যজ্ঞকাৰ্য্যে যুধিষ্ঠিরের নিয়োগনৈপুণ্য
বৈশম্পায়ন কহিলেন, তদনন্তর যুধিষ্ঠির পিতামহ ও গুরুকে অভিবাদন করিয়া ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচাৰ্য্য, দ্রৌণায়নি, দুৰ্য্যোধন ও বিবিংশতিকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “আপনারা সকলে সর্ব্বতোভাবে এই যজ্ঞানুষ্ঠানবিষয়ে আমাকে অনুগ্রহ করুন। আমার সমস্ত ধনসম্পত্তিতে আপনাদের সম্পূর্ণ প্রভুত্ব আছে, যাহাতে আমার শ্রেয়োলাভ হয়, তদ্বিষয়ে মনোযোগী হউন।” ব্ৰতদীক্ষিত পাণ্ডবাগ্রজ সকলকে এই কথা বলিয়া যোগ্যতানুসারে তাঁহাদিগকে এক এক কাৰ্য্যে নিয়োগ করিলেন। দুঃশাসনের প্রতি নিখিল ভোজ্যদ্রব্যের তত্ত্বাবধারণের ভারাপণ করিলেন, অশ্বথামাকে বিপ্রসেবায় নিযুক্ত করিলেন, সঞ্জয় রাজপরিচর্য্যায় তৎপর হইলেন এবং মহানুভব ভীষ্ম ও দ্রোণ কর্তব্যাকর্তব্য বিবেচনা করিতে লাগিলেন। রজত, সুবর্ণ প্রভৃতি নানাবিধ রত্নসমূহের রক্ষণাবেক্ষণে ও দক্ষিণা-প্রদানে কৃপাচাৰ্য্যকে আদেশ করিলেন। অন্যান্য প্রধান প্রধান ব্যক্তিকে অপরাপর কাৰ্য্যে প্রেরণ করিলেন। বাহ্লীক, ধৃতরাষ্ট্র, সোমদত্ত এবং জয়দ্ৰথ ইহারা গৃহপতির ন্যায় বিরাজমান রহিলেন। দুৰ্য্যোধন উপায়ন-প্রতিগ্রহে [নিমন্ত্রিত ব্যক্তিগণের উপটৌকনরাপে প্রেরিত দ্রব্যগ্রহণে] এবং শ্ৰীকৃষ্ণ স্বয়ং ব্রাহ্মণগণের পাদপ্রক্ষালনে নিযুক্ত হইলেন। সমাগত জনগণ সভার শোভা ও ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে নয়নগোচর করিয়া অনুত্তম ফললাভের প্রত্যাশায় তথায় গমন করিলেন। কেহই সহস্রের নুন উপায়ন প্রদান করেন নাই, সকলেই প্রচুর রত্নোপহার দ্বারা যুধিষ্ঠিরের সম্মান বৰ্দ্ধন করিয়াছিলেন। “কৌরবনন্দন মৎ-প্রদত্ত ধন দ্বারাই প্রারব্ধ যজ্ঞ সমাপন করুন’ মনে মনে এইরূপ স্পৰ্দ্ধা করিয়া সকল রাজারাই বিপুল ধন দান করিয়াছিলেন। সেনাপরিবৃত, বিমানপ্রতিম, বিচিত্র রত্ন ও অশেষপ্রকার সমৃদ্ধিসম্পন্ন, পরামরমণীয় প্রাসাদমালা, লোকদিগের বিমান, ব্রাহ্মণগণের গৃহ-সমূহ ও সমাগত রাজলোক দ্বারা মহাত্মা যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞের অতীব শোভা হইয়াছিল। তিনি ঐশ্বৰ্য্যে বরুণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যজ্ঞসমাপনকালে অকাতরে দক্ষিণা প্ৰদান করাতে ব্ৰাহ্মণেরা যৎপরোনাস্তি প্রীত হইলেন এবং অকপটে মুক্তকণ্ঠে রাজাকে আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিলেন। ঋষিগণ কর্তৃক সুচারুরূপে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হইলে দেবতারা পরিতৃপ্ত হইলেন। তৎপরে রাজা যুধিষ্ঠির সমাগত সকল ব্যক্তিকেই অভিলষিত বস্তু দ্বারা সন্তুষ্ট করিয়াছিলেন।
রাজসূয়িকপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।