২৯১তম অধ্যায়
মার্কণ্ডেয়-মুনিকর্ত্তৃক পাণ্ডবপ্ৰশংসা
মার্কেণ্ডেয় কহিলেন, “মহারাজ! পূর্ব্বকালে রাম এইরূপে বনবাসজনিত নিতান্ত দুঃসহ দুঃখপরম্পরা সহ্য করিয়াছিলেন। অতএব হে অরতিনিপাতন! তুমি আর শোক করিও না। তোমার কিছুমাত্র পাপ নাই; তুমি ক্ষত্ৰিয়কুলে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া প্রত্যক্ষ ফল বাহুবলের উপরেই সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া আছ। হে রাজন! তুমি যে পথ অবলম্বন করিয়াছ, ইন্দ্রাদি দেব এবং দানবগণও এই পথের পান্থ হইয়া থাকেন। দেবরাজ দেবগণের সহিত সমবেত হইয়া নিতান্ত দুৰ্দ্ধৰ্ষ বৃত্ৰ, নমুচি ও দীর্ঘজিহ্বা-রাক্ষসীকে সংহার করিয়াছেন। সহায়সম্পন্ন ব্যক্তির সকল বিষয়ই সম্পূর্ণরূপে সুসিদ্ধ হইয়া থাকে। মহাবীর অর্জ্জুন, ভীমপরাক্রম ভীমসেন এবং মাদ্রীতনয় নকুল ও সহদেব যাহার ভ্রাতা, তাঁহার কিছুই অজেয় নাই। তুমি এই সমুদয় সহায়সম্পন্ন অতএব কেন বিষণ্ন হইতেছ? এই মহাবীরগণ সমুদয় দেবতা সমভিব্যাহারে ইন্দ্রের সেনাদিগকে অনায়াসে পরাজয় করিতে পারেন। তুমি ইহাদিগের সাহায্যে সংগ্রামে শক্রগণকে অবশ্যই পরাজয় করিবে। দেখ, এই অরণ্যমধ্যে সিন্ধুদেশাধিপতি দুরাত্মা জয়দ্ৰথ বলপূর্ব্বক দ্ৰৌপদীকে হরণ করিয়াছিল; কিন্তু এই সমস্ত মহাত্মারা সিন্ধুপতিকে অনায়াসে পরাজয় ও বশীভূত করিয়া দ্রৌপদীকে প্রত্যাহরণ করিয়াছেন। রাঘব অসহায় হইয়া সংগ্রামে দশগ্ৰীবকে সংহারপূর্ব্বক সীতাদেবীকে প্রত্যাহরণ করেন; কেবল ভল্লুক ও বানরেরাই তাঁহার মিত্র ছিল। অতএব হে মহারাজ! এক্ষণে সমস্ত বিষয় পৰ্য্যালোচনা করিয়া শোকসন্তাপ পরিত্যাগ কর। তোমার সদৃশ মহাত্মারা কদাচ শোকের বশীভুত হয়েন না।”
বৈশম্পায়ন কহিলেন, ধীমান মার্কণ্ডেয় এইরূপ আশ্বাস-প্রদান করিলে পর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির শোক পরিহারপূর্ব্বক পুনরায় তাঁহাকে কহিতে লাগিলেন।
রামোপাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।