৩০৮. চম্পানগরীস্থ অধিরথকর্ত্তৃক মঞ্জুষামধ্যস্থিত শিশুগ্ৰহণ

৩০৮তম অধ্যায়

চম্পানগরীস্থ অধিরথকর্ত্তৃক মঞ্জুষামধ্যস্থিত শিশুগ্ৰহণ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, এই সময়ে ধৃতরাষ্ট্রের সখা অধিরাথনামক সূত নিজ পত্নী রাধা-সমভিব্যাহারে ভাগীরথীর তীরে গমন করিয়াছিলেন। রাধা আলোকসামান্য রূপলাবণ্যসম্পন্ন ছিলেন, কিন্তু দৈবদুর্ব্বিপাকবশতঃ বহুতর যত্ন করিয়াও পুত্রলাভ করিতে সমর্থ হয়েন নাই। তিনি তথায় সমুপস্থিত হইয়া দেখিলেন, এক মঞ্জুষা যাদৃচ্ছাক্রমে প্লবমান হইয়া তরঙ্গদ্বারা ক্ৰমে ক্রমে তাঁহার সমীপবর্ত্তী হইল। ঐ মঞ্জুষা দূর্ব্বা, কুঙ্কুম প্রভৃতি রক্ষাদ্রব্যে বিভূষিত। বরবর্ণিনী রাধা তদ্দর্শনে কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া উহা ধারণপূর্ব্বক স্বীয় ভর্ত্তৃসন্নিধানে নিবেদন করিলেন। অধিরথ পত্নীর বচন শ্রবণে জল হইতে মঞ্জুষা উদ্ধার করিয়া যন্ত্রদ্বারা অতি সাবধানে উদঘাটনপূর্ব্বক দেখিলেন, উহার মধ্যে তরুণারুণসন্নিভ হোম-বর্ম্মধারী কুণ্ডলবিভূষিত এক অচিরপ্রসূত [সদ্যোজাত] শিশু শয়ান রহিয়াছে। সূত তদর্শনে বিস্ময়োৎফুল্ললোচনে বালককে ক্রোড়ে লইয়া ভাৰ্য্যাকে কহিলেন, “প্রিয়ে! আমি এরূপ অদ্ভুত রূপ কদাপি নেত্রগোচর করি নাই; নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, এই বালকটি দেবপুত্র; দেবগণ আমাকে অনপত্য দেখিয়া অনুগ্রহপূর্ব্বক এই পুত্রটি প্রদান করিয়াছেন।” অধিরথ এই কথা বলিয়া স্বীয় ভাৰ্য্যা রাধাকে সেই পুত্রটি প্রদান করিলেন। রাধা সেই কমলগৰ্ভ-সন্নিভ বালককে লইয়া গৃহে আগমনপূর্ব্বক বিধিমতে ভরণপোষণ করিতে আরম্ভ করিলেন; শিশুও ক্ৰমে ক্রমে পরিবর্দ্ধিত হইতে লাগিল। তাহাকে গৃহে আনয়ন করিলে পর অধিরথের আর কতকগুলি ঔরসপুত্ৰ সমুৎপন্ন হইল।

তৎপরে ব্রাহ্মণগণ সমানীত সেই বালককে বসুরূপ কবচ ও কুণ্ডলসমবেত দেখিয়া উহার নাম বসুসেন রাখিলেন। হে মহারাজ! এইরূপে ঐ বালক বসুসেননামে বিখ্যাত সূতপুত্ৰ হইলেন। উহার অপর নাম বৃষ, বসুসেন অঙ্গদেশে দিন দিন বৰ্দ্ধিত ও মহাবলপরাক্রান্ত হইতে লাগিলেন। কুন্তী চরপ্রমুখাৎ স্বীয় পুত্রের সমুদয় বৃত্তান্ত অবগত হইলেন।

অধিরথকর্ত্তৃক বয়ঃপ্ৰাপ্ত পুত্র কর্ণের অন্ত্রশিক্ষার্থ হস্তিনায় প্রেরণ

সূত অধিরথ পুত্র বসুসেনকে প্রাপ্তবয়স্ক নিরীক্ষণ করিয়া হস্তিনাপুরে প্রেরণ করিলেন। বসুসেন তথায় দ্রোণ, কৃপ ও পরশুরামের নিকট চতুর্ব্বিধ অস্ত্ৰ শিক্ষা করিয়া লোকমধ্যে মহাধনুৰ্দ্ধর বলিয়া বিখ্যাত হইলেন। তিনি দুৰ্য্যোধনের সহিত মিলিত হইয়া সতত পাণ্ডবগণের অহিতচেষ্টা করিতে লাগিলেন। অর্জ্জুনের সহিত যুদ্ধ করিতে তাঁহার একান্ত অভিলাষ ছিল। তাঁহারা পরস্পর বলবীৰ্য্য ও অস্ত্ৰ-বিদ্যাবিষয়ে সতত স্পৰ্দ্ধা করিতেন। হে মহারাজ! কর্ণ যে দিনকরের ঔরসে ও কুন্তীর গর্ভে সম্ভূত হইয়া সূতকুলে প্রতিপালিত হইয়াছেন, ইহা লোকমধ্যে অপ্রকাশিত ছিল; তথাপি রাজা যুধিষ্ঠির সূতকুলস্থিত কর্ণকে সহজ কবচ ও কুণ্ডলধারী নিরীক্ষণ করিয়া, সমরে অবধ্য বিবেচনাপূর্ব্বক মনে মনে নিতান্ত পরিতৃপ্ত হইয়াছিলেন।

যখন মহাবীর কৰ্ণ মধ্যাহ্নসময়ে সলিল হইতে সমুত্থিত হইয়া সবিতৃদেবের স্তব করিতেন, ঐ সময় ব্রাহ্মণগণ ধনলাভার্থ তাঁহার নিকট আগমন করিলে, যিনি যাহা যজ্ঞা করিতেন, তিনি তাঁহাকে তৎক্ষণে তাঁহাই প্রদান করিতেন। ফলতঃ ব্ৰাহ্মণকে কোন বস্তুই তাঁহার অদেয় ছিল না।

সুররাজ শতক্ৰতু ঐ বৃত্তান্ত অবগত হইয়া উপযুক্ত সময়ে তাঁহার সমীপে আগমনপূর্ব্বক ভিক্ষা প্রার্থনা করিলে মহাত্মা কৰ্ণ তাঁহাকে স্বাগত প্রশ্ন করিলেন।