৩৪৯. পরম্পরাক্রমে একনিষ্ঠ ভক্তির প্রকাশ

৩৪৯তম অধ্যায়

পরম্পরাক্রমে একনিষ্ঠ ভক্তির প্রকাশ

জনমেজয় কহিলেন, ভগবন্! নারায়ণ একান্তভক্তিপরায়ণ মহাত্মাদিগের প্রতি প্রসন্ন হইয়া স্বয়ং ইহাদিগের পূজা গ্রহণ করেন, ইহা সামান্য আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। আপনি পুণ্যপাপবিহীন নির্গুণ পুরুষদিগের পরমগতির বিষয় কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, কিন্তু তাঁহাদিগের সহিত একান্তভক্তদিগের বিশেষ বৈলক্ষণ্য লক্ষিত হইতেছে। যখন একান্তভক্তিপরায়ণ মহাত্মারা অনিরুদ্ধাদি দেবত্রয়ের উপাসনা না করিয়াও চতুর্থ মূর্ত্তি বাসুদেবে লীন হয়েন, তখন একান্তধৰ্ম্মের তুল্য শ্রেষ্ঠ ও নারায়ণের প্রিয় আর কিছুই নাই। যে ব্রাহ্মণগণ যতিধৰ্ম্ম আশ্রয় করেন এবং যাঁহারা নিরন্তর যথাবিধি বেদবেদাঙ্গ পাঠ করেন, তাঁহাদিগের অপেক্ষাও একান্তভক্ত মহাত্মাদিগের শ্রেষ্ঠ গতিলাভ হয়, সন্দেহ নাই। এক্ষণে কোন্ দেবতা বা কোন মহর্ষি এই ঐকান্তিক ধৰ্ম্ম কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, কোন সময়ে উহা উৎপন্ন হইল এবং কিরূপেই বা উহা প্রতিপালন করিতে হয়, এই সমুদয় বিষয়ে আমার সংশয় উপস্থিত হইতেছে; অতএব আপনি ঐ সংশয় অপনোদনপূর্ব্বক আমার চিত্ত পরিতৃপ্ত করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! কুরুপাণ্ডবীয় সংগ্রামে মহাবীর ধনঞ্জয় বিমনায়মান হইলে মহাত্মা মধুসূদন তাঁহার নিকট যেরূপ ঐকান্তিক ধৰ্ম্ম কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন, আমি পূর্ব্বে আপনার নিকট তাহা কহিয়াছি। ঐ ধৰ্ম্ম অতিশয় দুপ্রবেশ্য। মৃঢ়ব্যক্তিরা কখনই উহা পরিজ্ঞাত হইতে সমর্থ হয় না। সত্যযুগে ভগবান্ নারায়ণ সেই সামবেদসম্মত ঐকান্তিক ধৰ্ম্মের সৃষ্টি করিয়া তদবধি স্বয়ং উহা ধারণ করিয়া রহিয়াছেন। পূৰ্ব্বে ধর্ম্মপরায়ণ মহারাজ যুধিষ্ঠির ঋষিগণসমাজে বাসুদেব ও ভীষ্মের সমক্ষে তপোধনাগ্রগণ্য নারদকে এই ধৰ্ম্ম জিজ্ঞাসা করিলে তিনি তাঁহাকে যাহা যাহা কহিয়াছিলেন, আমার গুরু বেদব্যাস তৎসমুদয় আমার। নিকট কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। এক্ষণে আমি আপনার নিকট সেই সমুদয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন।

ব্রহ্মা ভগবান্ নারায়ণের ইচ্ছানুসারে তাঁহার মুখ হইতে বিনির্গত হইলে, তিনি আত্মকৃত ধৰ্ম্ম অবলম্বনপূৰ্ব্বক পিতৃগণ ও দেবগণের আরাধনা করিয়াছিলেন। পরে ফেনপনামক মহর্ষিগণ ঐ ধর্ম্মের অনুবর্ত্তী হয়েন। অনন্তর বৈখানসনামক মহর্ষিগণ ফেনপগণ হইতে উহা গ্রহণ করিয়া চন্দ্রকে প্রদান করেন। তৎপরে. ঐ ধৰ্ম্ম অন্তর্হিত হইয়া যায়।

অনন্তর ভগবান্ ব্রহ্মা নারায়ণের চক্ষু হইতে দ্বিতীয়বার দ্বারপরিগ্রহ করিয়া চন্দ্রের নিকট হইতে ঐ ধর্ম্ম গ্রহণপূৰ্ব্বক রুদ্রদেবকে প্রদান করেন। তৎপরে বালখিল্যনামক মহর্ষিগণ সেই যোগারূঢ় মহাদেব হইতে উহা প্রাপ্ত হয়েন। তৎপরে সেই সনাতন নারায়ণের মায়াপ্রভাবে উহা পুনরায় তিরোহিত হয়।

অনন্তর ব্রহ্মা ভগবান্ নারায়ণের বাক্য হইতে তৃতীয়বার জন্মগ্রহণ করিলে, নারায়ণ পুনৰ্ব্বার স্বয়ং ঐ ধৰ্ম্ম আবিষ্কৃত করিয়াছিলেন। মহর্ষি সুপর্ণ তপস্যা, নিয়ম ও দমগুণপ্রভাবে নারায়ণ হইতে ঐ ধর্ম্ম প্রাপ্ত হইয়া প্রত্যহ তিনবার উহা পাঠ করিতেন। এই নিমিত্ত পণ্ডিতেরা ঐ ধৰ্ম্মকে ত্রিসৌপর্ণ বলিয়া নির্দ্দেশ করেন। ঐ ধর্ম্ম ঋগ্বেদমধ্যে কীর্ত্তিত আছে। উহার অনুষ্ঠান করা নিতান্ত দুষ্কর। জগৎপ্রাণ মহর্ষি সুপর্ণ হইতে ঐ সনাতন ধর্ম্ম লাভ করিয়া বিঘসাশী মহর্ষিদিগকে এবং মহর্ষিগণ উহা মহাসমুদ্রকে প্রদান করেন। তৎপরে ঐ ধৰ্ম্ম পুনরায় ভগবান্ নারায়ণে লীন হইয়া যায়।

অতঃপর সনাতন নারায়ণের কর্ণ হইতে ব্রহ্মার জন্মগ্রহণের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন। দেবদেব ভগবান্ নারায়ণ জগতের সৃষ্টি করিতে ইচ্ছা করিয়া সৃষ্টিকর্ত্তার উৎপত্তির বিষয় চিন্তা করিতে লাগিলেন। তিনি চিন্তা করিতে করিতে সৰ্ব্বলোকপিতামহ ভগবান্ ব্রহ্মা তাঁহার কর্ণ হইতে বিনির্গত হইলেন। ভগবান্ নারায়ণ তাঁহাকে দর্শন করিয়া কহিলেন, “বৎস! আমি তোমাকে তেজ, বল ও সনাতন ধর্ম্ম প্রদান করিতেছি, তুমি ঐ সমুদয় গ্রহণপূৰ্ব্বক অঙ্গ হইতে প্রজাগণের সৃষ্টি করিয়া যথাবিধি সত্যযুগ সংস্থাপন কর। আমা হইতে অবশ্যই তোমার মঙ্গললাভ হইবে।”

ভগবান্ নারায়ণ এই কথা কহিলে ব্রহ্মা তাঁহাকে নমস্কার করিয়া তাঁহার বদনবিনিঃসৃত আরণ্যক বেদের সহিত সরহস্য শ্রেষ্ঠধর্ম্ম গ্রহণ করিলেন। তখন যুগধর্ম্মের বিধাতা বিষয়রাগবিহীন ভগবান্ ব্রহ্মা স্থাবরজঙ্গমপরিপূর্ণ সমুদয় লোকের সৃষ্টি করিলেন। ঐ সময় সৰ্ব্বপ্রথমে সত্যযুগ সমুপস্থিত ও সনাতন ধৰ্ম্ম সৰ্ব্বত্র প্রচারিত হইল। তখন ভগবান্ ব্রহ্মা সেই নারায়ণমুখনির্গত ধৰ্ম্মানুসারে ভগবান্ নারায়ণের আরাধনা করিয়া ঐ ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত মহাত্মা স্বারোচিষ মনুকে উহা অধ্যয়ন করাইলেন। অনন্তর মহাত্মা স্বারোচিষ মনুর পুত্র শঙ্খপদ পিতার নিকট ঐ ধৰ্ম্ম অধ্যয়ন করিয়া স্বীয় পুত্র দিক্‌পাল সুবর্ণাভকে উহা প্রদান করিলেন। পরিশেষে ত্রেতাযুগ উপস্থিত হইলে ঐ ধৰ্ম্ম পুনরায় অন্তর্হিত হইয়া গেল।

অনন্তর ভগবান্ ব্রহ্মা নারায়ণের নাসিকা হইতে জন্মগ্রহণ করিলে ভগবান নারায়ণ স্বয়ং তাঁহার নিকট ঐ ধৰ্ম্ম কীৰ্ত্তন করিলেন। তৎপরে ভগবান্ সনৎকুমার তাঁহার নিকট ঐ ধৰ্ম্ম অধ্যয়ন করিয়া প্রজাপতি বীরগণকে উহা অধ্যয়ন করাইলেন। তৎপরে মহাত্মা বীরণ স্বীয় পুত্র রৈভ্যকে ও রৈভ্য স্বীয় পুত্র দিক্‌পতি কুক্ষিনামাকে উহা প্রদান করিলেন। পরিশেষে সেই নারায়ণমুখোদ্ভুত ধৰ্ম্ম পুনরায় অন্তর্হিত হইয়া গেল।

অনন্তর ভগবান্ ব্রহ্মা অণ্ড হইতে জন্মগ্রহণ করিলে ভগবান নারায়ণের মুখ হইতে পুনৰ্ব্বার ঐ ধৰ্ম্ম সমুদ্ভূত হইল। সৰ্ব্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা বিধিপূৰ্ব্বক ঐ ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া বর্হিষদ্‌ নামক মহর্ষিগণকে অধ্যয়ন করাইলেন। তৎপরে জ্যেষ্ঠনামে বিখ্যাত এক সামবেদপারদর্শী ব্রাহ্মণ তাঁহাদিগের নিকট উহা লাভ করিয়া মহারাজ অবিকষ্পীকে প্রদান করিলেন। পরিশেষে ঐ সনাতন ধর্ম্ম পুনরায় তিরোহিত হইয়া গেল।

অনন্তর মহাত্মা, ব্রহ্মা সপ্তমবার নারায়ণের নাভিপদ্ম হইতে জন্মগ্রহণ করিলে, ভগবান্ নারায়ণ পুনরায় ঐ ধৰ্ম্ম তাঁহার নিকট কীৰ্ত্তন করিলেন। তৎপরে ব্রহ্মা দক্ষকে, দক্ষ স্বীয় জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র আদিত্যকে এবং আদিত্য বিবস্বানকে উহা অধ্যয়ন করাইলেন। অনন্তর ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে বিবস্বান্ মনুকে এবং মনু লোকপ্রতিষ্ঠার নিমিত্ত স্বীয় পুত্র ইক্ষ্বাকুকে ঐ ধৰ্ম্ম সমর্পণ করিলে, তিনি ত্রিলোকমধ্যে উহা প্রচার করিয়াছিলেন। তদবধি অদ্যাপি ঐ ধর্ম্ম বিদ্যমান রহিয়াছে। প্রলয়কাল উপস্থিত হইলে পুনরায় উহা নারায়ণে লীন হইবে।

হে মহারাজ! ইতিপূৰ্ব্বে হরিগীতায় যতিধৰ্ম্মকীৰ্ত্তনসময়ে তোমার নিকট সংক্ষেপে ঐকান্তিক ধর্ম্ম কীৰ্ত্তন করিয়াছি। দেবর্ষি নারদ নারায়ণের নিকট হইতে ঐ ঐকান্তিক ধর্ম্ম প্রাপ্ত হইয়াছেন। ঐ সনাতন সত্যধৰ্ম্মই সকলের আদি, দুর্জ্ঞেয় ও দুরনুষ্ঠেয়। কিন্তু সন্ন্যাসধৰ্ম্মাবলম্বীরাই উহা প্রতিপালন করিয়া থাকেন। ঐকান্তিক ধর্ম্ম ও অহিংসা ধর্ম্মযুক্ত সৎকৰ্ম্মপ্রভাবে নারায়ণ প্রীত হয়েন। ঐ মহাত্মাকে কেহ কেহ কেবল অনিরুদ্ধমূৰ্ত্তিতে, কেহ কেহ অনিরুদ্ধ, প্রদ্যুম্ন, সঙ্কৰ্ষণ ও বাসুদেবমূর্ত্তিতে উপাসনা করিয়া থাকেন। উনি মমতাপরিশূন্য, পরিপূর্ণ ও আত্মস্বরূপ। উনি পৃথিব্যাদি পঞ্চভূতের গুণসমুদয় অতিক্রম করিয়াছেন। উনি মন ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়স্বরূপ, উনি ত্রিলোকের নিয়ন্তা, সৃষ্টিকর্ত্তা, অকৰ্ত্তা, কার্য্য ও কারণ। উনি ইচ্ছানুসারে জগতের সহিত ক্রীড়া করিয়া থাকেন।

হে মহারাজ! এই আমি আচার্য্য বেদব্যাসের প্রসাদবলে তোমার নিকট দুর্জ্ঞেয় ঐকান্তিক ধৰ্ম্ম কীৰ্ত্তন করিলাম। ইহলোকে ঐকান্তিকধর্ম্মাবলম্বী ব্যক্তি নিতান্ত বিরল। এই জগৎ হিংসা পরিশূন্য, সৰ্ব্বভূতহিতৈষী, তত্ত্বজ্ঞানসম্পন্ন, ঐকান্তিকধর্ম্মাবলম্বী লোকসমুদয়ে পরিবৃত হইলেই সত্যযুগের আবির্ভাব হইবে এবং সমুদয় লোক নিষ্কাম কৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিবে। হে মহারাজ! মহর্ষি বেদব্যাস কৃষ্ণ ও ভীষ্মদেবের সন্নিধানে ঋষিগণের নিকট এইরূপে ঐকান্তিক ধৰ্ম্ম কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। তিনি পূৰ্ব্বে দেবর্ষি নারদের নিকট এই ধর্ম্মের উপদেশ প্রাপ্ত হয়েন। একান্ত অনুরক্ত নারায়ণপরায়ণ ব্যক্তিরা চরমে চন্দ্রসন্নিভ শ্বেতবর্ণ নারায়ণকে লাভ করিয়া থাকেন।

সাত্ত্বিকলোক মোক্ষলাভের অধিকারী

জনমেজয় কহিলেন, তপোধন! জ্ঞানী ব্যক্তিরা যে ধর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন, ব্রতপরায়ণ অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ কি নিমিত্ত তাহা অবলম্বন করেন না?

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! মনুষ্যের সাত্ত্বিকী, রাজসী ও তামসী এই তিন প্রকার প্রকৃতি বিদ্যমান রহিয়াছে। সাত্ত্বিক প্রকৃতিসম্পন্ন পুরুষগণই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিলাভে কৃতনিশ্চয় হইয়া থাকেন। উহারা সত্ত্বগুণপ্রভাবেই নারায়ণকে অবগত হইতে সমর্থ হন এবং মুক্তি যে নারায়ণের অনুগ্রহ ভিন্ন প্রাপ্ত হওয়া যায় না, তাহাও বিলক্ষণ জ্ঞাত হইয়া থাকেন; এই কারণেই তাঁহাদিগকে সাত্ত্বিক বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়। তাঁহারা নারায়ণপরায়ণ হইয়া একান্ত ভক্তিসহকারে তাঁহাকে নিরন্তর চিন্তা করিয়া আপনার সমস্ত অভীষ্ট প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। যেসকল যতি মোক্ষলাভার্থ পরাঙ্মুখ হইয়া থাকেন, নারায়ণই তাঁহাদিগের যোগক্ষেম বহন করেন। ভগবান্ নারায়ণ সানুগ্রহ দৃষ্টিপাতদ্বারা যাঁহাদের জন্মমরণদুঃখ নিবারণ করেন, তাঁহারাই সাত্ত্বিক এবং মুক্তিলাভে কৃতনিশ্চয় হয়েন। নারায়ণাত্মক মুক্তিলাভের নিমিত্ত একান্তমনে অনুষ্ঠিত ধৰ্ম্ম সাঙ্খ্য ও যোগধর্ম্মের অনুরূপ বলিয়া অভিহিত হয়। জ্ঞানবান্ মনুষ্য সেই ঐকান্তিক ধৰ্ম্মপ্রভাবে উৎকৃষ্ট গতিলাভ করিয়া থাকেন। পুরুষ জন্মমৃত্যুজনিত দুঃখভোগসময়ে নারায়ণকর্ত্তৃক কৃপাদৃষ্টিদ্বারা নিরীক্ষিত হইলেই জ্ঞানলাভ করে। তাঁহার কৃপাদৃষ্টি ব্যতীত কেহই আপনার ইচ্ছানুসারে জ্ঞানী হইতে পারে না। রাজসিক ও তামসিক প্রকৃতিকে বিমিশ্র প্রকৃতি বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়। রজ ও তমোগুণাবলম্বী প্রবৃত্তিধৰ্ম্মাক্রান্ত পুরুষকে বারংবার জন্মমৃত্যুজনিত দুঃখভোগ করিতে দেখিয়াও নারায়ণ তাহার প্রতি কৃপাদৃষ্টি বিতরণ করেন না, ঐরূপ ব্যক্তি লোকপিতামহ ব্রহ্মারই কৃপাপাত্র হইয়া থাকে। দেবতা ও ঋষিগণ সাত্ত্বিক অহঙ্কার হইতে জন্মগ্রহণপূৰ্ব্বক সত্ত্বগুণ হইতে অণুমাত্র পরিভ্রষ্ট হইলেও তাঁহাদিগকে অতিকষ্টে মুক্তিলাভ করিতে হয়।

জনমেজয় কহিলেন, তপোধন! সাত্ত্বিক অহঙ্কারমুক্ত পুরুষ কিরূপে পুরষোত্তমকে প্রাপ্ত হইতে পারে, আপনি তাহা কীৰ্ত্তন করুন।

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! পুরুষ যখন মোক্ষার্থী হইয়া সেই অহঙ্কারকে পরিত্যাগ করে, তখন সূক্ষ্মস্বরূপ সৃষ্টিস্থিতি প্রলয়কৰ্ত্তা পুরুষকে প্রাপ্ত হইয়া থাকে। সাঙ্খ্যযোগ, আরণ্যকবেদ ও পঞ্চরাত্র এই শাস্ত্ৰসমুদয় পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভূত। মনুষ্য এই সমস্ত শাস্ত্রের অনুসারে ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করিলেই তাহার ঐকান্তিক ধর্ম্মের অনুষ্ঠান করা হয়। সলিল প্রবাহ যেমন মহাসাগরে প্রবেশ করে, তদ্রূপ জ্ঞানসমুদয় সেই নারায়ণ হইতে উদ্ভূত হইয়া পুনরায় তাঁহাতেই প্রবিষ্ট হইয়া থাকে। হে মহারাজ! এই আমি আপনার নিকট ঐকান্তিক ধর্ম্মের বিষয় কীর্ত্তন করিলাম। এক্ষণে আপনি যদি সমর্থ হন, তাহা হইলে শাস্ত্রানুসারে উহার অনুষ্ঠান করুন। দেবর্ষি নারদ আমার গুরু ব্যাসের নিকট গৃহস্থ ও যতিদিগের অক্ষয় ঐকান্তিক ধৰ্ম্মের বিষয় এইরূপ কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। তৎপরে মহাত্মা ব্যাস ধৰ্ম্মনন্দন রাজা যুধিষ্ঠিরের, নিকট প্রীতিপূৰ্ব্বক এই বিষয় কীৰ্ত্তন করেন। এক্ষণে আমি আপনার নিকট ইহা কীৰ্ত্তন করিলাম। এই ধৰ্ম্ম অনুষ্ঠান করা নিতান্ত দুষ্কর, এই নিমিত্ত অনেকেই উহার অনুষ্ঠানে পরাঙ্মুখ হইয়া থাকে। মহাত্মা বাসুদেব এই জগতের সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়কৰ্ত্তা, তুমি তাঁহার প্রতিই একান্ত ভক্তি প্রদর্শন কর।