
ক্রোধে ফিরিলেন পুনঃ বিশ্বামিত্র ঋষি।
নির্গত হইল তাঁর নেত্রে অগ্নিরাশি।।
সেই অগ্নি লাগে গিয়া অযোধ্যা-নগরে।
প্রজার তাবৎ ঘর দ্বার দগ্ধ করে।।
কান্দিয়া চলিল প্রজা রামের গোচরে।
বিশ্বামিত্র মুনি আসি সর্ব্বনাশ করে।।
তোমারে না দিয়া রাজা দিল ভরতেরে।
তেকারণে এ বিপদ অযোধ্যা নগরে।।
প্রজার করুণা শুনি রামের তরাস।
ধাইয়া গেলেন রাম বিশ্বামিত্র পাশ।।
মুনির চরণ ধরি বলে রঘুমণি।
প্রজালোকে রক্ষা প্রভু করহ আপনি।।
অপরাধ যেই করে দণ্ড কর তার।
নিরপরাধীর দণ্ড করা অবিচার।।
মুনি হৈয়া যেই জন রাগে দেয় মন।
পূর্ব্ব ধর্ম্ম নষ্ট তাঁর হয় সেইক্ষণ।।
পুত্রে পাঠাইতে পিতা হলেন কাতর।
যজ্ঞ রক্ষা করি গিয়া মিথিলা নগর।।
হাসিলেন মুনিরাজ রামের বচনে।
অযোধ্যার পানে চান অমৃত-নয়নে।।
সকল করিতে পারে তপের কারণ।
যেমন অযোধ্যাপুরী হইল তেমন।।
মুনির চরিত্র দেখি রামের তরাস।
আদিকাণ্ড গাইল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।