২১৯. পাঞ্চজন্যাদি পাবক-পরিচয়

২১৯তম অধ্যায়

পাঞ্চজন্যাদি পাবক-পরিচয়

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “মহারাজ! বশিষ্ঠতনয় কাশ্যপ, প্রাণপুত্ৰ প্ৰাণ, অঙ্গিরসাত্মজ চ্যবন ও ত্রিসুবর্চা, ইঁহারা প্ৰজাপতিসম যশঃসম্পন্ন ধর্ম্মপরায়ণ এক পুত্র লাভ করিবার নিমিত্ত অতি কঠোর তপানুষ্ঠান করিলেন। পরে তাহাঁরা মহাব্যাহতিমন্ত্র ধ্যান করিলে পঞ্চবর্ণ মহাপ্রভাবসম্পন্ন এক তেজ প্রাদুর্ভূত হইল। তাঁহার মস্তক প্রজ্বলিত হুতাশনের ন্যায়, ভূজদণ্ড প্রচণ্ড দিবাকরের ন্যায়, ত্বক ও নেত্ৰ সুবৰ্ণাভ এবং জঙ্ঘাযুগল কৃষ্ণবর্ণ। মহাতপঃ পঞ্চমহর্ষি তাঁহাকে তপোবলে পঞ্চবর্ণসম্পন্ন করিলেন। সেই পঞ্চবংশকর দেব পাঞ্চজন্য বলিয়া বিখ্যাত হইলেন।

“কিয়ৎকাল অতীত হইলে পাঞ্চজন্য পিতৃগণের প্রজা সৃষ্টি করিবার নিমিত্ত দশসহস্ৰ বৎসর তপঃসাধন করিয়া ঘোরতর অগ্নি উৎপাদন করিলেন। পরে মস্তক হইতে বৃহৎ রথন্তর, আস্যদেশ হইতে হরিহর, নাভি হইতে শিব, শোণিত হইতে ইন্দ্ৰ, প্ৰাণ হইতে বায়ু, অগ্নি এবং বাহুদ্বয় হইতে উদাত্ত, অনুদাত্ত, বিশ্বসংসার ও ভূত-সমুদয় সৃষ্টি করিলেন।

“অনন্তর তাঁহা হইতে বৃহদ্রথের প্রণিধি, কাশ্যপের মহত্তর, অঙ্গিরার ভানু, বর্চের সৌরভ ও প্রাণের অনুদাত্ত-নামক পাঁচ পাঁচটি পুত্র উৎপন্ন হইয়া পঞ্চবিংশতিসংখ্যক পুত্ৰ হইল। তিনি যজ্ঞবিঘ্নকারী অন্যান্য পঞ্চদশ দেবতাকেও সৃষ্টি করিলেন। সুভীম, অতিভীম, অবল, ভীমবল, ভীম, সুমিত্র, মিত্রবান, মিত্রজ্ঞ, মিত্ৰবৰ্দ্ধন, মিত্রধর্ম্ম, সুরপ্রবীর, বীর, সুবেশ, সুরবর্চা ও দেবহন্তা এই পঞ্চদশ দেবতারা পাঁচটি পাঁচটি করিয়া তিন তিন দল হইল, উহারা স্বৰ্গ হইতে যজ্ঞ অপহরণ করিতে আরম্ভ করিল এবং বলপ্রয়োগপূর্ব্বক হবনীয় দ্রব্যজাত হরণ ও বিনষ্ট করিতে লাগিল। এই হেতু বিচক্ষণ পুরুষেরা বহির্ব্বেদিতে তাহাদিগের প্রাপ্য ভাগ প্রদান করিতেন। পরে উহারাও তখন যজ্ঞভূমির অন্তর্ব্বেদিতে গমন করিত না। অগ্নিচয়নকর্ত্তা যজমান, আসনপ্রদানপূর্ব্বক মন্ত্রবলে উহাদিগকে সন্তুষ্ট করিলে উহারা কখনও যজ্ঞয় হবিঃ অপহরণ করে না।

“অগ্নির বৃহদুক্‌থ নামে আর একটি পুত্ৰ পৃথিবী-অমানী দেবতা বলিয়া অভিহিত হয়েন। পৃথিবীতে অগ্নিহোত্ৰ যজ্ঞ করিবার সময় সাধুলোকেরা তাঁহাকে অৰ্চনা করিয়া থাকেন; রথন্তরনামে অনলও অগ্নির পুত্ৰ বলিয়া বিখ্যাত। হোতা বৃহস্পতি অপেক্ষা সেই রথীন্তরকে উদ্দেশ করিয়া হবিঃ প্ৰদান করিয়া থাকেন। মহাযশাঃ পাঞ্চজন্য অনল-পুত্ৰগণের সহিত পরামপ্রীত-মনে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন।”