৩১৪. অধ্যাত্মাদি ত্রিবিধ ভাববিবরণ

৩১৪তম অধ্যায়

অধ্যাত্মাদি ত্রিবিধ ভাববিবরণ

“যাজ্ঞবল্ক্য কহিলেন, ‘চরণেন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, গমন উহার অধিভূত ও বিষ্ণু উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। পায়ু ইন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, মলত্যাগ উহার অধিভূত ও মিত্র উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। উপস্থেন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, আনন্দ উহার অধিভূত এবং প্রজাপতি উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। করদ্বয় অধ্যাত্ম, কাৰ্য্য উহার অধিভূত এবং ইন্দ্র উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। বাগিন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, কর্ত্তব্যবিষয় উহার অধিভূত এবং বহ্নি উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। দর্শনেন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, রূপ উহার অধিভূত এবং দিক্‌সমুদয় উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। রসনেন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, রস উহার অধিভূত এবং সলিল উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। ঘ্রাণেন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, গন্ধ উহার অধিভূত এবং পৃথিবী উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। গিন্দ্রিয় অধ্যাত্ম, স্পর্শ উহার অধিভূত এবং বায়ু উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। মন অধ্যাত্ম, মন্তব্য বিষয় উহার অধিভূত এবং চন্দ্র উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। অহঙ্কার অধ্যাত্ম, অভিমান উহার অধিভূত এবং বুদ্ধি উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। বুদ্ধি অধ্যাত্ম, জ্ঞাতব্য বিষয় উহার অধিভূত এবং আত্মা উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।

‘হে মহারাজ! এই আমি তোমার নিকট আনুপূর্ব্বিক ইন্দ্রিয়, অধিভূত ও অধিষ্ঠাত্রী দেবতার বিষয় সমগ্র কীৰ্ত্তন করিলাম। প্রকৃতি নানা প্রপঞ্চ বিস্তার করিবার নিমিত্ত স্বেচ্ছানুসারে বারংবার গুণসমুদয়ের সৃষ্টি করিতেছে। মনুষ্যেরা যেমন একটিমাত্র প্রদীপ হইতে অসংখ্য প্রদীপ প্রজ্বলিত করে, সেইরূপ প্রকৃতি পুরুষের এক এক গুণ হইতে নানাপ্রকার গুণের সৃষ্টি করিয়া থাকে। সত্ত্ব, আনন্দ, ঐশ্বৰ্য্য, প্রীতি, প্রকাশিত্ব [প্রকাশস্বভাব], সুখ, বিশুদ্ধতা, আরোগ্য, সন্তোষ, শ্রদ্ধা, অকৃপণতা, অক্রোধ, ক্ষমা, ধৈৰ্য্য, অহিংসা, সমদর্শিতা, সত্য, আনৃণ্য [অবাধ্য-বাধকতা], মৃদুতা, লজ্জা, অচপলতা, ঋজুতা, আচার, অভ্রান্ততা, ইষ্টানিষ্টবিয়োগে নিরপেক্ষতা [মিত্রের বিয়োগে দুঃখবোধ ও শত্রুর বিয়োগে সুখানুভবে উদাসীনতা], লোকরক্ষা, অলুব্ধতা, পরোপজীবনার্থ [অপরের জীবনরক্ষার জন্য] অর্থোপার্জ্জন ও সৰ্ব্বভূতে দয়া এই কয়েকটি গুণ হইতে উদ্ভূত হয়। রূপ, ঐশ্বর্য্য বিগ্রহ, বৈরাগ্যভাব, অকরুণতা, সুখদুঃখভোগ, পরনিন্দায় অনুরাগ, বিবাদে প্রবৃত্তি, অহঙ্কার, অসম্মান, চিন্তা, শত্রুতা, পরিতাপ, চৌর্য্যবৃত্তি, নির্ল্লজ্জতা, অসরলতা, ভেদজ্ঞান, পরুষতা, কাম, ক্রোধ, মদ, দর্প, দ্বেষ ও অতিবাদ, এই কয়েকটি গুণ রজোগুণ হইতে সম্ভূত হয়। মোহ, অপ্রকাশ, মরণ, ক্রোধ, অনবধানতা, বিবিধ ভক্ষ্যদ্রব্যে অভিরুচি, পানভোজনে অপরিতৃপ্তি, উৎকৃষ্ট গন্ধ, বস্ত্র, শয্যা, আসন, বিহার, দিবানিদ্রা ও পরনিন্দায় অনুরাগ, অজ্ঞাত নৃত্য-গীতবাদ্যে অভিরুচি ও ধর্ম্মের প্রতি দ্বেষ, এই কয়েকটি গুণ তমোগুণসম্ভূত।’ ”