৩১৮. জীবাত্মার তনুত্যাগ-লক্ষণদ্বারা গতিনির্ণয়

৩১৮তম অধ্যায়

জীবাত্মার তনুত্যাগ-লক্ষণদ্বারা গতিনির্ণয়

“যাজ্ঞবল্ক্য কহিলেন, “হে রাজর্ষে! এক্ষণে মনুষ্যগণের মরণকালে জীবাত্মা শরীরের যে-যে স্থানদ্বারা বহির্গত হইলে যে যে গতিলাভ হয়, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। জীবাত্মা চরণদ্বারা দেহ হইতে বহির্গত হইলে বিষ্ণুলোক, জঙঘাদ্বারা নির্গত হইলে অষ্টবসুর লোক, জানুদ্বারা নির্গত হইলে সাধ্যগণের লোক, পায়ুদ্বারা নির্গত হইলে মৈত্রলোক, জঘনদ্বারা নির্গত হইলে মনুষ্যলোক, ঊরুদ্বারা নির্গত হইলে প্রজাপতিলোক, পার্শ্বদ্বারা নির্গত হইলে মরুল্লোক, নাসাপথদ্বারা নির্গত হইলে চন্দ্রলোক, বাহুদ্বারা নির্গত হইলে ইন্দ্রলোক, বক্ষঃস্থলদ্বারা নির্গত হইলে রুদ্রলোক, গ্রীবাদ্বারা নির্গত হইলে মহর্ষিদিগের লোক, মুখদ্বারা নির্গত হইলে বিশ্বদেবগণের লোক, শ্ৰোত্ৰদ্বারা নির্গত হইলে দিগ্‌দেবতাগণের লোক, ঘ্রাণদ্বারা নির্গত হইলে বায়ুলোক, নেত্ৰদ্বারা নির্গত হইলে সূর্য্যলোক, ভ্রূদ্বারা নির্গত হইলে অশ্বিনীকুমারের লোক, ললাটদ্বারা নির্গত হইলে পিতৃলোক এবং ব্রহ্মরন্ধ্রদ্বারা নির্গত হইলে ব্ৰহ্মলোক লাভ হইয়া থাকে।

আসন্ন-মৃত্যুর লক্ষণ

‘এই আমি তোমার নিকট মৃতব্যক্তিদিগের যে-যে স্থান হইতে জীবাত্মা বহির্গত হইলে যে-যে গতিলাভ হয়, তাহা কীৰ্ত্তন করিলাম। অতঃপর আসন্ন-মৃত্যুর চিহ্নসমুদয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।

‘যাহারা অরুন্ধতী, ধ্রুবতারা এবং অন্যের নেত্রতারামধ্যে আত্মপ্রতিবিম্ব দেখিতে না পায় এবং যাহারা পূর্ণচন্দ্র ও দীপের প্রভা দক্ষিণাংশে খণ্ডিত দর্শন করে, তাহারা একবৎসরমাত্র জীবিত থাকে। যাহারা লাবণ্যশালী হইয়া লাবণ্যবিহীন, জ্ঞানবান্ হইয়া অজ্ঞান, অজ্ঞান হইয়া জ্ঞানবান ও শ্যামবর্ণ হইয়া ধূসরবর্ণ হয় এবং যাহারা দেবগণকে অবজ্ঞা ও ব্রাহ্মণের সহিত বিরোধ করে, তাহাদিগের পরমায়ু ছয় মাসের অধিক থাকে না। যাহারা চন্দ্র ও সূর্য্যকে ঊর্ণনাভচক্রের ন্যায় ছিদ্রযুক্ত দর্শন করে এবং দেবালয়স্থ সুরভি বস্তুসমুদয়ের সৌরভ যাহাদিগের শবগন্ধের ন্যায় বোধ হয়, সপ্তাহের মধ্যে তাহাদিগের আয়ুঃশেষ হইয়া যায়। যাহাদিগের নাসাকর্ণ অবনত, দন্ত বিবর্ণ, জ্ঞান বিলুপ্ত, সমুদয় অঙ্গ উষ্মরহিত, অকস্মাৎ বামচক্ষু হইতে জলধারা ক্ষরিত ও মস্তক হইতে ধূম উত্থিত হয়, তাহাদিগকে সদ্যই মৃত্যুমুখে নিপতিত হইতে হয়।

‘আত্মতত্ত্বজ্ঞ মহাত্মারা এইরূপ মৃত্যুলক্ষণসমুদয় পরিজ্ঞাত হইয়া দিবানিশি পরমাত্মার সহিত জীবাত্মার সংযোগপূর্ব্বক মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত প্রতীক্ষা করিয়া থাকিবেন। যদি তাহাদের মৃত্যু ইচ্ছা না থাকে, তাহা হইলে তাহারা গন্ধাদি-বিষয়সমুদয় পরিত্যাগ ও সাঙ্খ্যতত্ত্ব অবলম্বনপূৰ্ব্বক যোগবলে পরমাত্মাকে নিৰ্ম্মল ও মৃত্যুকে পরাজিত করিয়া পরিশেষে প্রাকৃত ব্যক্তিদিগের নিতান্ত দুর্ল্লভ অক্ষয় সনাতন ব্রহ্মপদ লাভ করিবেন।”