লবণাসুর বধার্থ শত্রুঘ্নের যুদ্ধে যাত্রা
শুনিয়া মুনির কথা ভাই তিন জন।
যোড়হাতে দাণ্ডাইল রামের সদন।।
যোড়হাতে কহেন ঠাকুর শত্রুঘন।
তুমি ভাই লক্ষ্মণ করেছ বহু রণ।।
আমারে করহ আজ্ঞা মারিতে লবণ।
লবণে মারিলে যশ ঘোষে ত্রিভুবন।।
শত্রুঘ্নের বচনে রামের হৈল হাস।
লবণে মারিতে রাম করিলা আশ্বাস।।
শত্রুঘন চলিলেন মারিতে লবণ।
কহেন ভার্গব মুনি শুন শত্রুঘন।।
কুড়ি হাজার মত্ত হস্তী মেরে খায় দিনে।
লবণের সঙ্গে যুদ্ধ থেকো সাবধানে।।
এত বলি ভার্গব গেলেন নিজ স্থান।
ভাইগণ লয়ে রাম করেন অনুমান।।
রাম বলেন শত্রুঘ্নে করিলাম রাজা।
লবণে মারিয়া পাল মথুরার প্রজা।।
লবণে মারিয়া তুমি হয়ে অধিকারী।
প্রজার পালন কর মথুরা-নগরী।।
শত্রুঘ্ন বলেন, প্রভু কর অবধান।
জ্যেষ্ঠ সত্ত্বে কনিষ্ঠের নহে এ বিধান।।
শ্রীরাম বলেন, শুন ভাই শত্রুঘন।
তোমাতে আমাতে নহে ভেদ দুই জন।।
চলিলেন শত্রুঘন মারিতে লবণ।
রামে প্রদক্ষিণ করি বন্দিয়া চরণ।।
বিষ্ণু-অস্ত্র ছিল তাঁর অস্ত্রের প্রধান।
লবণে মারিতে শত্রুঘনে দিলা দান।।
এক লক্ষ রথ নড়ে এক লক্ষ হাতী।
এক লক্ষ ঘোড়া নড়ে পবনের গতি।।
লবণে মারিতে বীর করিল সাজনি।
শত্রুঘ্নের নিজ বাদ্য সাত অক্ষৌহিণী।।
লিখনে না যায় ঠাট কটক অপার।
শুনিয়া বাদ্যের শব্দ লাগে চমৎকার।।
হইল আষাঢ় গত, শ্রাবণ প্রবেশে।
গেলেন যমুনা পার বাল্মীকির দেশে।।
শত্রুঘন বন্দিলেন মুনির চরণ।
শত্রুঘনে দেখি মুনি হরষিত মন।।
শত্রুঘন বলে মুনি করি নিবেদন।
রামের আদেশে যাই বধিতে লবণ।।
কটক সহিত আমি আইনু এ দেশে।
অদ্য রাত্রি তবাশ্রবে বঞ্চিব হরিষে।।
এতেক শুনিয়া মুনি হরষিত মন।
ব্রহ্মমন্ত্র বেদধ্বনি করিলা তখন।।
শত্রুঘনে করাইলা উত্তম ভোজন।
জানিল লবণ শীঘ্র হইবে নিধন।।
মুনি আর শত্রুঘন দোঁহে কয় কথা।
হেনকালে দুই পুত্র প্রসবিলা সীতা।।
শিষ্যগণ কহে আসি মুনির সাক্ষাতে।
দুই পুত্র যমজ প্রসব কৈল সীতে।।
মুনি বলে, গোপনেতে রাখ শিষ্যগণ।
এই কথা যেন নাহি শুনে শত্রুঘন।।
মতান্তরে আছে ইহা শুন সর্ব্বজন।
যমুনার তীরে মুনি করেন তর্পণ।।
মুনিকে সংবাদ দেয় শিষ্য এক জন।
প্রসব করিল সীতা যমজ নন্দন।।
আনন্দিত হয়ে মুনি কহিলেন শিষ্যে।
শিশুকে মাখাতে বল লব আর কুশে।।
শুনিয়া মুনির কথা কহিল সীতায়।
হরিষ হইয়া সীতা পুত্রেরে মাখায়।।
মুনি আসি জিজ্ঞাসিল সীতাদেবী তরে।
হাসি কহে তব পুত্রে দেখাও আমারে।।
লব আর কুশ নাম মুনিবর রাখে।
লব মাখি লব হৈল, কুশ কুশে মেখে।।
দিনে দিনে বাড়ে দুই শিশু মহারথা।
এখন কহিব যে লবণ-বধ কথা।।