১৯তম অধ্যায়
বিকর্ণাদি তনয়গণের নামোল্লেখে গান্ধারীবিলাপ
“হে বাসুদেব! ঐ দেখ, বিজ্ঞজনসম্মত প্রিয় পুত্র বিকর্ণ ভীমসেনকর্ত্তৃক নিহত হইয়া নীলনীরদসমাচ্ছন্ন [কৃষ্ণমেঘে আবৃত] শরৎকালীন নিশাকরের ন্যায় গজযূথমধ্যে শয়ান রহিয়াছে। মাংসলোলুপ গৃধ্রগণ বহুকষ্টে উহার চাপগ্রহণকর্কশ তলত্রযুক্ত[ধনুকঘর্ষণে কঠিন করতলযুক্ত] পাণিতল ছেদন করিতেছে। ঐ দেখ, উহার অল্পবয়স্কা ভাৰ্য্যা নিতান্ত দুঃখিত হইয়া পরমযত্নসহকারে ঐ সমস্ত আমিষগৃধু গৃধ্রগণকে নিরাকৃত করিবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য্য হইতে পারিতেছে না। হায়! যে তরুণবয়স্ক মহাবীর বিকর্ণ চিরকাল পরমসুখে কালহরণ করিয়াছে, আজি তাহাকে ধূলিশয্যায় শয়ন করিতে হইল! এক্ষণে কর্ণি, নালীক ও নারাচদ্বারা উহার মর্ম্মভেদ হইয়াছে, তথাপি শ্রী উহাকে পরিত্যাগ করে নাই। ঐ দেখ, অরাতিহা দুর্মুখ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভীমকর্ত্তৃক নিহত হইয়া ভূমিতলে নিপতিত রহিয়াছে। শ্বাপদগণ উহার বদনমণ্ডলের অর্দ্ধভাগ ভক্ষণ করাতে উহা সপ্তমীর চন্দ্রের ন্যায় শোভা পাইতেছে। হায়! যে বীরের মুখশ্রী অদ্যাপি দেদীপ্যমান রহিয়াছে, তাহাকে রজোরাশি গ্রাস করিতে দেখিয়া আমি কিরূপে জীবন ধারণ করিব? পূর্বে সংগ্রামসময়ে যাহার সম্মুখে কেহই অবস্থান করিতে পারে নাই, যে বীর অমরগণকেও জয় করিতে সমর্থ ছিল, সেই বীর কিরূপে শত্রুহস্তে প্রাণত্যাগ করিল? ঐ দেখ, মহাধনুর্দ্ধর বিচিত্রমাল্যধারী চিত্রসেন নিহত হইয়া ভূতলে শয়ান রহিয়াছে। শোকাকুলা যুবতীগণ ক্ৰব্যাদগণের সহিত মিলিত হইয়া উহার সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক রোদন করিতেছে; আমি কামিনীগণের ক্রন্দনকোলাহল ও শ্বাপদদিগের গর্জনশ্রবণে বিস্ময়াপন্ন হইয়াছি। ঐ দেখ, তরুণবয়স্ক বিবিংশতি ধূল্যবলুণ্ঠিতকলেবরে [ধূলিপতিত দেহে] বীর জনোচিত ভূমিশয্যায় শয়ান রহিয়াছে। গৃধ্রগণ উহাকে পরিবেষ্টন করিয়া আছে। উহার মধুরহাস্যসমন্বিত সুন্দর বদন সুধাকরের ন্যায় শোভা পাইতেছে। অপ্সরারা যেমন গন্ধর্বের সহিত বিহার করে, তদ্রূপ সহস্র সহস্র সুন্দরী ঐ বীরের সহিত ক্রীড়া করিত। বীরসেনানিপাতন, মহাবীর দুঃসহকে পূর্বে কেহই পরাজিত করিতে পারে নাই; এক্ষণে তাহার শরীর অরাতিগণের শরনিকরে সমাচিত হইয়া প্রফুল্ল কর্ণিকারাবৃত পর্ব্বতের ন্যায় শোভা পাইতেছে। ঐ মহাবীর জীবিতবিহীন হইয়াও সমুজ্জ্বল কবচ ও স্বর্ণময় হারদ্বারা অগ্নিময় ধবলগিরির ন্যায় দীপ্যমান হইতেছে।”