২২২তম অধ্যায়
কার্ত্তিকেয়-জন্মসূচনা
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে কুরুবংশাবতংস! অগ্নিদিগের বিবিধ বংশের বিষয় কীর্ত্তিত হইল, এক্ষণে অদ্ভূত অগ্নির নন্দন অমিততেজাঃ কার্ত্তিকেয় যেরূপে ব্ৰহ্মপত্নীগণ হইতে সমুৎপন্ন হইয়াছিলেন, তাহা কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন।
“পূর্ব্বকালে দেবগণ ও অসুরগণ সাতিশয় যত্নসহকারে পরস্পর সংগ্রাম করিতেন, ঐ যুদ্ধে ঘোররূপী দানবগণেরই সতত জয়লাভ হইত। তখন সুরাধিপতি পুরন্দর এইরূপে আপনার সৈন্য-সমুদয় ক্ৰমে ক্ৰমে ক্ষয়প্রাপ্ত হইতেছে দেখিয়া মনে মনে চিন্তা করিলেন যে, স্বীয় বরপ্রভাবে দানবদলের দারুণ শরনিকর নিঃশেষিত প্ৰায় দেবসেনাকে রক্ষা করিতে সমর্থ একজন সেনানায়কের নিতান্ত প্রয়োজন হইয়াছে। অনন্তর তিনি একদা মানসশৈলে গমনপূর্ব্বক একান্তচিত্তে ঐ বিষয় চিন্তা করিতেছেন, এমন সময়ে “কোন পুরুষ এ স্থানে সত্বরে উপস্থিত হইয়া আমাকে পরিত্ৰাণ করুন, তিনি আমাকে পতি প্ৰদান করুন, বা স্বয়ং আমার পতি হউন” এইরূপ স্ত্রীলোকের আর্ত্তস্বর অকস্মাৎ তাহার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইলে তিনি তখন করুণাপরতন্ত্র হইয়া ‘ভয় নাই।’ বলিয়া তাহাকে আশ্বাস প্ৰদান করিলেন এবং দেখিলেন, গদাপাণি কিরীটধারী কেশী-দানব ঐ কন্যার হস্তধারণ করিয়াছে। তিনি তখন সাতিশয় ক্ৰোধপরতন্ত্র হইয়া কেশীকে কহিলেন, “দুরাচার! তুমি কি নিমিত্ত এই কন্যাকে হরণ করিতেছ? আমি বজ্রী, আমার সমক্ষে উহাকে পীড়ন করিও না।”
“কেশী কহিল, “হে ইন্দ্ৰ! তুমি ইহার বাসনা পরিত্যাগ কর, আমি ইহাকে অভিলাষ করিয়াছি, আমি এক্ষণে তোমাকে ক্ষমা করিতেছি, তুমি প্ৰাণ লইয়া আপন আলয়ে প্রস্থান কর।” কেশী এই বলিয়া ইন্দ্রনিধনমানসে গদা নিক্ষেপ করিল। ইন্দ্ৰ অৰ্দ্ধপথেই বজ্রদ্বারা সেই গদা দ্বিধা ছেদন করিলেন। তখন কেশী ক্রুদ্ধ হইয়া ইন্দ্রের উপর এক শৈলশিখর নিক্ষেপ করিলে ভগবান পুরন্দর বজ্রদ্বারা সেই গিরিশৃঙ্গ ছিন্নভিন্ন করিয়া ভুতলে নিপাতিত করিলেন। সেই গিরিশিখর কেশীর গায়ে পতিত হওয়াতে সে সাতিশয় ব্যথিত হইয়া কন্যা পরিত্যাগপূর্ব্বক দ্রুতবেগে পলায়ন করিল। দানব পলায়ন করিলে পর দেবরাজ, ইন্দ্ৰ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে শুভাননে! তুমি কে, কাহার দুহিতা এবং এ স্থানেই বা কি করিয়া থাক?’ ”