দশরথ মহারাজ জন্ম সূর্য্যবংশে।
সর্ব্বগুণেশ্বর রাজা সকলে প্রশংসে।।
রাজচক্রবর্ত্তী রাজা সবার উপর।
বিবাহ না হয় বয়ঃ ত্রিংশৎ বৎসর।।
দৈবের ঘটনে হল রাজার নির্ব্বন্ধ।
হেনকাল ঘটে তাঁর বিবাহ সম্বন্ধ।।
কোশলের রাজা যে কোশল দণ্ডধর।
কৌশল্যা নামেতে কন্যা আছে তাঁর ঘর।।
কৌশল্যার রূপ রাজা দেখিয়া ভাবিত।
কারে কন্যা দিব বলি রাজা সুচিন্তিত।।
পুরোহিত ব্রাহ্মণেরে কহিল সত্বর।
দশরথে আনিবারে যাহ দ্বিজবর।।
আমার সংবাদ কহ রাজার গোচরে।
কৌশল্যা নামেতে কন্যা সমর্পিব তাঁরে।।
তাঁহা বিনা কৌশল্যার বর নাহি দেখি।
দশরথে দিয়া কন্যা হইব যে সুখী।।
সংবাদ লইয়া বিপ্র চলিল সত্বর।
শীঘ্রগতি গেল দ্বিজ অযোধ্যা-নগর।।
ব্রাহ্মণে দেখিয়া রাজা করেন প্রণাম।
আশিস্ করিয়া কহে আপনার নাম।।
কৌশল দেশেতে ঘর রাজ-পুরোহিত।
তোমারে লইতে রাজা আমি নিয়োজিত।।
পরমা সুন্দরী কন্যা আছে তাঁর ঘরে।
কৌশল্যা নামেতে তাঁকে দিবেন তোমারে।।
তব তুল্য রূপ আর নাহি কোন দেশে।
তোমারে দিবেন তাঁরে মনের আবেশে।।
রাজার সংবাদ এই জানানু তোমারে।
বিবাহ করিতে চল কৌশলের ঘরে।।
এতেক শুনিয়া রাজা সংবাদ বচন।
পাত্রবর্গ লৈয়া রাজা করেন মন্ত্রণ।।
যাবৎ বিবাহ করি নাহি আসি ঘরে।
তাবৎ পালিহ রাজ্য অযোধ্যা-নগরে।।
রথ লৈয়া যোগাইল রথের সারথি।
সেনাগণ সঙ্গে রাজা চলে শীঘ্রগতি।।
নানা বাদ্য বাজে নাচে বিদ্যাধরীগণ।
তুরী ভেরী ঝাঁঝরী তা না যায় গণন।।
পাখোয়াজ পঞ্চাশ সহস্র পরিমাণ।
তিন কোটি শিঙ্গা বাজে অতি খরসান।।
বাজে শত কোটি শঙ্খ আর ঘন্টাজাল।
ভোরঙ্গ সহস্র কোটি শুনিতে রসাল।।
সহস্র সানাই বাজে যম্ফ কোটি কোটি।
ত্রিশ সহস্র দামামায় ঘন পড়ে কাঠি।।
তবল বিশাল বাদ্য বাজে জয়ঢোল।
মহাপ্রলয়ের কালে যেন গণ্ডগোল।।
বাদ্যভাণ্ড মহাকাণ্ড করিল প্রচুর।
রথবেগে গেল রাজা কোশলের পুর।।
পাইয়া তাঁহার বার্তা কোশলের রাজা।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া করে নৃপতির পূজা।।
রাজা কন্যাদান করে শাস্ত্র-ব্যবহারে।
আমোদ করিল রামাগণ স্ত্রী-আচারে।।
শুভক্ষণে দুইজনে শুভদৃষ্টি করে।
উভয়ের রূপে ধরা কত শোভা ধরে।।
নানা রত্ন দিয়া রাজা করিল সম্মান।
আপনি অর্দ্ধেক রাজ্য দিলা অধিকার।।
বিলাইতে দিল রাজা অনেক ভাণ্ডার।
কৌশল্যা লইয়া রাজা আসিলেন বাস।
আদিকাণ্ড গাহিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।