৩১০. আরণেয়পর্ব্বাধ্যায়–মৃগপহৃত অরণীসংগ্ৰহাৰ্থ পাণ্ডবসমীপে তপস্বীর আগমন

৩১০তম অধ্যায়

আরণেয়পর্ব্বাধ্যায়–মৃগপহৃত অরণীসংগ্ৰহাৰ্থ পাণ্ডবসমীপে তপস্বীর আগমন

জনমেজয় কহিলেন, হে তপোধন! প্ৰিয়তমা ভাৰ্য্যা দ্রুপদদুহিতা অপহৃত হইলে পাণ্ডবগণ যৎপরোনাস্তি ক্লেশসহকারে পুনরায় তাঁহাকে প্রাপ্ত হইয়া কি কি কাৰ্য্য করিয়াছিলেন?

বৈশম্পায়ন কহিলেন, নরনাথ! রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে অপহৃতা দ্রুপদসূতাকে অতিমাত্র ক্লেশে ফলমূলসনাথ বিচিত্ৰ পাদপরাজি-বিরাজিত দ্বৈতবনে বাস করিতে আহার করিয়া ব্রাহ্মণের নিমিত্ত পরিণামে সুখস্কর অশেষ ক্লেশপরম্পরা সহ্য করিতেন। হে রাজন! তাঁহারা তথায় বাস করিয়া যে-সকল ভাবিসুখপ্ৰসবিনী ক্লেশপরম্পরা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তাহা শ্রবণ করুন।

কোন তপস্বী ব্রাহ্মণের অরণীসনাথ মন্ত্ৰদণ্ড বৃক্ষে বদ্ধ ছিল; এক মৃগ সহসা আসিয়া তথায় গাত্ৰঘর্ষণ করাতে উহার শৃঙ্গে সেই অরণীসনাথ মন্ত্ৰদণ্ড সংসক্ত হইবামাত্ৰ মৃগ উহা লইয়া মহাবেগে আশ্রম হইতে পলায়ন করিল। ব্রাহ্মণ অগ্নিহোত্র অপহৃত হইল দেখিয়া তাহা প্ৰাপ্ত হইবার নিমিত্ত ত্বরিতপদে অজাতশত্রু সমীপে আগমনপূর্ব্বক কহিলেন, “হে রাজন! আমার অরণীসংযুক্ত মন্থনদণ্ড এক বনস্পতিতে বদ্ধ ছিল, কোন মৃগ আসিয়া তথায় গাত্ৰঘর্ষণ করাতে তাহার শৃঙ্গে উহা সংস্পষ্ট হইবামাত্র সে তাহা লইয়া মহাবেগে আশ্রম হইতে পলায়ন করিয়াছে। হে পাণ্ডবগণ! আপনারা ত্বরায় তাহার পদচিহ্নানুসারে গমন করিয়া সেই অগ্নিহোত্ৰ বিনষ্ট হইতে না হইতেই আনয়ন করুন।”

রাজা যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণের বাক্য শ্রবণ করিয়া নিতান্ত সন্তপ্ত হইলেন এবং ভ্রাতৃগণের সহিত ধনুগ্রহণপূর্ব্বক বদ্ধপরিকর হইয়া ব্ৰাহ্মণের নিমিত্ত সাতিশয় যত্নসহকারে মৃগের অনুগমন করিলেন। তাঁহারা অনতিদূরে সেই মৃগকে অবলোকন করিয়া কর্ণি, নালীক ও নারাচ-সকল নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন বটে, কিন্তু কোনমতে তাহাকে বিদ্ধ করিতে সমর্থ হইলেন না। পরে সেই মৃগ তাঁহাদের দৃষ্টিপথের বহির্ভূত হইলে তাঁহারা ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হইয়া গহনবন-মধ্যে প্রবেশ করিয়া সুশীতলচ্ছায়াসম্পন্ন এক ন্যগ্রোধ পাদপের মূলে উপবেশন করিলেন।

সকলে উপবিষ্ট হইলে নকুল দুঃখিত হইয়া অমৰ্ষভরে জ্যেষ্ঠভ্রাতাকে কহিলেন, “হে রাজন! আমাদিগের বংশে কখন আলস্যবশতঃ ধর্ম্ম বা অর্থলোপ হয় নাই; তবে কি নিমিত্ত আমরা সকলের শ্রেষ্ঠ হইয়াও ঈদৃশ ক্লেশ প্রাপ্ত হইতেছি?”