৪৭তম অধ্যায়
সন্ন্যাসধৰ্ম্মের প্রশংসা
“ব্রহ্মা বলিলেন, “হে তপোধন! নিশ্চয়বাদী জ্ঞানবৃদ্ধ ব্রাহ্মণগণ সন্ন্যাসকেই উৎকৃষ্ট তপস্যা ও জ্ঞানকেই পরব্রহ্ম বলিয়া কীৰ্ত্তন করেন। পরব্রহ্ম নির্দ্বন্দ্ব, নির্গুণ, নিত্য, অচিন্ত্য, সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ও বেদবিদ্যাতীত। উঁহাকে লাভ করা নিতান্ত দুঃসাধ্য। পণ্ডিতগণ রজোগুণবিমুক্ত ও বিশুদ্ধান্তঃকরণ হইয়া সন্ন্যাসধৰ্ম্ম অবলম্বনপূৰ্ব্বক জ্ঞানদ্বারা উঁহাকে অবলোকন ও উঁহার সমীপে গমন করিয়া থাকেন। জ্ঞানবান্ ব্যক্তিরা সন্ন্যাসরূপ উৎকৃষ্ট তপস্যাকে মোক্ষমার্গপ্রকাশক প্রদীপ, সদাচারকে ধৰ্ম্মের সাধন ও জ্ঞানকে পরব্রহ্মস্বরূপ বলিয়া কীৰ্ত্তন করেন। যে মহাত্মা নির্লিপ্তভাবে সৰ্ব্বভূতে অবস্থিত জ্ঞানময় পরমাত্মাকে অবগত হইতে পারেন, তিনি অনায়াসে সৰ্ব্বত্র গমনে সমর্থ হয়েন। যিনি দেহের সহিত জীবের একীভাব ও পৃথভাব এবং পরমাত্মার সহিত জীবের একত্ব ও পৃথক্ভাব সবিশেষ অবগত হইতে পারেন, তিনি অনায়াসে সমুদয় দুঃখ হইতে মুক্তিলাভ করিয়া থাকেন। যে মহাত্মা কোন বিষয়ে অভিলাষ বা কোন বিষয়ে অবজ্ঞা প্রদর্শন না করেন, তিনি ইহলোকে অবস্থান করিয়াই ব্রহ্মের সারূপ্য প্রাপ্ত হয়েন।
‘যিনি প্রকৃতির গুণসমুদয় বিশেষরূপে অবগত, মমতাপরিশূন্য, নিরহঙ্কার ও সুখদুঃখাদি দ্বন্দ্ববিহীন হইয়া শুভাশুভ কৰ্ম্মসমুদয় পরিত্যাগ করিতে পারেন, তিনিই শান্তিগুণের সাহায্যে নিত্য, নির্গুণ পরব্রহ্মকে অবগত হইয়া মুক্তিলাভে সমর্থ হয়েন। যে ব্যক্তি মমতাপরিশূন্য হইয়া ব্রহ্মরূপ বীজ হইতে প্রকৃতিতে অঙ্কুরিত, বুদ্ধিরূপ স্কন্ধ, অহঙ্কাররূপ পল্লব, ইন্দ্রিয়রূপ কোটর, মহাভূতরূপ শাখা, কাৰ্য্যরূপ প্রশাখা, আশারূপ পত্র, সঙ্কল্পরূপ পুষ্প ও শুভাশুভ ঘটনারূপ ফলসম্পন্ন, দেহরূপ বৃক্ষকে সবিশেষ অবগত হইয়া তত্ত্বজ্ঞানরূপ মহাখড়্গদ্বারা উহা ছেদন করিতে পারেন, তাঁহার নিশ্চয়ই মোক্ষলাভ হয়। ঐ বৃক্ষে দুইটি পক্ষী অবস্থান করে। উহাদের নাম জীব ও ঈশ্বর। জীব ও ঈশ্বর বুদ্ধি ও মায়াতে প্রতিবিম্বিত হয়েন বলিয়া উঁহাদিগকে চৈতন্যময় বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়। যিনি ঐ উভয় অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, সেই পরমাত্মাই চৈতন্যময়। জীবাত্মা লিঙ্গশরীর হইতে বিমুক্ত হইলেই সৰ্ব্বদোষবিমুক্ত ও নির্গুণ হইয়া বুদ্ধাদির চেতনকৰ্ত্তা পরমাত্মা হইতে অভিন্নভাবে অবস্থান করেন।”