পাত্র মিত্রগণে রাজা দিলেন মেলানি।
অন্তঃপুরে দশরথ চলিল অমনি।।
সবার অধিক ভালবাসে কৈকেয়ীরে।
সেই হেতু আগে গেল কৈকেয়ীর ঘরে।।
অস্ত্র-সঞ্জীবনী বিদ্যা জানেন কৈকেয়ী।
দেখিল রাজার তনু অস্ত্রক্ষতময়ী।।
মন্ত্র পড়ি জল দিল ভূপতির গায়।
জ্বালা ব্যথা গেল দূরে শরীর জুড়ায়।।
মৃতদেহ যেন পুনঃ পাইল জীবন।
সুস্থ হৈয়া দশরথ বলেন তখন।।
হে কৈকেয়ি! প্রাণরক্ষা করিলে আমার।
তোমার সমান প্রিয়া কেহ নাহি আর।।
বর মাগি লহ যেবা অভীষ্ট তোমার।
কোন ধন ভাণ্ডরেতে নাহিক আমার।।
এত যদি বলিলেন রাজা দশরথ।
কৈকেয়ী কুঁজীকে কহে বাক্য অভিমত।।
মহারাজ আমারে চাহেন দিতে বর।
কি বর মাগিয়া লব তাঁহার গোচর।।
পৃষ্ঠে ভার কুঁজের নড়িতে নারে চেড়ী।
কুঁজ নহে তাহার সে বুদ্ধির চুপড়ি।।
কুঁজী বলে এক্ষণে নাহিক প্রয়োজন।
যখন হইবে ইচ্ছা বলিব তখন।।
কৈকেয়ী কুঁজীর বাক্য না করিল আন।
হাসিয়া কহিল রাণী রাজা বিদ্যমান।।
মহারাজ আজি বরে নাহি প্রয়োজন।
যখন ঘটিবে কার্য্য মাগিব তখন।।
আমার সত্যেতে বন্দী রহিলা গোসাঞি।
প্রয়োজন অনুসারে বর যেন পাই।।
নৃপতি বলেন দিব যাহা চাবে দান।
আছুক অন্যের কাজ দিব নিজ প্রাণ।।
কৈকেয়ীর কপটেতে দেবগণ হাসে।
না জানিয়া মৃগ যেন বন্দী হৈল ফাঁসে।।
এ সত্য পালিতে রাম যাইবেন বন।
বিরিঞ্চি বলেন তবে মরিল রাবণ।।
রাজ্য করে দশরথ হরিষত মন।
করেন পুত্রের তুল্য প্রজার পালন।।
যখন যা হবে তাহা দৈবে সব করে।
হইল রাজার ব্রণ নখের ভিতরে।।
কৃত্তিবাস কহে কথা অমৃত সমান।
রামনাম বিনা তাঁর মুখে নাহি আন।।