১৯৫তম অধ্যায়
কৌরবগণের অভিযান
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে জনমেজয়! বিমল প্রভাতকাল উপস্থিত হইলে শৌৰ্য্যশালী, সদাচারপরায়ণ, কামচারী [যথেচ্ছ গতিশক্তিশালী], আহবলক্ষণসম্পন্ন [সমরচিহ্নসমন্বিত], কৌরবপক্ষীয় ভূপতিগণ রাজা দুৰ্য্যোধনের নিয়োগানুসারে স্নান, মাল্য ও শুভ্ৰবসন পরিধান, শস্ত্র ও ধ্বজ গ্ৰহণ, স্বস্তিবাচন এবং অগ্নিতে আহুতি প্ৰদান করিয়া পরবলপরাজয় প্রত্যাশায় [শত্রুসৈন্যজয়াশায়] পরস্পর প্রীতিপ্রদর্শনপূর্ব্বক একাগ্রচিত্তে পাণ্ডবগণের প্রতিপক্ষে [প্রতিকূলে— বিরুদ্ধপক্ষে] প্ৰস্থান করিতে লাগিলেন। অবন্তী দেশীয় রাজা বিন্দ ও অনুবিন্দ, কেকয় ও বাহীকগণ দ্রোণাচাৰ্য্যের অনুগমন করিলেন; অশ্বত্থামা, ভীষ্ম, সিন্ধুরাজ জয়দ্ৰথ, গান্ধাররাজ শকুনি এবং দক্ষিণাত্য [দক্ষিণদেশীয়], পাশ্চাত্য [পশ্চিমদেশীয়], প্রাচ্য [পূর্ব্বদেশীয়], উদীচ্য [উত্তরদেশীয়], পার্ব্বতীয় [পার্ব্বত্য] শক, কিরাত, যবন, শিবি ও বসতিগণ স্ব স্ব সৈন্যসমভিব্যাহারে তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া দ্বিতীয় সৈন্যের অন্তর্নিবিষ্ট [দ্রোণাচাৰ্য্যের সৈন্যমধ্যে প্রবিষ্ট] হইলেন। সসৈন্য কৃতবর্ম্মা, ত্রিগর্ত্ত, শল, ভূরিশ্রবা, শল্য ও কৌশলরাজ বৃহদ্ৰথ, ইঁহারা ভ্রাতৃপরিবৃত রাজা দুৰ্য্যোধনের অনুগমন করিলেন। মহাবলপরাক্রান্ত ধার্ত্তরাষ্ট্রগণ এইরূপে সমাগত হইয়া ন্যায়ানুসারে কুরুক্ষেত্রের পশ্চিমাৰ্দ্ধে অবস্থান করিতে লাগিলেন। রাজা দুৰ্য্যোধন দ্বিতীয় হস্তিনানগরের ন্যায় যে অলঙ্কৃত শিবির নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন, নিপুণতম নাগরিকেরাও তাহার ও নগরের বৈলক্ষণ্য হৃদয়ঙ্গম করিতে সমর্থ হয়েন নাই। ভূপতিগণের বাসোপযোগিতা-সম্পাদনার্থ [বাসযোগ্য করিবার জন্য] যে সমস্ত দুর্গ প্রস্তুত হইয়াছিল, তাহাও অবিকল নগরস্থিত দুর্গের ন্যায় প্রতীয়মান হইতে লাগিল। পঞ্চযোজনবিস্তৃত মণ্ডলাকার রণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া নানা দ্রব্যসম্পন্ন শিশির সকল সন্নিবেশিত হইল; ভূপালগণ উৎসাহসহকারে নিজ নিজ সৈন্যগণসমভিব্যাহারে তাহার মধ্যে প্রবেশ করিলেন; রাজা দুৰ্য্যোধন সেইসকল মহাত্মা, তাহাদিগের সৈন্যগণ এবং বহিঃপ্রদেশবর্ত্তী [বাহিরের দিকে অবস্থিত] হস্তী, অশ্ব ও মনুষ্যগণকে ভক্ষ্য-ভোজ্যপ্রদানের আদেশ করিয়া শিল্পী, অনুচর, সূত, মাগধ, বন্দী, বণিক, বেশ্যা ও দর্শকগণের যথাবিধি পৰ্য্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন।