সূর্পণখার বৈধব্যের বিবরণ
মুনি বলে দশানন দেশে দেশে চলে।
একদিন উঠিল সে গগন-মণ্ডলে।।
তিনকোটি দৈত্য তথা কালকুলপতি।
রাবণেরে বেড়ে তারা সব সেনাপতি।।
তিনকোটি দৈত্য তারা যমের দোসর।
রাবণেরে বিন্ধি তারা করিল জর্জ্জর।।
জিনিতে না পারি দৈত্য চিন্তিত রাবণ।
অগ্নিবাণ ধনুকেতে যুড়িল তখন।।
অগ্নিবাণ এড়িলেক অগ্নি অবতার।
অগ্নিবাণে দৈত্য সব হইল সংহার।।
এক বাণে তিনকোটি করিল সংহার।
রাবণ বলিল লুঠ দৈত্যের ভাণ্ডার।।
পাইয়া রাজার আজ্ঞা ভাণ্ডার দাঁদুড়ি।
বাছিয়া বাছিয়া লুঠে পরমা সুন্দরী।।
সে সবার রূপ দেখি কামে দহে মন।
শাপভয়ে শৃঙ্গার না করে দশানন।।
রাবণ প্রস্থান করে দেশে কুতূহলে।
লুঠিয়া সুন্দরীগণে রথে নিল তুলে।।
সে সবার নেত্রজলে রথখান তিতে।
শ্রাবণ মাসের ধারা বহে যেন স্রোতে।।
কন্রাগণে ব্রবোধে প্রবোধে নাহি মানে।
কান্দিতেছে কেবল রাবণ বিদ্যমানে।।
রাবণ প্রার্থনা করে চাহে রতি দান।
কন্যাগণ পিতৃ-মাতৃ-শোকে হতজ্ঞান।।
রাবণ ভাবিছে যদি না হৈত শাপ।
তবে এতক্ষণ কেবা সহে কাম-তাপ।।
ঘোর শাপ দিল মোরে কুবের-নন্দন।
বলে ধরি শৃঙ্গার না করি সে কারণ।।
পাপিষ্ঠ কামিনীজাতি সৃজিল বিধাতা।
অন্তরে পুড়িয়া মরে তবু নাহি কথা।।
মহোদর বলে রাজা মম কথা শুন।
লজ্জা ভয়ে তোমারে না ভজে কন্যাগণ।।
একে কুলবালা তাহে মনে ভয় বাসে।
সব কন্যা ভজিবেক তুমি গেলে দেশে।।
লঙ্কায় তোমার দশ সহস্রেক রাণী।
রূপে গুণে কুলে শীলে ত্রিভুবন জিনি।।
এত স্ত্রী থাকিতে তব না পূরিল সাধ।
তবে কেন রম্ভা হরি পাড়িলে প্রমাদ।।
মহোদর কহে যত রাবণ লজ্জিত।
দেশেতে প্রস্থান করে হয়ে ত্বরান্বিত।।
দিগ্বিজয় করে রাজা শতেক বৎসর।
উপস্থিত হিইল লঙ্কাতে লঙ্কেশ্বর।।
সঙ্গে ছিল দৈত্য-কন্যা পরমা সুন্দরী।
লইয়া যে সব কন্যা গেল অন্তঃপুরী।।
রাবণ যাহার পায় অঙ্গীকার বাণী।
অন্তঃপুরে লয়ে তারে করে মুখ্য রাণী।।
যে কন্যার রাবণ না পায় অঙ্গীকার।
থুইয়া অশোক বনে করে ত প্রহার।।
রাবণ প্রতাপী অতি স্বর্ণ-লঙ্কাপুরে।
দশ হাজার স্ত্রী সহ সুখে কেলি করে।।
সূর্পণখা নামে ছিল রাবণ-ভগিনী।
রাবণের কাছে কান্দে চক্ষে পড়ে পানি।।
সূর্পণখা বলে ভাই তুমি মোর অরি।
বিধবা করিলে মোরে মোর পতি মারি।।
তিন কোটি দৈত্য যে মারিলে তুমি বলে।
মারিলে আমার স্বামী তাহার মিশালে।।
পাত্র মিত্র আদি আর বিভীষণ ভাই।
সকলে বিবাহ দিল দানবের ঠাঁই।।
যে দিন বিবাহ, সেই দিন হৈনু রাঁড়ী।
সাগরে প্রবেশ করি আমি প্রাণ ছাড়ি।।
সূর্পণখার হাতে ধরি বলে মহারাজ।
অজ্ঞাতে হইল কর্ম্ম নাহি দেহ লাজ।।
দুই ভাই আছ খর আর যে দূষণ।
তাহারা তোমায় সদা করিবে পালন।।
স্বতন্ত্রা হইয়া তুমি থাক সেই স্থানে।
স্বতন্ত্রের নামে রাঁড়ী হৃষ্ট হয় মনে।।
আর যত রাণ্ডী ঘরে বঞ্চয়ে যৌবন।
স্বতন্ত্রা করিল তারে কুবুদ্ধি রাবণ।।
সূর্পণখা চলিল রাবণের আদেশে।
সবংশে রাবণ মরে সে রাঁড়ীর দোষে।।
সে রাণ্ডীর নাক কাণ কাটিল লক্ষ্মণ।
তাহা হৈতে সবংশেতে মরিল রাবণ।।
অগস্ত্যের কথা শুনি রঘুনাথের হাস।
কহ কহ বলি রাম করিলা প্রকাশ।।