ইদানীং দিনান্তে স্বপ্নের সঙ্গে নিরিবিলি বহু
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাই বিশ নম্বর ওয়ার্ডে
আমার গোপন ক্ষতে ড্রেসিৎ করাতে। মাঝে-মাঝে
দৈবাৎ কুড়িয়ে নিই কিছু চন্দ্রমল্লিকা এবং
জুঁই করিডোরে, অভ্রে-গড়া ঘোড়ার নিশ্বাস
লাগে গায়ে, আলোর কলপ-লাগা মেঘ ক্রমাগত
মাথার ভেতর জমে, কেমন একটা গন্ধ এসে
আমাকে দখল করে; যেন আমি নিশি-পাওয়া কেউ।
ভিজিটিং আওয়ারের ভিড় নেই। কতিপয় রোগী
ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। কালো চিতাবাঘের মতন
মৃত্যু ক্ষিপ্র করে পায়চারি। কেউ কেউ চোখ বুজে
আকাশ পাতাল কি যে ভাবে। কারো হাতে
স্যালাইন নল, কারো নাকে আর কেউবা গোঙায়
যন্ত্রণায়। একজন রোদপোড়া পৌঢ়, গ্রাম্যজন,
উদরে ব্যাণ্ডেজ নিয়ে টিকে আছে কোমোমতে, কানে
তার খুব আস্তে সুস্থে তরুণী সিস্টার কিছু বলে।
ফুলের স্তবক নেই তার শিয়রে, আসেনি কোনো
আত্মীয় দর্শনপ্রার্থী, আসবে না বুঝি কোনোদিন।
নাম জানা নেই, পাকা বাঁশে তৈরি তার শরীরের
খাঁচায় প্রবেশ করি, দুঃসহ যন্ত্রণা পাই, শ্বাস
টানি অতিশয় ক্লেশে বাঁচার আশায়। লোকটার
মুখে দেখি আমার নিজেরই মুখ, ঈষৎ বিকৃত।
দিনান্তে স্বপ্নের সঙ্গে এসে বিশ নম্বর ওয়ার্ডে
দেখি বেডে সে লোকটা নেই, লাল কম্বলের নিচে
অন্য একজন শুয়ে আছে, অস্ত্রোপচারের পালা
তার কাল। তুলো, গজ, হিবিটেন নিয়ে স্বপ্ন তার
ফোটায় সহজ শিল্প আমার জখমে। সে লোকটা
তেইশ নম্বর বেডে ছিলো, সে কি বাড়ি গেলো তবে?
মারা গেছে। শব্দহীন প্রতিধ্বনি পাখির ধরনে
বলে যায়, মারা গেছে। আজরাইলের ডানা তাকে
নিয়ে গেছে দূরতম তারার ওপারে। টলটলে
দিঘি, ভাঙা বাবুই পাখির বাসা, স্বপ্নের মতন
পথরেখা, ফসলসজ্জিত মাঠ, যৌবনখচিত
কোনো ঢেউখেলানো শরীর বহু আগেকার চোখে
ডেকেছিলো অম্ভিম মুহূর্তে? স্বপ্ন হেসে ইশারায়
আমাকে নিকটে ডাকে, তেইশ নম্বর বেডটির
দিকে চোখ রেখে ভাবি-প্রকৃতই বাড়ি যাচ্ছি আমি?
নাকি যন্ত্রচালিতের মতো চলেছি মৃত্যুরই দিকে?