২৬৪তম অধ্যায়
কোটিককর্ত্তৃক দ্ৰৌপদীর পরিচয় জিজ্ঞাসা
কোটিকাস্য কহিলেন, “হে সুলোচনে! তুমি কে? শর্ব্বরীসময়ে পবনবিকম্পিত প্রজ্বলিত হুতাশন-শিখার ন্যায় কদম্বশাখা অবনত করিয়া একাকী আশ্রমপদে অবস্থান করিতেছ; তথাচ তোমার অন্তঃকরণে কিছুমাত্র শঙ্কা নাই। তোমার রূপ-লাবণ্য অলোকসামান্য; বোধহয়, তুমি দেবনারী, যক্ষী, দানবী, অসুরপত্নী, অপ্সরা, মূর্ত্তিমতী উরগরাজ-দুহিতা, বনদেবী বা নিশাচরী হইবে; কিংবা তোমায় মহারাজ বরুণ, যম বা সোমের সহধর্ম্মিণী অথবা ধনাধিপতি কুবেরের ভাৰ্য্যা বলিয়া বোধ হয়। তুমি যেন প্রজাপতি ব্ৰহ্মা, বিধাতা কশ্যপ, ভগবান রুদ্র অথবা ত্ৰিলোকনাথ বিষ্ণুর আলয় হইতে এ স্থানে উপস্থিত হইয়াছ। যাহা হউক আমি তোমার নিকট সম্যক অপরিচিত এবং তুমি যে কাহার আশ্রয় লইয়া এ স্থানে অবস্থিতি করিতেছ, তাহাও সবিশেষ অবগত নাহি। এক্ষণে আমি তোমার সম্মানবৰ্দ্ধনার্থ পিতা ও পতির নাম জিজ্ঞাসা করিতেছি; তুমি তাহা সবিশেষ নির্দেশ কর এবং এই অরণ্যমধ্যে একাকিনী কি করিতেছি, তাহাও প্ৰকাশ করিয়া বল।
“আমি সুরথ-রাজের আত্মজ, আমার নাম কোটিকাস্য। যিনি হুতাহুতাশনের ন্যায়। এই কাঞ্চনবিনির্ম্মিত রথে আরোহণ করিয়া আছেন, যিনি ত্রিগর্ত্তক্ষত্ৰিয় কুলিন্দাধিপতির আত্মজ, যিনি আমাদিগের অপেক্ষা ধনুর্ব্বেদে সম্যক জ্ঞানলাভ করিয়াছেন, সেই পর্ব্বতবাসনিরত আয়তলোচন ক্ষেমঙ্কর নামা মহাবীর তোমাকে নিরীক্ষণ করিতেছেন। আর ঐ যে প্রিয়দর্শন যুবা পষ্করিণীসন্নিধানে দণ্ডায়মান আছেন, উনি ইক্ষ্বাকুরাজ সুবলের তনয়, সৌবীরক-দেশীয় দ্বাদশ রাজকুমার লোহিতকায়-অশ্বযুক্ত রথে আরোহণপূর্ব্বক দীপ্তিশালী যজ্ঞীয় অনলের ন্যায়। ইহার অনুগমন করিয়া থাকেন এবং অঙ্গারক, কুঞ্জর, গুপ্তক, শত্ৰুঞ্জয়, সৃঞ্জয়, সুপ্রবৃদ্ধ, ভয়ঙ্কর, ভ্রমর, বরি, শূর, প্রতাপ, কুহন প্রভৃতি ষট্সহস্র রথী ও হস্তাশ্বরথাপদাতি-সকল ইঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিয়া থাকে। ইঁহার নাম সৌবীররাজ জয়দ্রথ; বোধহয়, তুমি লোকপরম্পরায় ইঁহার নাম অবশ্যই শ্রবণ করিয়া থাকিবে। বলাহক, অনীক, বিদারণ প্রভৃতি সৌবীরপ্রবীর যুবা ভ্রাতৃগণ রাজা জয়দ্রথের অনুগমন করিয়া থাকেন। ইনি দেবগণপরিবৃত দেবরাজ ইন্দ্রের ন্যায়। এই সকল সহায়সম্পন্ন হইয়া গমন করেন। হে সুকেশি! তুমি কাহার ভাৰ্য্যা ও কাহারই বা দুহিতা? আমরা এ বিষয়ে কিছুই বিদিত নহি, অতএব এক্ষণে উহা কীর্ত্তন কর।”