মিথিলায় হৈল যদি লক্ষ্মীর উৎপত্তি।
অযোধ্যায় জন্ম নিতে যান লক্ষ্মীপতি।।
দশরথ যজ্ঞ করে একই বৎসর।
যজ্ঞস্থলে আসি দেখা দিলেন শ্রীধর।।
শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম চতুর্ভুজ কলা।
কিরীট কুণ্ডল কর্ণে হৃদে বনমালা।।
এইরূপে আসি দেখা দিলা নারায়ণ।
কেবল দেখিল ঋষ্যশৃঙ্গ তপোধন।।
মুনি বলে দশরথ তুমি পুণ্যবান।
তব ঘরে জন্মিতে আইল ভগবান।।
হেনকালে দৈববাণী হৈল চমৎকার।
বিষ্ণু জন্মে রাবণেরে করিতে সংহার।।
ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি দিল যজ্ঞেতে আহুতি।
যজ্ঞ হৈতে উঠে চরু বিষ্ণুর আকৃতি।।
বিষ্ণুমন্ত্রে ঋষ্যশৃঙ্গ তাতে দিল কাটি।
তাতে ফেলে দিল অন্ধকের ফলগুটি।।
সেই ফলে নারায়ণ করেন প্রবেশ।
চরুতে মিশ্রিত হন প্রভু কমলেশ।।
তুলিলেন চরু মুনি সুবর্ণের থালে।
দশরথ-হাতে দিয়া কহে শুভকালে।।
প্রথমা নারীকে লয়ে করাহ ভক্ষণ।
এই চরু হৈতে হবে তোমার নন্দন।।
মুনি চরু হাতে দিল রাজা বন্দে মাথে।
অন্তঃপুরে গেল রাজা সুপবিত্র পথে।।
কৌশল্যা কৈকেয়ী তাঁরা মুখ্যা দুই রাণী।
একভাগ ছিল চরু কৈল দুইখানি।।
অগ্রভাগ দিল রাজা কৌশল্যা রাণীরে।
শেষ ভাগখানি দিল কৈকেয়ী দেবীরে।।
চরু দিয়া যজ্ঞশালে গেলে দশরথে।
হেনকালে সুমিত্রা সে লাগিল কান্দিতে।।
ঊর্দ্ধশ্বাসে আসি কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস।
কোন দ্রব্য খেতে রাজা না কৈল আশ্বাস।।
আমি ত দুর্ভাগা নারী বিফল জীবন।
আমারে বঞ্চিয়া খেয়ে কত পাবে ধন।।
শুনিয়া কৌশল্যা রাণী হয়ে দয়াবতী।
বলিতে লাগিল রাণী সুমিত্রার প্রতি।।
মনে মানিয়াছি যেন তিনটি ভগিনী।
আপন ভাগের তোমা দিব অর্দ্ধখানি।।
ইহাতে তোমার যদি জন্ময়ে নন্দন।
আমার পুত্রের সঙ্গে রহিবে সেজন।।
সুমিত্রা বলেন দিদি এই দেহ বর।
মম পুত্র হয় তব পুত্রের নফর।।
অগ্রভাগ কৌশল্যা রাখিয়া নিজ ঘরে।
শেষে শেষভাগ দিল সুমিত্রা দেবীরে।।
তাহা দেখে বসিয়া কৈকেয়ী ক্রূরমতি।
কপটে ডাকিয়া কহে সুমিত্রার প্রতি।।
তোমারে চরুর অর্দ্ধ অংশ দিব আমি।
সুমিত্রা ভগিনী এই সত্য কর তুমি।।
আমার চরুর অংশে হবে যে নন্দন।
আমার পুত্রের সঙ্গী কর সেই জন।।
সুমিত্রা বলেন দিদি করিলাম পণ।
তোমার পুত্রের দাস আমার নন্দন।।
এত বলি শেষভাগ দিলেন তাহারে।
তিন জন খাইলেন চরু একেবারে।।
এক অংশে নারায়ণ চারি অংশ হৈয়া।
তিন গর্ভে জন্মিলেন শুভক্ষণ পাইয়া।।
হেথা যজ্ঞ সাঙ্গ করি রাজা দশরথ।
ব্রাহ্মণেরে ধন দান করে বিধিমত।।
ব্রাহ্মণে তুষিল করি নানা ধন দান।
সবে আশীর্ব্বাদ করে, হও পুত্রবান।।
বিদায় হইয়া মুনি নিজ দেশে যায়।
আদিকাণ্ডে গাইল পুত্রেষ্টি-যজ্ঞ সায়।।