৪১তম অধ্যায়
উত্তর কর্ত্তৃক অস্ত্রাবতরণ
উত্তর কহিলেন, “হে বৃহন্নলে! শুনিয়াছি, এই বৃক্ষে একটা শবদেহ বদ্ধ রহিয়াছে; অতএব আমি রাজকুমার হইয়া কিরূপে উহা স্পর্শ করিব? ফলতঃ মন্ত্রব্রতবিৎ ক্ষত্ৰিয়সন্তানের পক্ষে এইরূপ অপবিত্র বস্তু স্পর্শ করা নিতান্ত অবিধেয়। আমি এই মৃত কলেবর স্পর্শ করিলে নিঃসন্দেহ শববাহকের ন্যায় অশুচি হইব; তাহা হইলে তুমি কিরূপে আমাকে স্পর্শ করিবে?” অর্জ্জুন কহিলেন, “হে উত্তর! তোমাকে অশুচি হইতে হইবে না। উহা কামুক, মৃতদেহ নহে। হে মহাত্মন! তুমি মহদ্বংশসম্ভূত, বিশেষতঃ মৎস্যরাজ বিরাটের আত্মজ; অতএব যদি উহা বস্তুতঃ শব হইত, তাহা হইলে আমি কখনই তোমাকে স্পর্শ করিতে অনুরোধ করিতাম না।”
তখন রাজকুমার উত্তর অগত্যা রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া শমীবৃক্ষে আরোহণ করিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন রথে অবস্থানপূর্ব্বক তাঁহাকে কহিলেন, “মহার্হ কামুক সকল অবরোপিত ও পরিবেষ্টন বিনিমুক্ত কর।” উত্তর অর্জ্জুনের আদেশক্ৰমে বৃক্ষ হইতে সমুদয় অস্ত্র<স্ত্র ভূতলে অবতারিত করিয়া পরিবেষ্টনপত্র বিমোচিত করিবামাত্ৰ অর্জ্জুনের গাণ্ডীব ও অন্যান্য পাণ্ডবগণের শরাসন-সমুদয় তাঁহার নয়নগোচর হইল। যেমন উদয়কালে গ্ৰহগণের দিব্যপ্ৰভা উদ্ভাসিত হইয়া থাকে, তদ্রূপ তৎকালে সেই সমুদয় শরাসনের বিচিত্ৰ প্ৰভা স্ফুরিত হইতে লাগিল। রাজকুমার উত্তর জৃম্ভণশীল ভীষণ ভুজঙ্গের ন্যায়। সেই কামুক সকল অবলোকনে ভীত ও রোমাঞ্চিত হইলেন এবং প্রত্যেক চাপ স্পর্শ করিয়া অর্জ্জুনকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন।