৩৫৯. নাগপত্নীর অতিথিবাৎসল্য

৩৫৯তম অধ্যায়

নাগপত্নীর অতিথিবাৎসল্য

ভীষ্ম কহিলেন, “হে ধৰ্ম্মরাজ! অনন্তর সেই অতিথিপরায়ণ নাগরাজের ভাৰ্য্যা, বন্ধুবান্ধব ও ভ্রাতৃগণ সেই ব্রাহ্মণের নিকট সমুপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তিনি গোমতীতীরবর্ত্তী বিজন প্রদেশে সমাসীন হইয়া নিরাহারে ইষ্টমন্ত্র জপ করিতেছেন। তখন তাঁহারা ব্রাহ্মণের যথোচিত পূজা করিয়া অসন্দিগ্ধচিত্তে তাঁহাকে কহিলেন, ‘ভগবন্! আপনি ছয় দিন হইল, এই স্থানে আগমন করিয়াছেন; কিন্তু অদ্যাপি কিছুমাত্র আহার করিলেন না। আমরা গৃহস্থধৰ্ম্ম আশ্রয় করিয়াছি, সুতরাং অতিথিসৎকারই আমাদিগের কর্ত্তব্য কৰ্ম্ম ও প্রধান ধর্ম্ম। এক্ষণে যখন আপনি আমাদিগের অধিকারে অবস্থান করিতেছেন এবং যখন আমরা আপনার নিকট উপস্থিত হইয়াছি, তখন আমাদিগের প্রদত্ত জল পান এবং ফল, মূল, পত্র বা অন্ন ভোজন করা আপনার অবশ্য কর্ত্তব্য। এই বনে অনাহারে অবস্থান করিয়া আমাদিগের আবালবৃদ্ধ সমুদয় পরিবারকে অধৰ্ম্মে লিপ্ত করা আপনার কখনই উচিত নহে। আমাদিগের বংশে কেহ কখন ব্রহ্মহত্যা করে নাই; কাহারও সন্তান জন্মগ্রহণমাত্র মৃত্যুমুখে নিপতিত হয় নাই এবং দেবগণের পূজা, অতিথি ও বন্ধুবর্গের ভোজন না হইলে কেহ কখন অন্ন গ্রহণ করে নাই।’

“তখন ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘হে নাগগণ! আপনাদিগের প্রযত্নেই আমার আহার করা হইয়াছে। নাগরাজের আগমন করিবার আর আট দিন অবশিষ্ট আছে, যদি আট দিন পরে সেই পন্নগরাজ আগমন না করেন, তাহা হইলে আমি নিশ্চয়ই আহার করিব। তাঁহার আগমনের নিমিত্তই আমি এই কঠোর ব্রতের অনুষ্ঠান করিয়াছি। আপনারা অনুতাপ পরিত্যাগ করিয়া যথাস্থানে গমন করুন। আমার এই ব্রতের বিঘ্ন করা আপনাদিগের কখনই কর্ত্তব্য নহে।’ ব্রাহ্মণ এই কথা কহিলে নাগগণ তাঁহার অধ্যবসায় অবগত হইয়া, কৃতকার্য্য হইতে না পারিয়া দুঃখিতমনে স্ব স্ব ভবনে প্রস্থান করিলেন।”