৩১৩তম অধ্যায়
সংহার বিবরণ
“যাজ্ঞবল্ক্য কহিলেন, ‘হে মহারাজ! এই আমি তোমার নিকট আনুপূর্ব্বিক সৃষ্টি ও কালসংখ্যা কীৰ্ত্তন করিলাম, সম্প্রতি সংহারবিষয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। অনাদিনিধন ভগবান্ প্রজাপতি বারংবার জীবগণের সৃষ্টি ও সংহার করিয়া থাকেন। সৃষ্টির সময় অতীত হইয়া প্রলয়কাল উপস্থিত হইলে তিনি জগতের সংহারার্থ মহারুদ্রকে প্রেরণ করেন; সেই রুদ্রদেব সূৰ্য্যরূপী হইয়া আপনাকে দ্বাদশ অংশে বিভক্ত করিয়া প্রজ্বলিত হুতাশনের ন্যায় স্বীয় তেজঃপ্রভাবে জরায়ুজ, অণ্ডজ, স্বেদজ ও উদ্ভিজ্জ এই চারিপ্রকার প্রাণীকে দগ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হয়েন। তাঁহার তেজের উন্মেষ হইবামাত্র প্রথমতঃ স্থাবরজঙ্গমাত্মক সমুদয় পদার্থ বিনষ্ট হইয়া যায়। ঐ সময় পৃথিবী কুৰ্ম্মপৃষ্ঠের সদৃশ হইয়া উঠে। তখন অমিতপরাক্রম রুদ্রদেব অনতিবিলম্বে সলিলসঞ্চারদ্বারা পৃথিবীকে দ্রবীভূত করিয়া ফেলেন। তৎপরে কালাগ্নিপ্রভাবে ঐ সলিলরাশি শুষ্ক হইয়া যায়। সলিল শুষ্ক হইলে ঐ কালাগ্নি ভয়ানকরূপে প্রজ্বলিত হইয়া উঠে। তখন অষ্টমূৰ্ত্তিধারী বলবান বায়ু জীবের উষ্মাস্বরূপ সেই প্রজ্বলিত পাবককে গ্রাস করিয়া চতুর্দ্দিকে বিচরণ করিতে থাকে। পরে আকাশ ভীষণ বায়ুকে গ্রাস করিয়া ফেলে। তদনন্তর মন আকাশকে, অহঙ্কার মনকে, মহত্তত্ত্ব অহঙ্কারকে এবং জগদীশ্বর ঐ অনুপম মহত্তত্ত্বকে গ্রাস করেন। জগদীশ্বর অণিমাদি-গুণসম্পন্ন, ত্রিকালজ্ঞ, জ্যোতির্ম্ময় ও অব্যয়। উঁহার চতুর্দ্দিকেই হস্ত, পদ, নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু, মস্তক ও মুখ বিরাজিত রহিয়াছে। উনি সমুদয় সংসারে ব্যাপ্ত হইয়া অবস্থান করিতেছেন। উনি সর্ব্বান্তৰ্য্যামী অন্তরাত্মা। মহত্তত্ত্বের নাশের পর সমুদয় পদার্থ উহাতেই বিলীন হয়। উহার হ্রাস, বৃদ্ধি বা ক্ষয় নাই। উনি ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমানের স্রষ্টা। উহাতে দোষের লেশমাত্রও নাই।
‘হে মহারাজ! এই আমি তোমার নিকট সংহারের বিষয় আনুপূর্ব্বিক কীৰ্ত্তন করিলাম, এক্ষণে অধ্যাত্ম, অধিভূত ও অধিষ্ঠাত্রী দেবতাসকলের বিষয় কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।”