২৩১. কার্ত্তিকেয়ের নামাবলী-কীর্ত্তন

২৩১তম অধ্যায়

কার্ত্তিকেয়ের নামাবলী-কীর্ত্তন

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে তপোধন! আপনি স্কন্দদেবের ভুবনবিখ্যাত নাম-সকল কীর্ত্তন করিয়া আমার কৌতুহল চরিতার্থ করুন।’

মার্কণ্ডেয় যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণ করিয়া কার্ত্তিকেয়ের নামাবলী বলিতে আরম্ভ করিলেন, “আগ্নেয়, স্কন্দ, দীপ্তকীর্ত্তি, অনাময়, ময়ূরকেতু, ধর্ম্মাত্মা, ভূতেশ, মহিষার্দ্দন, কামজিৎ, কামদ, কান্ত, সত্যবাক, ভুবনেশ্বর, শিশু, শীঘ্ৰ, শুচি, চণ্ড, দীপ্তবর্ণ, শুভানন, অমোঘ, অনঘ, রৌদ্র, প্রিয়, চন্দ্ৰানন, দীপ্তশক্তি, প্রশাস্তাত্মা, ভদ্রকৃৎ, কূটমোহন, ষষ্ঠীপ্রিয়, ধর্ম্মাত্মা, পবিত্র, মাতৃবৎসল, কন্যাভর্ত্ত, বিভক্ত, স্বাহেয়, রেবতীসুত, প্ৰভু, নেতা, বিশাখ, নৈগমেয় সুদুশ্চর, সুব্রত, ললিত, বালক্রীড়নকপ্ৰিয়, খচারী, ব্ৰহ্মচারী, শূর, শরজন্মা, বিশ্বামিত্ৰপ্রিয়, দেবসেনাপ্রিয়, বাসুদেব-প্রিয় ও প্রিয়কৃৎ। কার্ত্তিকেয়ের এই দিব্য নাম-সকল সংকীর্ত্তন করিলে ঐশ্বৰ্য্য ও স্বৰ্গলাভ হয়, তাহাতে সন্দেহ নাই।

কীর্ত্তিকেয়-স্তব

“হে যুধিষ্ঠির! এক্ষণে আমি দেবঋষিগণের সহিত একত্ৰ হইয়া তাঁহার স্তব কীর্ত্তন করি; হে কুরুবরা! শ্রবণ কর। হে স্কন্দ! তুমি ব্রহ্মপ্রিয়, ব্রাহ্মণের ন্যায় ব্রাতধারী, ব্ৰহ্মজ্ঞ ও ব্রাহ্মণগণের নেতা; তুমি স্বাহা, তুমি স্বধা, তুমি পরমপবিত্ৰ, মন্ত্র-সকল তোমারই স্তব করিয়া থাকে। তুমিই বিখ্যাত হুতাশন, তুমিই সংবৎসর, তুমিই ছয় ঋতু, মাস, অৰ্দ্ধমাস, অয়ন ও দিক্‌। হে রাজীবলোচন! তুমি সহস্রমুখ ও সহস্ৰবাহু, তুমি লোকসকলের পাতা, তুমি পরমপবিত্র হবিঃ, তুমিই সুরাসুরগণের শুদ্ধিকর্ত্তা, তুমি সেনাগণের অধিপতি, তুমি প্রচণ্ড প্ৰভু ও শক্রগণের জেতা, তুমিই সহস্ৰপ্ৰভু, তুমিই পৃথিবী, তুমিই সহস্ৰ তুষ্টি, তুমিই সহস্রভুক ও সহস্রশীর্ষ, তুমিই অনন্তরূপ, তুমি সহস্রপাৎ, তুমিই গুরুশক্তিধারী।

“হে দেব! গঙ্গা, স্বাহা, মহী কৃত্তিকাগণ তোমার মাতা; কুক্কুট তোমার ক্রীড়নক, তুমি ইচ্ছামত বিবিধ রূপ ধারণ করিতে সমর্থ। তুমি দক্ষ, তুমি সোম, তুমি সমীরণ, তুমি ধর্ম্ম, গিরীন্দ্র ও সহস্ৰলোচন; তুমি সনাতনের সনাতন, তুমি প্রভুর প্রভু, তুমিই উগ্ৰধন্বা, তুমি সত্যের কর্ত্তা ও দানবগণের হর্ত্তা, তুমি রিপুগণের জেতা ও সুরগণের শ্রেষ্ঠ, তুমি পরমসূক্ষ্ম তপঃস্বরূপ, তুমিই পরাপরের অভিজ্ঞ এবং তুমি স্বয়ংই সেই পরাপর। হে সুরবীর! তোমারই ধর্ম্ম, কাম, শক্তি সমুদয় জগৎ ব্যাপ্ত করিয়া আছে। আমি তোমাকে স্তব করিতেছি; হে লোকনাথ! তোমাকে নমস্কার! তুমি দ্বাদশ নেত্রবাহ, তোমার সূক্ষ্ম গতির আর কিছুই জানি না।

“যে বিপ্ৰ সমাহিত হইয়া স্কন্দদেবের এই স্তোত্ৰ পাঠ বা ব্ৰাহ্মণগণের শ্রবণগোচর করান অথবা ব্রাহ্মণের মুখে শ্রবণ করেন, তিনি ধন, আয়ু, যশ, পুত্ৰ, শত্রুজয়, পুষ্টি ও তুষ্টি প্রাপ্ত হইয়া পরিশেষে স্কন্দলোকে বাস করেন।”

মার্কণ্ডেয়সমস্যাপার্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।