২২০তম অধ্যায়
ভরতাদি অগ্নিগণের নাম
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “মহারাজ! পুষ্টিমতিনামে ভরত অগ্নি অতিশয় কঠিন নিয়মবলে সঞ্জাত হইয়াছেন; তিনি সন্তুষ্ট হইলে লোকে পুষ্টিলাভ করিয়া থাকে। ঐ অগ্নি প্রজাবর্গের ভরণপোষণ জন্য ভরত বলিয়া বিখ্যাত। অশিবনামে যে অনল বিদ্যমান আছেন, তিনি শক্তির উপাসক। আর যে হুতাশন দুঃখিত ব্যক্তির মঙ্গলসম্পাদন করেন, তাঁহার নাম শিব। পরে তপস্যার অতিসমৃদ্ধ ঐশ্বৰ্য্যলাভের নিমিত্ত পুরন্দরনামে অগ্নির আর এক পুত্র উৎপন্ন হইল। ঐ অগ্নি হইতে উষ্মানামে অগ্নি জন্মিল, ঐ উষ্মা সর্ব্বদা মনুষ্যলোকে লক্ষিত হইয়া থাকে। মনু-নামা অগ্নি প্ৰজাপত্য-সূত সম্পাদন করেন। বেদবেদাঙ্গপারগ ব্ৰাহ্মণগণ অগ্নিকে শাম্ভু এবং প্রদীপ্ততর মহাপ্ৰভু অগ্নিকে আবসথ্য বলিয়া নির্দেশ করেন। সেই তেজ অতি প্ৰদীপ্ত সুবর্ণসদৃশপ্রভ পঞ্চ সোমভাগী হব্যবাহ উৎপাদন করিলেন।
“অস্তগমনকালে একান্ত পরিশ্রান্ত দিবাকর অগ্নিস্বরূপ হয়েন। যিনি মহাঘোর অসুর ও পৃথগ্বিধ মনুষ্যগণকে সৃষ্টি করেন, অগ্নি তাঁহাকে উৎপাদন করিলে অঙ্গিরারূপধারী অগ্নি প্ৰজাপত্যকারী ভানুকে সৃষ্টি করিলেন। বেদপারগ ব্ৰাহ্মণগণ তাঁহাকে বৃহদ্ভানু বলিয়া থাকেন, সূৰ্য্যদুহিতা স্বপ্রজা ও বৃহদ্ভাসা এই দুইটি ভানু অনলের ভাৰ্য্যা, তাহারা ছয়টি পুত্র প্রসব করেন। আমি এক্ষণে তাঁহাদিগের জন্মবৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।
“যিনি দুর্ব্বল প্রাণীগণের প্রাণ প্রদান করিতেছেন, সেই অগ্নি ভানুর প্রথম পুত্র বলদ বলিয়া অভিহিত হয়েন। যিনি ভূত-সকল বিনষ্ট হইলে নিদারুণ মনুষ্যস্বরূপ হয়েন, সেই অগ্নি ভানুর দ্বিতীয় পুত্ৰ মন্যুমাননামে বিখ্যাত। দশপৌর্ণমাস-যজ্ঞে যাঁহাকে উদ্দেশ করিয়া হবিঃ প্ৰদান করিতে হয়, সেই অগ্নিকে বিষ্ণু, ধৃতিমান ও অঙ্গিরা বলিয়া থাকে। ইন্দ্রের সহিত যিনি আগ্ৰায়ণনামে হবির অংশ প্রাপ্ত হইতেন, তিনি ভানুবংশ্য আগ্ৰায়ণনামে প্রসিদ্ধ। চাতুৰ্ম্মস্য-যাগে আগ্নেয় প্রভৃতি আটটি হবির উৎপত্তি-স্থান, আগ্ৰহনামে ভানুর পঞ্চম পুত্র, স্তুভনামে ষষ্ঠ পুত্রও জন্মিয়াছিল।
“ভানুর তৃতীয়া ভাৰ্য্যা নিশারোহিণী-নামী এক কন্যা, অগ্নি ও সোমনামক দুই পুত্র এবং অন্য পঞ্চ পাবক প্রসব করিলেন। শ্ৰীমান বৈশ্বানরনামে প্রথম পাবক, ইনি ইন্দ্রের সহিত চাতুৰ্ম্মাস্যযাগে অগ্র-হবিদ্বারা পূজিত হয়েন। যিনি এই লোকের প্রভু, তাঁহার নাম বিশ্বপতি, তিনি দ্বিতীয় পাবক। তাহাকেই উদ্দেশ্য করিয়া স্বিষ্ট আজ্য প্রদত্ত হয় বলিয়া তাঁহার নাম স্বিষ্টকৃৎ। তিনি হিরণ্যকশিপুনন্দিনী রোহিণীকে সন্তানোৎপাদনের নিমিত্ত ভাৰ্য্যাত্বে প্রতিগ্রহ করিলেন। মনুর তৃতীয় পুত্রের নাম সন্নিহিত; ইনি শব্দরূপ গ্রহণের প্রবর্ত্তক এবং দেহীদিগের দেহ-সকল আশ্রয় করিয়া প্রাণকে প্রবর্ত্তিত করিতেছেন। যাঁহার বস্ত্ৰ শুক্ল ও কৃষ্ণবর্ণ যিনি অন্য অন্য হুতাশনের পুষ্টিবৰ্দ্ধন করেন, যিনি স্বয়ং নিষ্পাপ, কিন্তু ক্রোধের উদ্রেক হইলে কাম্যকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন এবং যতিগণ যাঁহাকে কপিল ঋষি বলিয়া কীর্ত্তন করেন, তিনিই সাংখ্য-যোগপ্রবর্ত্তক, কপিলনামক অগ্নি ও চতুর্থ পাবক। ভূতগণ নানাবিধ কর্ম্মে অগ্ৰ-নামক যজ্ঞীয় দ্রব্য প্রতিনিয়ত যাহাকে দান করে, তাঁহার নাম অগ্রণী; তিনিই পঞ্চম পাবক।
“বহুবিধ দোষদুষ্ট অগ্নিহোত্রের প্রায়শ্চিত্ত-সাধনের নিমিত্ত এই সকল ও অন্যান্য প্রথিত পাবকগণকে সৃষ্টি করিলেন। যখন বায়ুসহকারে অগ্নি-সকল পরস্পর সংশ্লিষ্ট হইবে, তখন শুচিনামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টাকপাল-নামক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে। যখন দক্ষিণাগ্নি গাৰ্হাপত্য ও আহবনীয় অগ্নিদ্বারা সংসক্ত হইবে, তখন শুচি-নামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টাকপাল-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে।
“যদি ঋতুমতী নারী অগ্নিহোত্রিক অগ্নি স্পর্শ করে, তাহা হইলে দস্যুবান নামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকিপাল-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে। যদি মৃত জীব বা পশুরা অগ্নিকে স্পর্শ করে, তাহা হইলে সুরমান নামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকিপাল-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে। পীড়িত ব্রাহ্মণ ত্রিরাত্ৰ অগ্নিতে হোম করিলে উত্তরনামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টাকপালযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে। যাঁহার আবাসে দশপৌর্ণ মাস যাগ প্রতিষ্ঠিত আছে, তিনি পথিকৃৎ-নামক অগ্নির উদ্দেশে অষ্টাকপাল-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবেন। যখন সূতিকাগ্নি অগ্নিহোত্রিক অগ্নিকে স্পর্শ করিবে, তখন অগ্নিমান অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকিপাল-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিবে।”