৩২৫. শুকের জন্ম—জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মোক্ষাভিলাষ

৩২৫তম অধ্যায়

শুকের জন্ম—জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মোক্ষাভিলাষ

ভীষ্ম কহিলেন, “হে যুধিষ্ঠির! দেবদেব মহাদেব এইরূপ বর প্রদান করিলে সত্যবতীতনয় পরম পরিতুষ্ট হইয়া হোমকার্য্য সম্পাদন মানসে অরণীকাষ্ঠদ্বয় গ্রহণপূর্ব্বক অগ্নৎপাদনের নিমিত্ত ঘর্ষণ করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে ঘৃতাচীনামে এক পরমরূপবতী অপ্সরা তাঁহার দৃষ্টিপথে নিপতিত হইল। তাহাকে দর্শন করিবামাত্র মহর্ষি সহসা কামশরে নিতান্ত বিমোহিত হইলেন। ঘৃতাচী তাঁহাকে কামার্ত্ত দেখিয়া শুকপক্ষিণীর রূপ ধারণপূর্ব্বক তাঁহার সম্মুখে সমুপস্থিত হইল। তখন কামাসক্ত মহর্ষি বেদব্যাস তাহাকে অন্য রূপ ধারণ করিতে দেখিয়া বিশেষরূপ ধৈৰ্য্যাবলম্বনপূর্ব্বক কামনিবারণের চেষ্টায় অরণীমন্থন করিতে লাগিলেন। কিন্তু কোনরূপেই চঞ্চলচিত্তকে সুস্থির করিতে পারিলেন না। ঐ সময় ভবিতব্যতার অবশ্যম্ভাবিত্বনিবন্ধন সেই কাষ্ঠমধ্যে সহসা তাঁহার শুক্ৰ নিপতিত হইল। মহর্ষি বেদব্যাস তদ্দর্শনে কিছুমাত্র শঙ্কিত না হইয়া পূর্ব্বের ন্যায় কাষ্ঠঘর্ষণ করিতে লাগিলেন। কাষ্ঠঘর্ষণনিবন্ধন তত্ৰত্য শুক্র বারংবার বিলোড়িত হইল এবং অচিরাৎ তাহা হইতে তেজঃপুঞ্জকলেবর ব্রহ্মর্ষি শুকদেব বিনির্গত হইয়া যজ্ঞস্থলে প্রজ্বলিত পাবকের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন। শুক্র বিলোড়নদ্বারা তাঁহার জন্ম হইয়াছিল বলিয়া তিনি শুকনামে বিখ্যাত হইয়াছেন। শুকদেব জন্মগ্রহণ করিবামাত্র ভগবতী ভাগীরথী মূর্ত্তিমতী হইয়া তথায় আগমনপূৰ্ব্বক সলিলদ্বারা তাঁহার স্নানক্রিয়া সম্পাদন করিলেন। ঐ সময় সেই মহাত্মার নিমিত্ত আকাশ হইতে দণ্ড ও কৃষ্ণাজিন ভূতলে নিপতিত হইল। তুম্বুরু, নারদ, বিশ্বাবসু ও হাহা-হুহু প্রভৃতি গন্ধৰ্ব্বগণ তাঁহার স্তুতিগান, অপ্সরাগণ নৃত্য, বায়ু দিব্যকুসুমবর্ষণ ও দেবগণ দুন্দুভিধ্বনি করিতে লাগিলেন। ইন্দ্রাদি দেবতা, লোকপাল, দেবর্ষিগণ ও ব্রহ্মর্ষিগণ তথায় আগমন করিলেন। ফলতঃ তৎকালে স্থাবর জঙ্গমাত্মক সমুদয় জগৎ আহ্বাদসাগরে নিমগ্ন হইল।

‘তখন দেবাদিদেব মহাদেব পার্ব্বতীর সহিত সমবেত হইয়া প্রীতমনে দেববিধানানুসারে শুকদেবের উপনয়নক্রিয়া সম্পাদন করিলেন। দেবরাজ প্রীতিযুক্ত হইয়া শুকদেবকে অপূৰ্ব্ব কমণ্ডলু ও দিব্যবস্ত্র প্রদান করিলেন। হংস, শতপত্র, সারস ও শুক প্রভৃতি পক্ষিগণ সহস্র সহস্রবার তাঁহাকে প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল।

“অতুল-তেজঃসম্পন্ন শুকদেব এইরূপে জন্মগ্রহণমাত্র ব্রহ্মচারী হইয়া সমাহিতচিত্তে কালযাপন করিতে লাগিলেন। সরহস্য বেদ ও বেদাঙ্গসমুদয় অচিরাৎ তাঁহার হৃদয়ে দেদীপ্যমান হইয়া উঠিল। তখন তিনি ধৰ্ম্মরক্ষার নিমিত্ত সুরগুরু বৃহস্পতির নিকট সমুপস্থিত হইয়া সমুদয় বেদবেদাঙ্গ, ইতিহাস ও রাজশাস্ত্র অধ্যয়নপূৰ্ব্বক তাঁহাকে দক্ষিণা প্রদান করিয়া তথা হইতে প্রত্যাগমন করিলেন এবং সেই বাল্যকালেই ব্রহ্মচর্য্যনিরত ও সমাহিত হইয়া কঠোর তপানুষ্ঠানপূৰ্ব্বক জ্ঞানবলে, সমুদয় মহর্ষি ও দেবতার মাননীয় হইয়া উঠিলেন। অনন্তর অতি অল্পদিন মধ্যেই তাঁহার আশ্রমসমুদয়ে নিতান্ত অশ্রদ্ধা ও মোক্ষধৰ্ম্ম অবলম্বনে একান্ত অভিলাষ জন্মিল।’