১৯৫তম অধ্যায়
পিতৃবধে অশ্বখামার কর্ত্তব্য জিজ্ঞাসা
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে সঞ্জয়। যে মহাবীর অশ্বত্থামার নিকট মানব, বারুণ, আগ্নেয়, ঐন্দ্র, নারায়ণ ও ব্রাহ্ম অস্ত্র প্রভৃতি সমুদয় অস্ত্র নিয়ত বিদ্যমান রহিয়াছে, তিনি সেই মহাবীর দুরাত্মা ধৃষ্টদ্যুম্নকে অধর্ম্মযুদ্ধে বৃদ্ধ পিতাকে নিহত করিতে শ্রবণ করিয়া কি করিলেন? মহাত্মা দ্রোণাচার্য্য পরশুরামের নিকট ধনুর্ব্বেদ শিক্ষা করিয়া পুত্রের সগুণাভিলাষে তাঁহাকে দিব্যাসকল প্রদান করিয়াছিলেন। ফলতঃ এই ভূমণ্ডলে মানবগণ পুত্র ভিন্ন আর কাহাকেও আপনার অপেক্ষা গুণসম্পন্ন করিতে কামনা করে না। মনস্বী আচাৰ্য্যগণেরও এইরূপ স্বভাব যে, তাঁহারা পুত্র বা অনুগত শিষ্যকেই আপনাদের রহস্যসকল প্রদান করিয়া থাকেন। হে সঞ্জয়! দ্রোণপুত্র দ্রোণের শিষ্য হইয়া তাঁহার নিকট বিশেষরূপে সমস্ত দিব্যাস্ত্র লাভ করিয়াছেন। ঐ মহাবীর যুদ্ধে দ্রোণের দ্বিতীয় এবং তিনি অস্ত্রে পরশুরাম, যুদ্ধে পুরন্দর, বীর্য্যে কার্ত্তবীর্য্য, বুদ্ধিতে বৃহস্পতি, ধৈর্য্যে ভূধর, তেজে অগ্নি, গাম্ভীর্য্যে সমুদ্র ও ক্রোধে সর্পবিসদৃশ বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকেন। সেই মহাবীর সমরে অপরিশ্রান্ত ধনুর্ব্বেদবিশারদ ও একজন অদ্বিতীয় মহারথ; তিনি ভীষণ সমরাঙ্গনে অব্যথিতচিত্তে বেগগামী অনিল ও ক্রোধাবিষ্ট অন্তকের ন্যায় ভ্রমণ করিয়া থাকেন। সেই ধনুর্দ্ধর শরনিক্ষেপে প্রবৃত্ত হইলে বসুন্ধরা ব্যথিত হইয়া উঠেন। তিনি স্বয়ং বেদস্নাত [*বেদাধ্যয়নসহকৃত ব্ৰহ্মচর্য্যপালনান্তে গুরুগৃহে প্রত্যাগত], ব্রতস্নাত [*], ধনুর্ব্বেদবিশারদ ও দাশরথীর ন্যায় গম্ভীরপ্রকৃতি। এক্ষণে সেই সত্যপরাক্রম মহাবীর অশ্বত্থামা দুরাত্মা ধৃষ্টদ্যুম্ন অধর্ম্মযুদ্ধে পিতাকে বিনাশ করিয়াছে শ্রবণ করিয়া কি কহিলেন? হে সঞ্জয়। ধৃষ্টদ্যুম্ন যেমন দ্রোণের মৃত্যুস্বরূপ, অশ্বত্থামাও সেইরূপ ধৃষ্টদ্যুম্নের অন্তকস্বরূপ সৃষ্ট হইয়াছেন।”