৩৫তম অধ্যায়
কৌরবগণের বিরাট গোধন আক্রমণ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! যখন মৎস্যরাজ গোধন প্রত্যাহারণমানমে ত্রিগর্ত্তদিগের সম্মুখীন হয়েন, সেই সময়েই রাজা দুৰ্য্যোধন স্বীয় অমাত্য ও ভীষ্ম, দ্রোণ, কৰ্ণ, কৃপ, অশ্বথামা, শকুনি, দুঃশাসন, বিবিংশতি, বিকৰ্ণ, চিত্ৰসেন, দুমুখ প্রভৃতি মহারথিগণ-সমভিব্যাহারে মৎস্যদেশে উপনীত হইয়া রথসমূহ চতুর্দ্দিক পরিবৃত করিয়া ঘোষগণকে প্রহারপূর্ব্বক ষষ্টিসহস্ৰ গো হস্তগত করিলেন। সেই ভয়ঙ্কর সময়ে কৌরবাহত গোপাল ও ঘোষগণ ঘোররব করিতে লাগিল।
তখন গোপাধ্যক্ষ ভয়ব্যাকুলিত-চিত্তে সত্বর রথারোহণপূর্ব্বক আর্ত্তনাদ করিতে করিতে নগরে উত্তীর্ণ হইল এবং অবিলম্বে রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া রাজভবনে প্রবেশপূর্ব্বক রাজপুত্ৰ উত্তরকে নিবেদন করিল, “রাজপুত্ৰ! কৌরবগণ বলপূর্ব্বক আপনার ষষ্টি সহস্ৰ গো গ্রহণ করিয়াছে, অতএব আপনি অচিরাৎ তৎসমুদয় প্রত্যাহরণের উদযোগ করুন। আপনি হিতালিঙ্গু হইয়া স্বয়ং গমন করুন, মহারাজ। আপনার উপরে সমুদয় ভার সমর্পণ করিয়া গিয়াছেন। তিনি সভাসদগণের সমক্ষে আপনার নামোল্লেখ করিয়া এইরূপ শ্লাঘা করিয়া থাকেন যে, আমার পুত্র, আমার অনুরূপ শৌয্যশালী বংশধর, অস্ত্ৰকুশল যোদ্ধা এবং বীর।” রাজপুত্ৰ! এক্ষণে সেই রাজবাক্য অন্বর্থ [সার্থক] হউক। আপনি শরাসনবিনিষ্ক্রান্ত সুবর্ণপুঙ্খ সন্নতপর্ব্ব শর-সমূহে অরাতিগণের সৈন্য সংহার ও তাহাদিগকে পরাজিত করিয়া গোধন প্রত্যাহরণ করুন; বিলম্বে প্রয়োজন নাই; সত্বর স্যন্দনে রাজতশ্বেত বাজিরাজি [অশ্বসমূহ] সংযোজিত ও সুবর্ণবর্ণ ধ্বজপাট সমুচ্ছ্রিত করিয়া সংগ্রামে গমনপূর্ব্বক শরনিকর দ্বারা নৃপতিগণের পথ-নিরোধ ও দিনকরকে আচ্ছাদিত করুন এবং যেমন সুররাজ অসুরগণকে পরাভব করেন, তদ্রূপ কৌরবগণকে সমরে পরাজিত করিয়া বিমল যশোরাশি লাভপূর্ব্বক পুনরায় স্বনগরে প্রত্যাগত হউন। হে রাজপুত্র! অর্জ্জুন যেমন পাণ্ডবগণের আশ্রয়, আপনিও সেইরূপ মৎস্যদেশবাসী মনুষ্যগণের একমাত্র অবলম্বন, অতএব যাহাতে অদ্য রাজ্যরক্ষা ও প্ৰজাগণের পরিত্রাণ হয়, এবংবিধ উপায়বিধান করুন।”
উত্তর অন্তঃপুরে স্ত্রীসমাজমধ্যে এবম্প্রকার অভিহিত হইয়া আত্মশ্লাঘাসহকারে কহিতে লাগিলেন।