২০৯তম অধ্যায়
পাঞ্চভৌতিক দেহ-জীবব্রহ্মের অনুভূতি
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে ভারত! ব্রাহ্মণ ধর্ম্মব্যাধিকর্ত্তৃক এইরূপ উক্ত হইয়া প্রীতিকর বাক্যে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘হে ধর্ম্মব্যাধ! তুমি যে পঞ্চমহাভূতের উল্লেখ করিলে, তাহাদিগের প্রত্যেকের গুণ বিশেষরূপে কীর্ত্তন কর।”
“ব্যাধ কহিল, “হে ব্ৰাহ্মণ! ভূমি, জল, তেজ, বায়ু এবং আকাশ এই পঞ্চ মহাভূত; ইহাদিগের গুণ বলিতেছি, শ্রবণ করুন। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ এই পাঁচটি পৃথিবীর গুণ; শব্দ, স্পর্শ, রূপ এবং রস এই চারিটি জলের গুণ; শব্দ, স্পর্শ এবং রূপ এই তিনটি তেজের গুণ; শব্দ এবং স্পর্শ এই দুইটি বায়ুর গুণ আর একমাত্র শব্দ আকাশের গুণ। এই পঞ্চগুণ এইরূপে পঞ্চভূতে সন্নিহিত হইয়া পঞ্চদশ সংখ্যা হয়।
‘জরায়ুজাদি জীবসমূহে যে পঞ্চভূত অধিষ্ঠিত আছে, তাহারা পরস্পর পৃথক হইয়া থাকে না, সর্ব্বদা একত্র অবস্থিতি করে। যখন জীবাত্মা মরণশীল শরীর ত্যাগের উপক্রম করে, পরে দেহান্তর প্রাপ্ত হয়, তখনও পঞ্চভূতের পরস্পর বিযোগ হয় না। সমুদয় ভূতই আনুপূর্ব্বিক তিরোহিত হয় এবং আনুপূর্ব্বিক আবির্ভূত হইয়া থাকে। যদ্বারা স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎ পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, সেই পাঞ্চভৌতিক ধাতুসকল সর্ব্বত্র দৃষ্ট হইয়া থাকে। যে যে বস্তু ইন্দ্ৰিয়গ্রাহ্য, তাহাই ব্যক্ত আর যাহা অনুমেয় অতীন্দ্ৰিয়, সেই বস্তু অব্যক্ত, দেহী শব্দাদির-গ্রাহক এই সমস্ত ইন্দ্ৰিয় ধারণ করিয়া পরিতৃপ্ত হয়েন, তিনি সমুদয় লোকে ব্যাপ্ত সোপাধিক আত্মা এবং আত্মাতে বিলীন লোকক-সকল সন্দর্শন করেন। সেই সোপাধিজ্ঞানসম্পন্ন জীব প্রারব্ধ কর্ম্মে আবদ্ধ হইয়া দেবপাত পৰ্যন্ত ভূত-সকলকে প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। তিনি নিরুপাধিহেতু ব্ৰহ্মস্বরূপ হইয়া সকল অবস্থায় সর্ব্বভূতকে অবলোকন করেন; কিন্তু কদাচ কর্ম্মে লিপ্ত হয়েন না। যিনি মায়াত্মক ক্লেশ অতিক্রম করিয়াছেন, তিনি লোকের জীবনাত্মিকা-বৃত্তি-প্রকাশ জ্ঞানদ্বারা পরমপুরুষাৰ্থ মোক্ষপদ প্রাপ্ত হয়েন। যিনি অনাদিনিধন স্বয়ম্ভূ, অব্যয়, অনুপম এবং অমূর্ত্ত, তাঁহাকেই বেদে ভগবান ও বুদ্ধিমান বলিয়া থাকে।’ ”