২৩৪তম অধ্যায়
দ্রৌপদীর প্রতি সত্যভামার বিদায়-সম্ভাষণ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ভগবান জনার্দ্দন মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি মহর্ষি ও মহাত্মা পাণ্ডবগণ-সমভিব্যাহারে নানাপ্রকার অনুকূল কথাপ্রসঙ্গে কিয়ৎকাল অতিবাহিত করিয়া তাঁহাদিগের নিকট বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক রথারোহণসময়ে সত্যভামাকে আহ্বান করিলেন। সত্যভামা অবিচলিত প্ৰণয়ভাবে দ্রুপদাত্মাজাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, “অয়ি প্ৰিয় সখি! উৎকণ্ঠিত হইও না; দুঃখ দূর কর। চিন্তিত হইয়া রজনী জাগরণ করিবার আবশ্যকতা নাই, তোমার স্বামীগণ নিজ ভুজবলে অনতিকালমধ্যেই পুনরায় এই বসুমতী অধিকার করিবেন। তোমার ন্যায় সুশীলা ও সুলক্ষণা কামিনীদিগকে কখনই চিরকাল ক্লেশভোগ করিতে হয় না; আমি শুনিয়াছি, অবশ্যই তুমি ভর্ত্তৃগণের সহিত নিষ্কণ্টকে রাজ্য ভোগ করবে।
“হে দ্রুপদনন্দিনি! পাণ্ডবেরা ধৃতরাষ্ট্রতনয়দিগের বধসাধনারূপ বৈরানিৰ্য্যাতন করিয়া রােজ্যাধিকার প্রাপ্ত হইলে যে— সমস্ত দর্পবিমোহিত কুরুকামিনীগণ তোমাকে পদব্রজে পাণ্ডবদিগের সহিত বনে গমন করিতে দেখিয়া উপহাস করিয়াছিল, অচিরাৎ তাহাদিগের সেই গর্ব্ব খর্ব্ব ও সঙ্কল্প ব্যর্থ হইয়াছে দেখিবে। যাহারা নিতান্ত দুঃখের সময় তোমার অপ্রিয় কার্য্য করিয়াছে, তাহাদিগকে নিম্চয়ই শমন-সদনে গমন করিতে হইবে।
“প্ৰতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকর্ম্মা, শতানীক ও শ্রুভসেন প্রভৃতি তোমার পুত্রেরা সকলেই ক্ষেমাস্পদ, মহাবীর ও কৃতাস্ত্ৰ, ইহারা অভিমন্যুর ন্যায় দ্বারকা-নগরীতে সাতিশয় প্রীত ও অনুরক্ত হইয়া রহিয়াছে, এবং সুভদ্ৰাও তোমার ন্যায় সেই সকল পুত্রের প্রতি সমান স্নেহ করিয়া থাকেন। তিনি সন্তানশূন্য ও নির্দ্বন্দ্ব হইয়া তোমাদিগের সুখে সুখ ও দুঃখে দুঃখ অনুভব করেন। প্ৰদ্যুম্নজননীও ইহাদিগের প্রতি সর্ব্বতোভাবে সেইরূপ ব্যবহার করিয়া থাকেন এবং কৃষ্ণ ভানু প্রভৃতি পুত্ৰগণ অপেক্ষা ইহাদিগকে সমধিক স্নেহ করেন। আমার শ্বশুর ইহাদিগের গ্রাসাচ্ছাদনের নিমিত্ত সর্ব্বদাই যত্নবান রহিয়াছেন। বলরামপ্রভৃতি অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয়েরা উহাদিগের সহিত বয়স্যভাবে কালব্যাপন করিতেছেন। হে ভাবিনি! প্ৰদ্যুম্ন ও তোমার পুত্ৰগণের পরস্পর চিরকাল সদভাব সমভাবে থাকিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।”
সত্যভামা দ্রৌপদীকে এবংবিধ নানাবিধ প্রিয়সম্ভাষণপূর্ব্বক প্রদক্ষিণ করিয়া রথে আরোহণ করিলে কৃষ্ণ দ্ৰৌপদীকে সান্ত্বনা করিয়া পাণ্ডবগণের নিকট বিদায়গ্ৰহণপূর্ব্বক স্বীয় নগরাভিমুখে যাত্ৰা করিলেন।
দ্ৰৌপদীসত্যভামাসংবাদপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।