২১১তম অধ্যায়
দেহে সত্ত্বাদিগুণত্রয়ের বিস্তার
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, ‘ধর্ম্মব্যাধ এইরূপে নিগুঢ় তত্ত্বসমুদয় বর্ণন করিলে পর ব্রাহ্মণ সমাহিত হইয়া পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে সত্তম! তুমি সত্ত্ব, রজ ও তমোগুণের বিষয় বিশেষরূপে কীর্ত্তন কর।” ব্যাধ কহিল, “হে ব্ৰহ্মন! এই গুণত্ৰিতয়ের মধ্যে তমোগুণ মোহাত্মক, রজোগুণ সকলের প্রবর্ত্তক এবং সত্ত্বগুণ সাতিশয় প্রতিভাত হয় বলিয়া সর্ব্বশ্রেষ্ঠ।
‘অবিদ্যাবহুল, প্রবলেন্দ্ৰিয়, স্বপ্নশীল, বিবেকবিধুর, মোহাভিভুত রোষপরবশ ও অলস ব্যক্তিরাই তমোগুণান্বিত। যাঁহার বাসনা অত্যন্ত বলবতী, যাঁহার অভিমানের পরিসীমা নাই, যিনি অসূয়াশূন্য উত্তম মন্ত্রী এবং আপনাকে মহৎ বলিয়া বোধ করেন, তিনি রজোগুণবিশিষ্ট। যে ব্যক্তি ধীর, সর্ব্বত্র সুপরিচিত, বিষয়-বাসনা-বিরহিত, ক্রোধবিবর্জ্জিত, দান্ত, ধীশক্তিসম্পন্ন ও অসূয়াশূন্য, তিনি সত্ত্বগুণাস্পদ। সাত্ত্বিক ব্যক্তি লোকব্যবহার সন্দর্শনে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েন, তিনি জ্ঞাতব্য বিষয় বুঝিতে পারিয়া রজোগুণ ও তমোগুণের কার্য্যকে নিন্দা করেন।
‘বিরাগের লক্ষণ পূর্ব্বেই প্রকাশ পায়, দেখুন, অন্তঃকরণে বৈরাগ্যের সঞ্চার হইলে অহঙ্কার মৃদুভাব অবলম্বন করে, অন্তঃকরণ সরল ও প্রসন্ন হইয়া উঠে, তখন আর মানাপমানজ্ঞান এবং কোন বিষয়ে কোনপ্রকার সংশয় থাকে না। হে ব্ৰহ্মন! অধিক কি বলিব, যদি শূদ্ৰযোনিসম্ভূত ব্যক্তিও সদগুণসম্পন্ন হয়, তাহা হইলে সে বৈশ্যত্ব ও ক্ষত্ৰিয়ত্বলাভ করিতে পারে এবং সেই আজবসম্পন্ন ব্যক্তির ব্ৰহ্মজ্ঞান জন্মে। আপনার নিকট সমুদয় গুণ কীর্ত্তন করিলাম, এক্ষণে আর কি শুনিতে অভিলাষ করেন, বলুন।’ ”