১৯৪. ক্ষত্ৰিয়মাহাত্ম্য-সুহোত্ৰ-শিবি-বৃত্তান্ত

১৯৪তম অধ্যায়

ক্ষত্ৰিয়মাহাত্ম্য-সুহোত্ৰ-শিবি-বৃত্তান্ত

মার্কণ্ডেয়কে কহিলেন, “ভগবন! আপনি ব্রাহ্মণ্যমাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিলেন, এক্ষণে রাজন্যমাহাত্ম্য শ্রবণ করিতে আমাদিগের অভিলাষ জন্মিয়াছে।” মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “মহারাজ! শ্রবণ করুন।

“সুহোত্ৰনামে একজন কুরুবংশীয় রাজা একদা মহর্ষিগণের নিকট গমন করিয়াছিলেন। প্রত্যাগমনসময়ে পথিমধ্যে সম্মুখীন রথস্থ ঔশীনর শিবিরাজের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইলে উভয়ে স্ব স্ব বয়ঃক্রমানুরূপ পরস্পরের সম্মানরক্ষা করিলেন, কিন্তু গুণবিষয়ে দুইজনই তুল্য বলিয়া কেহ কাহাকে পথ প্রদান করিতে সম্মত হইতেছেন না, ইত্যবসরে দেবর্ষি নারদ তথায় উপনীত হইলেন। তিনি তাহাদের বিতণ্ডা দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনারা কি নিমিত্ত পরস্পরের পথরোধ করিয়া রহিয়াছেন?”

“তাঁহারা কহিলেন, ‘হে মুণিবর! আমরা বাস্তবিক বিবাদ করিতেছি না, কিন্তু কোন ব্যক্তি কাহাকে পথ পরিত্যাগ করিবে, এই বিষয়ের মীমাংসা হওয়া অতি দুরূহ। পূর্ব্বতন পণ্ডিতেরা কহিয়াছেন যে, বিশিষ্ট বা সমর্থ ব্যক্তিকে পথ প্রদান করিবে, কিন্তু আমাদিগের মধ্যে উৎকৰ্ষাপকর্ষের নির্ণয় করা অসাধ্য, আমাদিগের রূপ, গুণ ও বয়ঃক্রম সমান, অতএব আপনি এ বিষয়ের মীমাংসা করুন।”

“নারদ কহিলেন, “কি ক্রূর, কি মৃদু, কি সাধু, অসাধু পরস্পর সকলেরই সৌহার্দ্য হইতে পারে; অতএব সৌহার্দ্য তুল্যতার কারণ নহে। যিনি দেবগণের অনির্ণীত সৎকাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করেন,

সত্যদ্বারা অসত্যবাদীকে পরাভব ও সাধুব্যবহারদ্বারা অসাধু ব্যক্তিকে তিরস্কার করেন, তিনিই সাধুশীল। আমার মতে তোমরা উভয়েই উদারস্বভাব, কিন্তু ঔশনির শিবি তোমার অপেক্ষা সচ্চরিত্র ও উৎকৃষ্ট; অতএব তুমি শিবিকে পথ প্রদান কর।”

“দেবর্ষি নারদ এই কথা বলিয়া মৌনাবলম্বন করিলে কৌরব্য শিবিরাজকে প্ৰদক্ষিণপূর্ব্বক বহুবিধ প্রশংসা ও পথ প্রদান করিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। হে রাজন! দেবর্ষি নারদ এইরূপে রাজমাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিয়াছেন।”