দ্বিশত যোজন অগ্নি ব্যাপিল গগন।
সীতা ভাবে, পুড়ি মৈল পবন-নন্দন।।
বিলাপ করেন সীতা মনে নাহি ক্ষমা।
তাঁহাকে বুঝায় তবে রাক্ষসী সরমা।।
বন্দী হইয়াচে সেই শুনেছ কাহিনী।
রাজারে সে বলিলে দুরক্ষর বাণী।।
লেজে অগ্নি দিল তার পোড়া বার তরে।
সেই অগ্নি দিল হনুমানে ঘরে ঘরে।।
হনুমান নাহি পোড়ে আছে সে কুশলে।
লঙ্কা পোড়াইয়া হনু এল হেনকালে।।
সীতার নিকটে গিয়া পবন-নন্দন।
ফেলিল লেজের অগ্নি সাগরে তৎক্ষণ।।
নির্ব্বাণ না হয় অগ্নি আরো জ্বলে জলে।
সীতার নিকটে হনু করযোড়ে বলে।।
মা জানকি, জান কি গো ইহার কারণ।
কেমনে নির্ব্বাণ হবে এই হুতাশন।।
সীতা বলে, মুখামৃত দেহ হনুমন্ত।
নির্ব্বাণ হইবে জ্বালা না রবে একান্ত।।
তবে হনু হবে অতি জ্বালায় কাতর।
জ্বলন্ত লাঙ্গুল পূরে মুখের ভিতর।।
নির্ব্বাণ হইল জ্বালা পুড়ে গেল মুখ।
সিন্ধুতীরে গেল হনু মনে পেয়ে দুখ।।
নিজ মুখ দেখে বীর মনাগুণে জ্বলে।
পুনরপি জানকীর কাছে আসি বলে।।
তব কার্য্যে আসি মাগে পুড়ে গেল মুখ।
জ্ঞাতিবর্গ হাসিবেক সে যে বড় দুখ।।
সীতা বলে জ্ঞাতিবর্গ কেহ নহে ছাড়া।
মম বাক্যে সকলের হবে মুখ পোড়া।।
হনুমান বলে, তবে আসি গো জননি।
আমি গেলে আসিবেন রাম রঘুমণি।।
শ্রীরামের হাতে ধ্বংস হবে দশানন।
দেখ গো জননি মম এই সে বচন।।
আসিবেন শুভক্ষণে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
হইবেন লঙ্কাজয়ী রাম নারায়ণ।।
ভয় না করিহ মাতা জনক-নন্দিনী।
এত বল প্রণমিল হয়ে যোড়পাণি।।
আনন্দিতা সীতা হনুমানের আশ্বাসে।
গাহিল সুন্দরাকাণ্ড কবি কৃত্তিবাসে।।