৩০০তম অধ্যায়
কর্ণের জীবনরূপ কুণ্ডলদানে সূৰ্য্যের নিষেধ
সূৰ্য্য কহিলেন, “হে কৰ্ণ! তুমি পুত্র, কলাত্র, পিতামাতা, বন্ধুবৰ্গ ও আপনার অপ্রিয় কাৰ্য্যানুষ্ঠান করিও না। প্রাণীগণ প্রাণ রক্ষা করিয়া অক্ষয় যশ ও অনন্ত কীর্ত্তি প্রার্থনা করিয়া থাকে, কিন্তু তুমি প্রাণের অপেক্ষা না করিয়া শাশ্বতী কীর্ত্তিলাভে লোলুপ হইয়াছ, এক্ষণে নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, সেই কীর্ত্তিই তোমার প্ৰাণ হরণ করিয়া পলায়ন করিবে। পিতা, মাতা, পুত্র, পৌত্র ও অন্যান্য বান্ধবগণ জীবিত ব্যক্তির উদ্দেশ্য সংসাধন করিয়া থাকেন, অধিক কি, জীবিত লোকের পৌরুষবলে ভূপালেরাও তাঁহার কার্য্যানুষ্ঠানে উদ্যত হয়েন।
মনুষ্য জীবিতাবস্থাতেই মহীয়সী কীর্ত্তি-লাভে সমধিক সন্তোষ প্রাপ্ত হইয়া থাকে। মৃতব্যক্তির কীর্ত্তিকলাপ নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর। দেখ, পরলোকগত ব্যক্তি আপনার কীর্ত্তির বিষয় কিছুই অবগত হইতে পারে না, কিন্তু জীবিত ব্যক্তি উহা ভোগ করে। হে বৎস! তুমি আমার নিতান্ত ভক্ত বলিয়াই তোমার হিতাভিলাষে আমি বারংবার এইরূপ কহিতেছি। যে ব্যক্তি পরমভক্তিসহকারে আমার আরাধনা করে, আমি তাহাকে সতত রক্ষা করিয়া থাকি। হে বৎস! তোমার আস্থাদর্শনে তোমার প্রতি একান্ত অনুরক্ত হইয়াছি, অতএব তুমি আমার আদেশ ও উপদেশ প্রতিপালন কর ।
“হে কর্ণ! এই বিষয়ে দৈবকৃত একটি রহস্য আছে, তাহা দেবগণেরও অগোচর, সুতরাং তুমি তাহার বিন্দু-বিসর্গও জানিতে পার নাই। আমি সেই রহস্য এক্ষণে ব্যক্ত করিব না, সমুচিত অবসর উপস্থিত হইলে তুমি অবশ্যই জ্ঞাত হইবে। হে বৎস! আমি বারংবার তোমাকে সতর্ক করিয়া দিতেছি, দেবরাজ ইন্দ্ৰ প্রার্থনা করিলে তুমি কদাচ কুণ্ডলদ্বয় প্রদান করিও না। নির্ম্মল নভোমণ্ডলে বিশাখানক্ষত্র দ্বারা মধ্যগত শশাঙ্কের ন্যায় তুমি এই রমণীয় কুণ্ডলযুগলদ্বারা অতিমাত্র শোভিত হইতেছ। অতএব তুমি কুণ্ডলার্থী সুররাজ ইন্দ্রকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করিবে। হে নরশ্রেষ্ঠ! তুমি যুক্তিসঙ্গত বহুবিধ মধুরবাক্যদ্বারা অবশ্যই তাঁহার কুণ্ডলস্পৃহা অপনীত করিতে পরিবে। ফলতঃ যে-কোন রূপে হউক, তাঁহার এই বুদ্ধি অপনোদন করা তোমার অতি কর্ত্তব্য।
“মহাবীর সব্যসাচী অর্জ্জুন নিয়তই তোমার প্রতি স্পর্দ্ধা করিয়া থাকে। সে তোমার সহিত যুদ্ধ করিবে কিন্তু তুমি কুণ্ডলসম্পন্ন থাকিলে ইন্দ্রের সাহায্যেও সে তোমাকে পরাজয় করিতে পরিবে না। অতএব তুমি যদি অর্জ্জুনকে সংগ্রামে জয় করিতে বাসনা কর, তাহা হইলে দেবরাজকে কদাচ কুণ্ডলদ্বয় প্ৰদান করিও না।”