২৫৫. ক্ষিতি প্রভৃতি পঞ্চভূতের লক্ষণ

২৫৫তম অধ্যায়

ক্ষিতি প্রভৃতি পঞ্চভূতের লক্ষণ

ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! অত্যন্ত প্রদীপ্ত হুতাশনসদৃশ ভগবান বেদব্যাস স্বীয় পুত্র শুকদেবের নিকট পুনরায় যে পঞ্চভূতের নির্দ্ধারণবিষয়ক শাস্ত্র কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন, তাহা কহিতেছি, যত্নপূর্ব্বক শ্রবণ কর। স্থিরতা, গুরুত্ব, কাঠিন্য, উৎপাদিকা শক্তি, গন্ধ, ঘ্রাণশক্তি, সংঘাত [সংহতি—মিলিতাবস্থা], মনুষ্যাদির আশ্রয়ভাব, সহিষ্ণুতা, স্থূলতা এই সমুদয় পৃথিবীর গুণ। শৈত্যরস [শীতলরস], ক্লেদ, দ্রব্যত্ব [তরলতা], স্নেহ, সৌম্যতা, প্রস্রবণ [ধারারূপে নিঃসরণ], জিহ্বা, হিমকরকাদিরূপে [শিলা-তুষাররূপে—শিলা ও বরফের আকারে] সংঘাতত্ব ও তণ্ডুলাদির পাচকতা [সুসিদ্ধভাব] এই সমুদয় সলিলের গুণ। দুর্দ্ধর্ষতা, জ্যোতিঃ, তাপ, পাক, প্রকাশন, শোক, রোগ, শীঘ্রগামিতা, তীক্ষ্ণতা ও ঊৰ্দ্ধপ্রয়াণ [ঊৰ্দ্ধগতি] এই সমুদয় অগ্নির গুণ। স্পর্শ, বাগিন্দ্রিয়স্থান, গমনাগমন বিষয়ে স্বাধীনতা, শীঘ্রগামিতা, শৌর্য্য, মোচন [ত্যাগ], উৎক্ষেপণ [ঊর্দ্ধে উত্তোলন], নিশ্বাসাদিচেষ্টা, জন্ম ও মৃত্যু এই সমুদয় সমীরণের গুণ। শব্দ, সৰ্ব্বব্যাপকতা, ছিদ্রসম্পন্নতা [ঘটপটাদির অবকাশবিধান শক্তি], অনাশ্ৰয়ত্ব, অনালম্বত্ব [অবলম্বনরাহিত্য], অব্যক্তত্ব, বিকৃতি, অবিকারিতা [বিকারহীনতা], অপ্রতিঘাত [আঘাতপ্রয়োগের অযোগ্য] ও ভূতত্ত্ব [দেহমধ্যগত অবকাশবিধানতা] এই সমুদয় আকাশের গুণ। পঞ্চভূত এই পঞ্চাশৎ গুণে অলঙ্কৃত বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকে। ধৈৰ্য্য, তর্কবিতর্ক, কৌশল, স্মরণ, ভ্রান্তি, কল্পনা, সহিষ্ণুতা, সৎপ্রবৃত্তি ও অস্থিরতা এই নয়টি মনের গুণ। সুষুপ্তি, উৎসাহ, চিত্তের একাগ্রতা, সংশয় ও প্রত্যক্ষাদি প্রমাণকারিতা, বুদ্ধি এই পাঁচগুণে অলঙ্কৃত।”

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! বুদ্ধিকে কিরূপে পঞ্চগুণান্বিত বলা যায় এবং ইন্দ্রিয়গণকেই বা কি প্রকারে গুণ বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়, তাহা সুক্ষ্মরূপে কীৰ্ত্তন করুন।”

ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! পূৰ্ব্বে বুদ্ধির পাঁচ গুণ বলিয়া নির্দ্দেশ করা হইল বটে, কিন্তু বস্তুতঃ বুদ্ধির ষষ্ঠিগুণ। পঞ্চ মহাভূত ও ইতিপূর্ব্বে পঞ্চ-মহাভূতের যে পঞ্চাশৎ গুণকীর্ত্তন করা হইয়াছে, তৎসমুদয় ও নিদ্রা উৎসাহাদি পাঁচ, সমুদায় ষাটটি বুদ্ধির গুণ বলিয়া কীৰ্ত্তিত হয়। ঐ গুণসমুদয় চৈতন্যের সহিত মিলিত থাকে। পরমেশ্বর ঐ সমুদয় গুণের সৃষ্টি করিয়াছেন, উহারা নিত্য নহে। পূর্ব্বে এই জগতের উৎপত্তাদি বিষয়ে যে সমুদয় মত কীৰ্ত্তন করা গিয়াছে, সেসমুদয় বেদবিরুদ্ধ ও বিচারদুষ্ট। সম্প্রতি আমি যে মত কীৰ্ত্তন করিলাম, তুমি সেই বেদোক্ত মত অবগত হইয়া শান্তবুদ্ধি হও।”