২৫৬তম অধ্যায়
মৃত্যুর উৎপতি লক্ষণ—নৃপ-নারদসংবাদ
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! অযুত হস্তীর তুল্য বলশালী ভীমপরাক্রম ভূপালগণ আপনাদিগের তুল্য তেজোবলসম্পন্ন বীরগণকর্ত্তৃক নিহত হইয়া সৈন্যমধ্যে ধরাশয্যা আশ্রয় করিয়াছেন। উহাদিগকে সংহার করিতে পারে, এমন লোক আর কেহই নাই। এক্ষণে এই যে মহাবলপরাক্রান্ত নৃপতিগণ গতাসু হইয়া সমরাঙ্গনে নিপতিত রহিয়াছেন, ইহাদিগকে কি নিমিত্ত মৃত বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়? তদ্বিষয়ে আমার নিতান্ত সংশয় উপস্থিত হইতেছে। অতএব মৃত্যু কে, কোন পুরুষ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, আর উহা কি নিমিত্তই বা প্রজাদিগকে হরণ করে, তাহা আমার নিকট কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “বৎস! সত্যযুগে অনুকম্পননামে এক রাজা সংগ্রামে ক্ষীণবাহন হইয়া শত্রুর বশীভূত হইয়াছিলেন। তাঁহার হরিনামে এক নারায়ণতুল্য বলশালী পুত্র ছিল। ঐ পুত্র সৈন্যসামন্তের সহিত সংগ্রামে নিহত হয়। মহারাজ অনুকম্পন পুত্রের নিধন ও শত্রুর নিপীড়নে নিতান্ত কাতর হইয়া পরিশেষে শান্তিপরায়ণ হইলেন। তিনি একদা তপোধনাগ্রগণ্য নারদের দর্শনপূর্ব্বক তাঁহার নিকট সংগ্রামে যেরূপে পুত্রের মৃত্যু ও আপনার শক্তহস্তে পতন হইয়াছে, তাহা বিশেষরূপে কীৰ্ত্তন করিলেন।
‘মুনিকুলতিলক নারদ রাজার বাক্যশ্রবণে দয়ালু হইয়া তাঁহার, নিকট এক পুত্রশোকনিবারণক্ষম উপাখ্যান কীৰ্ত্তন করিতে মানস করিয়া কহিলেন, ‘মহারাজ! পুর্ব্বে আমি যে উপাখ্যান শ্রবণ করিয়াছি, এক্ষণে তাহা তোমার নিকট কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।
প্রজাসংহারার্থ ব্রহ্মার উপায় উদ্ভাবন
‘পূৰ্ব্বকালে সৰ্ব্বলোকপিতামহ ভগবান ব্রহ্মা প্রজার সংখ্যা, ক্রমে ক্রমে বর্দ্ধিত হইতে দেখিয়া অতিশয় চিন্তিত হইয়াছিলেন। ঐ সময় ত্রিভুবন অসংখ্য জীবে নিরন্তর পরিব্যাপ্ত হইয়া যেন উচ্ছাসবিহীন ও উচ্ছৃঙ্খল হইয়াছিল। তদ্দর্শনে সৃষ্টিকর্ত্তা ব্রহ্মা কিরূপে প্রজাসংহার করিবেন, তাহাই চিন্তা করিতে লাগিলেন; কিন্তু সংসারমধ্যে সংহারের কোন উপায় দেখিতে পাইলেন না। অনন্তর তাঁহার ইন্দ্রিয়চ্ছিদ্র হইতে ক্রোধজ অনল বিনির্গত হইল। সৰ্ব্বলোকপিতামহ সেই ক্রোধানলদ্বারা দশদিক দগ্ধ করিতে লাগিলেন।
‘এইরূপে ব্রহ্মার কোপানলে স্থাবরজঙ্গমপরিপূর্ণ সমুদয় পৃথিবী, স্বর্গ ও আকাশমণ্ডল দগ্ধ হইতে আরম্ভ হইলে বেদপতি যজ্ঞেশ্বর দেবদেব মহাদেব প্রজাদিগের হিতাকাঙ্ক্ষী হইয়া ব্ৰহ্মর শরণাপন্ন হইলেন। ভগবান ব্রহ্মা তাঁহাকে সমাগত দেখিয়া সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহেশ্বর! তুমি যে অভিপ্রায়ে আমার নিকট আগমন করিয়াছ, প্রকাশ কর, আমি অচিরাৎ তোমার কামনা পূর্ণ করিব।”