২৪৬তম অধ্যায়
যুদ্ধে পলায়মান কর্ণের পথিমধ্যে দুৰ্য্যোধন-সাক্ষাৎকার-তদীয় জয়সম্ভাবনায় আনন্দ
জনমেজয় কহিলেন, হে ব্ৰহ্মন! দুরাত্মা অভিমানী গর্ব্বিত পাপপরায়ণ দুৰ্য্যোধন পুরুষকার ও উদারতা প্রকাশপূর্ব্বক সর্ব্বদাই পাণ্ডবদিগের অবমাননা করিত; কিন্তু সেই পাপিষ্ঠ শত্রুকর্ত্তৃক পরাজিত ও নিবদ্ধ হইলে মহাত্মা পাণ্ডবেরা তাহাকে শক্ৰহস্ত হইতে মুক্ত করিলেন; বোধ হয়, এই নিমিত্ত তাহার অন্তঃকরণ ঘৃণা ও লজ্জায় অত্যন্ত ব্যাকুল হওয়াতে হস্তিনাপুরে প্রবেশ করা নিতান্ত দুষ্কর হইয়াছিল। তখন সে কিরূপে হস্তিনাপুরে প্রবেশ করিল, তাহা সবিস্তর বর্ণন করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! দুৰ্য্যোধন ধর্ম্মরাজের নিকট বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক দুঃখে একান্ত কাতর ও শোকে হতবুদ্ধি হইয়া পরাভব চিন্তা করিতে করিতে চতুরঙ্গিণী সেনা-সমভিব্যাহারে আজাবনতমুখে নগরাভিমুখে যাত্ৰা করিলেন। পথিমধ্যে যবপূর্ণ ও জলসনাথ পরমরমণীয় ক্ষেত্রে যানসকল বিমুক্ত এবং হস্ত্যশ্ব, রথাপদাতি প্রভৃতি সৈন্যচর যথানিয়মে সন্নিবেশিত করিয়া স্বয়ং উজ্জ্বলতর সুচারু পৰ্য্যঙ্কোপরি উপবিষ্ট হইলেন।
অনন্তর কর্ণ নিশাবসানসময়ে রাহুগ্ৰস্ত চন্দ্রের ন্যায় মলিনবিদন শোকদুঃখ-পরিপ্লুত দুৰ্য্যোধনের নিকট উপনীত হইয়া কহিলেন, “হে কুরুনন্দন! আমাদিগের পরমসৌভাগ্য যে, তোমার জীবন বিনষ্ট হয় নাই; তুমি কামরূপী গন্ধর্ব্বগণকে পরাভব করিয়াছ, ভাগ্যক্রমে অদ্য আমরা পুনরায় গান্ধার-নগরে মিলিত হইলাম এবং ভাগ্যক্রমে বিজিগীষু নির্জ্জিতশত্রু তোমার ভ্রাতৃগণকে নয়নগোচর করিলাম। তোমার সমক্ষে গন্ধর্ব্বেরা আমাকে আক্রমণ করিলে আমার সৈন্যগণ প্রাণভয়ে ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল, আমি তাহাদিগকে কোনক্রমে নিবারণ করিতে না পারিয়া অরতিশরে ক্ষতবিক্ষত ও নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া প্ৰস্থান করিলাম। কিন্তু কি আশ্চৰ্য্য! তোমরা কিরূপে সেই অমানুষ যুদ্ধ হইতে স্ত্রী, সৈন্য ও বাহনগণসমভিব্যাহারে অক্ষত শরীরে নির্ব্বিঘ্নে বিমুক্ত হইলে? মহারাজ! অদ্য রণস্থলে ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে তুমি যে কাৰ্য্য নির্ব্বাহ করিয়াছ, তাহা নির্ব্বাহ করে, এমন লোক আর ইহলোকে দৃষ্টিগোচর হয় না।”
রাজা দুৰ্য্যোধন কর্ণকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া গদগদস্বরে কহিতে লাগিলেন।