২৫৩তম অধ্যায়
যোগীর ব্রহ্মজ্ঞানলাভের উপায়
“ব্যাস বলিলেন, “বৎস! যোগিগণ শাস্ত্রোক্ত যোগাদি কার্য্যের অনুষ্ঠানদ্বারা দেহবিমুক্ত পরমাত্মাকে দর্শন করিয়া থাকেন। যেমন গগনমধ্যে সূর্য্যের কিরণজাল একত্রীভূত হইয়া অবস্থান করিলেও স্থূলদৃষ্টিদ্বারা দৃষ্টিগোচর না হইয়া যুক্তিদ্বারা অনুমিত হয়, তদ্রূপ যেসমস্ত জীব স্থূলদেহবিমুক্ত হইয়া লোকে বিচরণ করে, তাহাদের জীবন্মুক্তি স্থূলদৃষ্টিদ্বারা দৃষ্ট না হইয়া জ্ঞানদৃষ্টিদ্বারাই লক্ষিত হইয়া থাকে। জিতেন্দ্রিয় যোগিগণ জলমধ্যে সূৰ্য্যপ্রতিবিম্বের ন্যায় জীবদেহে প্রকাশিত লিঙ্গশরীরকে দর্শন করিয়া থাকেন। যাঁহারা কি জাগ্ৰদ্দশা, কি নিদ্রিতাবস্থা, সকল সময়েই মনঃকল্পিত কামাদি ও যোগৈশ্বৰ্য্য পরিত্যাগপূৰ্ব্বক যোগানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয়েন, তাঁহারাই লিঙ্গশরীর বশীভূত করিতে পারেন। তাঁহাদিগের জীব নিরন্তর মহত্তত্ত্ব, অহঙ্কার এবং রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ এই সপ্তগুণসম্পন্ন হইয়াও জরামৃত্যু পরিত্যাগপূৰ্ব্বক ইন্দ্রাদি-লোকে বিচরণ করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি মন ও বুদ্ধির বশীভূত হয়, সে আপনা হইতে অন্য ব্যক্তিকে পৃথক্ জ্ঞান এবং স্বপ্নযোগেও জাগরিতের ন্যায় পদার্থ দর্শন, পুণ্যের অনুষ্ঠান ও সুখদুঃখ ভোগ করে এবং কামক্রোধের বশীভূত হইয়া ব্যসনাপন্ন ও প্রভূত অর্থ লাভ করিয়া যারপরনাই সন্তুষ্ট হয়। জীব জননীর জঠরে দশ মাস অবস্থান করিয়াও ভুক্ত অন্নের ন্যায় জীর্ণ হয় না। রজ ও তমোগুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা ঈশ্বরের অংশস্বরূপ সৰ্ব্বলোকের হৃদয়স্থিত জীবাত্মাকে কোনমতেই দর্শন করিতে পারে না। যাঁহারা যোগশাস্ত্রপরায়ণ হইয়া জীবাত্মাকে অবগত হইতে ইচ্ছা করেন, স্থূলশরীর, সূক্ষ্মশরীর ও কারণ-শরীরকে অতিক্রম করা তাঁহাদের আবশ্যক। অনেকানেক মহর্ষিগণ সন্ন্যাসীদিগের ভিন্ন ভিন্ন কাৰ্য্য নির্দ্দেশ করিয়া গিয়াছেন, কিন্তু শাণ্ডিল্যমুনি শান্তিজনক সমাধিকেই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া গিয়াছেন। মানবগণ মহত্তত্ত্ব, অহঙ্কার, রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ এই সাত সূক্ষ্ম গুণ, প্রকৃতির বিকার জগৎ এবং সৰ্ব্বজ্ঞতা, নিত্য-তৃপ্ত, নিত্যবোধ, স্বাধীনতা, অলুপ্তদৃষ্টি ও অনন্তশক্তি এই ষড়ঙ্গযুক্ত পরমেশ্বরকে পরিজ্ঞাত হইলেই পরব্রহ্মকে দর্শন করিতে পারে।”