১৯৬. ব্যাসের নিকট বিবাহবিষয়ক প্রশ্ন, ব্যাসের বৈবাহিক মীমাংসা
ষণ্ণবত্যধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! মহাত্মা দ্বৈপায়নকে সমাগত দেখিয়া পাণ্ডবগণ ও মহাযশাঃ পাঞ্চাল্য গাত্রোত্থান পূর্বক অভিবাদন করিলেন। মহর্ষি তাহাদিগের প্রদত্ত পূজা প্রতিনন্দনপূর্বক কুশল জিজ্ঞাসা করিয়া পবিত্র কাঞ্চনাসনে সমাসীন হইলেন। তাঁহার আদেশক্রমে সকলেই মহার্হ আসনে উপবেশন করিলেন। অনন্তর মুহূর্তকাল গত হইলে রাজা দ্রৌপদীর নিমিত্ত ঋষিকে মধুরবাক্যে জিজ্ঞাসা করিলেন, ভগবন্! একা দ্রৌপদী কিরূপে অনেকের ধর্মপত্নী হইবেন? কিন্তু সঙ্কর হইবেন না, ইহা কিরূপে ঘটিতে পারে, আপনি এ বিষয়ে যাহা যথার্থ হয়, আজ্ঞা করুন। ব্যাসদেব কহিলেন, লোকাচারগর্হিত ও বেদবিরুদ্ধ এই দুরবগাহ ধর্মবিষয়ে তোমাদের কাহার কি মত, আমি অগ্রে তাহা শুনিতে অভিলাষ করি। দ্রুপদ কহিলেন, যাহা লোকাচার ও বেদবিরুদ্ধ আমার মতে তাহাই অধর্ম; হে দ্বিজোত্তম। এক স্ত্রী বহু পুরুষের পত্নী, ইহা কদাপি দৃষ্ট হয় না। ইহা মহাত্মা প্রাচীন পুরুষদিগেরও আচরিত ধর্ম নহে এবং গুণবান্ ব্যক্তিরাও কখন এরূপ ধর্মের অনুষ্ঠান করিবেন না, অতএব আমি এ বিষয়ে কি কৰ্তব্য কিছুই স্থির করিতে পারিতেছি না। ইহাতে আমার সম্পূর্ণ সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছে।
ধৃষ্টদ্যুম্ন কহিলেন, তপোবন! জ্যেষ্ঠ সুশীল ও সদাচারসম্পন্ন হইয়া কনিষ্ঠ ভ্রাতার ভাৰ্য্যায় কিরূপে গমন করিবেন। ধর্ম অতি সূক্ষ্ম পদার্থ, ধর্মের গতি আমরা কিছুই জানি না, সুতরাং ধর্মাধর্মের নিশ্চয় করা মা দিগের অসাধ্য। অতএব কৃষ্ণা যে পঞ্চ স্বামীর সহিষী হইবে, ইহা আমরা কোনরূপেই ধর্মতঃ অনুমোদন করিতে পারি না। যুধিষ্ঠির কহিলেন, হে ব্ৰহ্মন্! আমার মুখে কচি অনৃত বাক্য নিঃসৃত হয় না এবং আমার মনোমন্দিরে অধর্মের প্রবেশাধিকার নাই। অতএব যখন আমার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ মত হইয়াছে, তখন আমি ইহাকে কোনক্রমে অধর্ম বলিতে পারিব না। পুরাণে শ্রবণ করিয়াছি, ধর্মপরায়ণ। জটিলনাম্নী গৌতমবংশীয়া এক কন্যা সাত জন ঋষিকে বিবাহ করেন এবং বার্ক্ষীনাম্নী মুনিকন্যা প্রচেতাঃ নামক ভ্রাতৃদশের সহধর্মিণী হয়েন। বিশেষতঃ পণ্ডিতেরা কহিয়াছেন, গুরুলোক যাহ। অনুমতি করিবেন, তাহাই ধর্ম ও নিঃসংশয়ে অনুষ্ঠেয়; গুরুলোকের মধ্যে মাতা পরম গুরু, তিনি আজ্ঞা করিয়াছেন, লব্ধদ্রব্য ভিক্ষার্জিত বস্তুর ন্যায় সকলেই ভোগ কর। অতএব হে দ্বিজোত্তম! ইহা পরম ধর্ম বলিয়া আমার বোধ হইতেছে। কুন্তী কহিলেন, ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির যাহা কহিলেন, আমি তাহা কহিয়াছি বটে। আমি অমৃত বাক্যে সাতিশয় ভয় করিয়া থাকি, কিরূপে এই মিথ্যা হইতে পরিত্রাণ পাইব! ব্যাসদেব কহিলেন, হে ভদ্রে! অনৃত হইতে পরিত্রাণ পাইবে। তুমি যাহা কহিয়াছ, তাহাই সনাতন ধর্ম; হে পাঞ্চাল! আমি ইহার নিগূঢ় তত্ত্ব সর্বসমক্ষে ব্যক্ত করিব না। যেরূপে উক্ত ধর্ম বিহিত ও সনাতন বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহা কেবল আপনিই শুনিতে পাইবেন। কৌন্তেয় যাহা কহিয়াছেন, তাহা প্রকৃত ধর্ম বটে, তাহাতে আর কোন সন্দেহ নাই।
তদনন্তর ভগরা দ্বৈপায়ন গাত্রোত্থান করিয়া দ্রুপদের কর গ্রহণপূর্বক রাজভবনে প্রবেশ করিলেন। যে স্থানে তাহার প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, তথায় পাণ্ডবগণ, কুন্তী এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন গমন করিলেন। পরে মহর্ষি ব্যাস বহুব্যক্তির একপত্নীতা যে ধর্মবিরুদ্ধ নহে, এই বিষয় রাজাকে বলিতে আরম্ভ করিলেন।