৩৬৫তম অধ্যায়
নাগ-বিপ্রের পরস্পর সম্ভাষণপূৰ্ব্বক বিদায়
“তখন ব্রাহ্মণ কহিলেন, নাগরাজ! আপনি যাহা কীৰ্ত্তন করিলেন, তাহা অতিশয় আশ্চর্য্য সন্দেহ নাই। আপনার অর্থযুক্ত বাক্যশ্রবণে সৎপথ আমার হৃদয়ঙ্গম হইল। আমি যারপরনাই প্রীতিলাভ করিয়াছি। এক্ষণে আপনার মঙ্গল হউক, আমি চলিলাম। আপনি ভৃত্য প্রেরণ করিয়া মধ্যে মধ্যে আমার তত্ত্ব করিবেন।’
“নাগ কহিলেন, ভগবন্! স্বীয় অভিপ্রায় ব্যক্ত না করিয়া এ স্থান হইতে প্রস্থান করা আপনার কর্ত্তব্য নহে। আপনি যে নিমিত্ত এ স্থানে আগমন করিয়াছেন, তাহা ব্যক্ত করুন। আপনার কর্ত্তব্য কার্য্য সম্পন্ন হইলেই আপনি আমাকে সম্ভাষণ করিয়া গমন করিবেন। এক্ষণে আমাদের উভয়ের পরস্পর প্রণয়সঞ্চার হইয়াছে; সুতরাং বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট পথিকের ন্যায় উদাসীনভাবে কেবল আমাকে দর্শন করিয়াই গমন করা আপনার কদাপি কর্ত্তব্য নহে। আমার প্রতি আপনার যেরূপ ভক্তি, আপনার প্রতিও আমার তদ্রূপ ভক্তি আছে, সন্দেহ নাই। যখন আমার সহিত আপনার মিত্রতা জন্মিয়াছে, তখন আমার ভবনে অবস্থান করিতে আপনার আশঙ্কা কি? আপনাতে আমাতে কিছুমাত্র প্রভেদ নাই। আমার সমুদয় পরিবারই আপনার অধিকৃত।
“তখন ব্রাহ্মণ কহিলেন, নাগরাজ! আপনি যাহা কহিলেন, তাহা অযথার্থ নহে। দেবগণ আপনার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নহেন। যখন কি আপনি, কি আমি, কি অন্যান্য প্রাণীগণ সকলকেই একমাত্র পরমব্রহ্মে প্রবিষ্ট হইতে হইবে, তখন আপনাতে ও আমাতে যে কিছুমাত্র প্রভেদ নাই, তাহাতে আর সন্দেহ কি? যাহা হউক, পূৰ্ব্বে আমি পুণ্যসঞ্চয়ের উপায় স্থির করিতে অসমর্থ ছিলাম, আপনার প্রসাদে তদ্বিষয়ে সমর্থ হইয়াছি, এক্ষণে আপনি পরমসুখে কালযাপন করুন, আমি চলিলাম। অতঃপর আমি পরমার্থলাভের প্রধান উবৃত্তি অবলম্বন করিব, সন্দেহ নাই।”