যেখানে দেখিবে যত নদ নদী দেশ।
সাবধানে সে পর্ব্বতে করিবে প্রবেশ।।
সুস্থান কুস্থান না করিহ বিবেচনা।
অন্বেষিবে জানকীরে করিয়া মন্ত্রণা।।
সিন্ধুদেশ মলয়দেশ কাবেরীর তীর।
ক্রিমিজীব দেশে যাইও অতি সে গভীর।।
তাহার নিকটে আছে কেতকী-কানন।
দিশপাশ নাহি তার অনেক যোজন।।
দুই পার্শ্বে কেয়াবন দেখিবে অপার।
কেয়াবনে কাঁটা যেন করাতের ধার।।
সকল বানর তথা হইও সাবধান।
শীঘ্র শীঘ্র গেলে তথা পাইবে হে ত্রাণ।।
কেয়াবন এড়িয়া যাইবে তালবনে।
দুঃখ পাসরিবে সবে সে তাল ভক্ষণে।।
তাহার পশ্চিমে যাইও পাটনে পাটন।
হিঙ্গুলিয়া গিরি তথা অদ্ভুত গঠন।।
তার পূর্ব্বে সিন্ধুনদ পশ্চিমে সাগর।
তার মধ্যে হিঙ্গুলিয়া অত্যুচ্চ শিখর।।
অন্বেষণ করিবে সেখানে সর্ব্ব ঠাঁই।
তোমরা করিলে যত্ন, অসাধ্য কি ভাই।।
তথা যদি নাহি পাও সীতার উদ্দেশ।
চন্দ্রবাণ পর্ব্বতে হে করিবে প্রবেশ।।
পশ্চিমে সাগর তীর একই যোজন।
যত্ন করি সেখানে করিও অন্বেষণ।।
চন্দ্রবাণ গিরি করে আলো দশদিকে।
সাবধানে খুঁজিও সকলে একযোগে।।
বিষ্ণুচক্র সেখানে, অদ্ভুত তার ধার।
অসুরের হাড়ে চক্র দেখিতে সুন্দর।।
সেই অসুরের হাড়ে চক্র সৃষ্টি করি।
আপনি হইলা হরি শঙ্খ-চক্রধারী।।
সে পর্ব্বতে আরোহিবে সকল বানর।
যত্ন করি অন্বেষিহ সীতা লঙ্কেশ্বর।।
তথা যদি উভয়ের না পাও উদ্দেশ।
বরাহ-পর্ব্বতে গিয়া করিবে প্রবেশ।।
চন্দ্রবাণ ছাড়াইয়া পঞ্চাশ যোজন।
বরাহ পর্ব্বতে যাইও নির্ম্মল কাঞ্চন।।
বিশ্বকর্ম্মা সৃজিলেন বরুণের ঘর।
হীরক মাণিক্যময় তথা মনোহর।।
পুরী আলো করে জ্যোতি, অন্ধকার দূর।
অসুর নরক নামে বিক্রমে প্রচুর।।
বরুণের সহিত সে বৈসে সেই দেশে।
তেকারণে বরুণ তাহারে নাহি নাশে।।
সেখানে হইও সবে অতি সাবধান।
তার হাতে পড়িলে নাহিক পরিত্রাণ।।
অপ্রমত্ত রূপ তনু করিবে তথায়।
আমারে করহ মুক্ত এই প্রতিজ্ঞায়।।
তথা যদি জানকীর না পাও উদ্দেশ।
সমেরু-পর্ব্বতে গিয়া করিহ প্রবেশ।।
দেখিবে পর্ব্বত সেই সোণার রচিত।
সদা ষাটি সহস্র পর্ব্বতে সে বেষ্টিত।।
তথা ষাটি সহস্র পর্ব্বতের উদয়।
সেই ষাটি সহস্র পর্ব্বত স্বর্ণময়।।
সোণার খর্জ্জুর বৃক্ষ সুমেরু উপরে।
দশদিক আলো করে দশমাথা ধরে।।
তথা আসি করে কেলি শঙ্কর শঙ্করী।
দিবা অস্ত যায় তথা আইসে শর্ব্বরী।।
এমন উত্তম স্থান নাহি পৃথিবীতে।
নানামত ফল ফুল আছে যূথে যূথে।।
গীত বাদ্য নৃত্য করে পরম কৌতুকে।
নর্ত্তকী করয়ে নৃত্য, দেখে দেবলোকে।।
পরিসর তিন লক্ষ দুশত যোজন।
চক্ষুর নিমিষে সূর্য্য করয়ে গমন।।
অপূর্ব্ব পর্ব্বত সেই দেব-অধিষ্ঠান।
সুমেরুর উপর সকল রম্যস্থান।।
নিমিষেতে সূর্য্যদেব করেন গমন।
সুমেরু বেড়িয়া সূর্য্য করয়ে ভ্রমণ।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতল সুমেরু গোচর।
দেবগণ কেলি তথা করে নিরন্তর।।
সুমেরু ঘিরিয়া সূর্য্য নিত্য করে গতি।
এক দিক্ দিন হয়, আর দিক্ রাতি।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল ব্যতীত নাহি স্থান।
সুমেরুর উপরে সকল অধিষ্ঠান।।
সুমেরুর পশ্চিমে সূর্য্যের নাহি গতি।
অন্ধকারময় তথা, নাহিক বসতি।।
তাহার পশ্চিমে নহে গমন আমার।
সুমেরু পর্ব্বত দেখি আসিবে হে ঘর।।
সুমেরুতে যাইতে আসিতে এক মাস।
মাসের হইলে বাড়া সবার বিনাশ।।
যেই বীর মাসেকের মধ্যে না আইসে।
সবংশে মরিবে সেই আপনার দোষে।।
চলিল সকল ঠাট সুগ্রীব-আদেশে।
পশ্চিম দিকের যাত্রা রচে কৃত্তিবাসে।।