১৯৮. দ্রৌপদীর বিবাহ
অষ্টনবত্যধিকশততম অধ্যায়।
দ্রুপদ কহিলেন, মহর্ষে! পূর্বে সবিশেষ শ্রবণ না করিয়া অন্যথা করিবার যত্ন পাইয়াছিলাম; এক্ষণে আপনার নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইলাম। দৈবের প্রতিকূলাচরণ করা নরলোকের অসাধ্য, অতএব দেতার যাহা বিধান করিয়াছেন, তাহাই বিধেয় ও শ্রেয়স্কর, সন্দেহ নাই। অদৃষ্টের ফল অখণ্ডনীয়, স্বেচ্ছানুসারে কেহ কোন কর্মের অনুষ্ঠান করিতে পারেন না, বরহেতু যে বিধি নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহাই অবশ্য কর্তব্য। ভগবান্ মহাদেব প্রীত হইয়া কৃষ্ণার প্রার্থনানুসারে তাঁহাকে অভিলষিত বর দান করিয়াছেন, এক্ষণে ইহার ভাল মন্দ দেবতাই জানেন। যখন মহাদেব এইরূপ বিধান করিয়াছেন, তখন ইহাতে ধর্মই হউক বা অধর্মই হউক, আমি এ বিষয়ে অপরাধী নহি। পাণ্ডবেরা বিধিপূর্বক ইহার পাণিগ্রহণ করুন, ইহাদিগের নিমিত্তই কৃষ্ণা সৃষ্টা ও সমুদ্ভূতা হইয়াছেন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,–অনন্তর ভগবান্ ব্যাসদেব ধর্মরাজকে কহিলেন, অদ্য শুভদিন, অদ্য চন্দ্ৰমাঃ পুষ্যা নক্ষত্রে গমন করিবেন, অতএব অদ্যই অগ্রে তুমি দ্রৈৗপদীর পাণিপীড়ন কর। রাজা যজ্ঞসেন পুত্র সমভিব্যাহারে বহুসংখ্যক কন্যাত্ৰ নিমন্ত্রণ করিলেন এবং তনয়ার সর্বাঙ্গ রত্নাভরণে বিভূষিত করিয়া অনিয়ন করাইলেন। রাজার মন্ত্রিগণ, সুহৃদ্বর্গ, প্রধান প্রধান পুরবাসী লোক ও ব্রাহ্মণ সকল প্রীতমনে বিবাহ দর্শনে অগিমন করিতে লাগিলেন। রাজভবন জনগণে পরিশোভিত হইল। চত্বরভূমি প্রফুল্ল-পঙ্কজমালা-পরিকীর্ণ এবং সৈন্যসামন্ত ও বিচিত্ররত্নসমুহে খচিত হইয়া পার্বণশৰ্ব্বরীর তারকাব্যাপ্ত নির্মল নভোমণ্ডলের ন্যায় দীপ্তি পাইতে লাগিল।
তদনন্তর কৌরবরাজপুত্রের সুস্নাত হইয়া মাঙ্গল্য ক্রিয়া সকল সমাপনান্তে মহাৰ্হ বেশভূষা সমাধানপূর্বক পুরোহিত ধৌম্যসমভিব্যাহারে সভামধ্যে প্রবেশ করিলেন। বেদবিৎ পুরোহিত বহ্নিস্থাপন ও মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক প্রকৃতি হুতাশনে আহুতি প্রদান করিয় যুধিষ্ঠিরের সহিত কৃষ্ণার পাণিগ্রহণক্রিয়া সম্পাদন করিলেন। পরে উভয়কে অগ্নি প্রদক্ষিণ করাইয়া পরিণয় সমাপন করিলেন। অনন্তর যুধিষ্ঠিরকে অনুমতি করিয়া পুরোহিত রাজগৃহ হইতে বহির্গমন করিলেন। পরিশেষে অপর পাণ্ডবেরা উল্লিখিত প্রণালীক্রমে সেই বরবৰ্ণিনীর পাণিগ্রহণ করিলেন। মহারাজ! এইরূপে মহারথ কৌরবেরা অহরহঃ অধিকতর শোভা ধারণ করিতে লাগিলেন। ব্রুমে যত দিবস অতীত হইতে লাগিল, মহানুভাবা দ্রৌপদীর কন্যাভাবের কিছু মাত্র বৈলক্ষণ্য হইল না।
পরিণয় সম্পন্ন হইলে দ্রুপদরাজ পাণ্ডরদিগকে বহুবিধ ধন, পর্বতের ন্যায় মহোন্নত এক শত হস্তী, মহার্হ বেশভূষাবিভূষিত এক শত দাসী এবং সুবর্ণালঙ্কত ও সুবর্ণগ্রহোপেত অশ্বচতুষ্টয়যোজিত এক শত রথ প্রদান করিলেন। মহানুভাব দ্রুপদরাজ সমাগত দর্শকদিগকে পৃথক পৃথক্ ধন, মহামূল্য পরিচ্ছদ ও প্রভাসুর বিভূষণ প্রদানপূর্বক বিদায় করিলেন। অনন্তর ইন্দ্রপ্রতিম পাণ্ডবগণ সেই অলোকসামান্য স্ত্রীর লাভ করিয়া পাঞ্চালরাজপুরে পরমস্থখে বিহার করিতে লাগিলেন।