২২৬তম অধ্যায়
স্বপদাধিকারভয়ে স্কন্দবধাৰ্থ ইন্দ্রের বজ্রক্ষেপ
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “মহারাজ! গ্রহ, উপগ্রহ, মহর্ষি, মাতৃগণ, অন্যান্য বহুতর ঘোরদর্শন স্বৰ্গবাসীগণ ও হুতাশনপ্রমুখ গর্ব্বিত পারিষদবৰ্গ মহাভাগ কার্ত্তিকেয়কে বেষ্টন করিয়া সেই স্থানে অবস্থান করিলেন। দেবরাজ ইন্দ্ৰ বিজয়লাভে নিতান্ত সন্দিগ্ধ হইয়া দেবগণের সহিত ঐরাবতে আরোহণ ও বজ্রধারণপূর্ব্বক সিংহনাদ পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। কার্ত্তিকেয় তখন সেই উৎকৃষ্ট অম্বর সংবীত ধ্বজপাটাবগুষ্ঠিত দেবসেনা নিরীক্ষণ করিয়া বিনাশার্থী ইন্দ্রের প্রতি ধাবমান হইলেন। দেবর্ষিপূজিত দেবরাজও কার্ত্তিকেয়াকে সংহার করিবার নিমিত্ত সিংহনাদ পরিত্যাগপূর্ব্বক দেবসেনাদিগকে উত্তেজিত করিয়া সত্বরে গমন করিতে লাগিলেন।
“অনন্তর তিনি কার্ত্তিকেয়ের সন্নিহিত হইয়া সুরগণসমভিব্যাহারে সিংহনাদ পরিত্যাগ করিলে কার্ত্তিকেয়ও মহাসাগরের ন্যায় অতিমাত্ৰ সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। দেবসেনা-সকল সেই মহাসিংহনাদে বিচেতন্যপ্ৰায় হইয়া সেই স্থানে ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ করিতে লাগিল। তদবলোকনে ক্রোধাবিষ্ট কুমারের মুখ হইতে প্রজ্বলিত অনলরাশি উদগীর্ণ হইয়া কম্পিতকলেবর দেবসৈন্যসকলকে দগ্ধ করিতে লাগিল। তখন কাহার মস্তক, কাহার বা অস্ত্র, কাহার বা বাহন প্রজুলিত হইয়া উঠিল। তখন তাহাদিগকে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত নক্ষত্ৰগণের ন্যায় বোধ হইতে লাগিল।
“অনন্তর দেবসেনা-সকল দগ্ধদেহ হইয়া পাবকানন্দনস্কন্দের শরণাপন্ন হইলে, দেবতারাও দেবরাজকে পরিত্যাগ করিয়া শান্তিলাভ করিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র দেবগণকর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া স্কন্দের প্রতি বজ্র নিক্ষেপ করিলে তাহার দক্ষিণপার্শ্ব বিদীর্ণ হইয়া গেল। তখন সেই বিদীর্ণ পার্শ্বদেশ হইতে দিব্যসুবৰ্ণ-কুণ্ডল ও শক্তিধারী এক যুবা-পুরুষ নিৰ্গত হইলেন। বজ্রপ্রহারদ্বারা সঞ্জাত হইয়াছেন বলিয়া তাহার নাম বিশাখ হইল। সুররাজ ইন্দ্র সেই কালানলসমকান্তিসম্পন্ন অন্য এক যুব-পুরুষ সমুৎপন্ন হইলেন দেখিয়া ভয়প্রযুক্ত কৃতাঞ্জলিপুটে স্কন্দের শরণাপন্ন হইলেন। স্কন্দ তাহাকে ও তাঁহার সৈন্যগণকে অভয়প্ৰদান করিলে দেবগণ প্ৰহৃষ্টমনে বাদিত্ৰবাদন করিতে লাগিলেন।”